হাঁদা, ভোঁদা, বাঁটুল, নন্টে, ফন্টে, কেল্টুদের রেখে চলে গেলেন স্রষ্টা নারায়ণ। তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ও সমীর আইচের।
প্রয়াত বাংলা চিত্রকাহিনি বা কমিকসের প্রাণপুরুষ নারায়ণ দেবনাথ (Narayan Debnath)। বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। কয়েক প্রজন্মের বাঙালি (Bengali) কিশোরবেলার সঙ্গী হয়ে রয়েছে তাঁর সৃষ্টি করা সব চরিত্রগুলি। আজও জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে তাঁর সেই সব কমিকস (Comics) গুলি। আর সেই হাঁদা, ভোঁদা, বাঁটুল, নন্টে, ফন্টে, কেল্টুদের রেখে চলে গেলেন স্রষ্টা নারায়ণ। তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ও সমীর আইচের।
শিল্পী শুভাপ্রসন্ন বলেন, "অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তাঁর কৃতিত্ব কল্পনা করা যায় না। আমাদের বাংলার এমন কোনও শিশু নেই যারা তাঁর কমিকস বই পড়েনি। সবই কল্পনা করা চরিত্রের সঙ্গে তাঁর গল্প ও তার সঙ্গে ছবি এক কথায় অনবদ্য। এই ধরনের একটা মানুষ চলে যাওয়া বড় শূন্যতার বিষয়। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ভুগছিলেন। কিন্তু, তা সত্ত্বেও তাঁর কলম ধরার ও কল্পনার কোনও খামতি ছিল না। তাঁর মতো একজন শিল্পীর চলে যাওয়ায় একদিকে আমাদের বাংলা সাহিত্য, অন্যদিকে শিশু সাহিত্যে এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আশা করি তাঁর সব কাজ আমরা বজায় রাখব ও সেগুলিকে আরও বেশি করে প্রচার করব।"
আরও পড়ুন- 'তাঁর তৈরি চরিত্র ভোলার নয়', নারায়ণ দেবনাথের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রী মমতার
চিত্র শিল্পী সমীর আইচ বলেন, "আমি খুবই মর্মাহত। প্রথমেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি যেহেতু ছবি আঁকার জগতের মানুষ তাই বলতে পারি তাঁর মৃত্যুতে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আর এই ক্ষতি শুধুমাত্র বাঙালির নয়, গোটা ভারতবাসীর কাছেই একটা বড় ক্ষতি। তাঁর কাজ ছোটবেলা থেকে প্রতিদিন সকালে আমরা দেখতাম। ওঁর কাজগুলি দেখে ছোটবেলায় আমি কপি করতাম। তাঁর কাজ আমাদের অনুপ্রাণিত করত।"
২০১৩ সালে নারায়ণ দেবনাথকে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার এবং বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ২০২১ সালে পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, শেষ বয়সে কেন তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমীর আইচ। তিনি বলেন, "মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁকে পদ্মশ্রী দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশের নিয়ম আমি জানি না। শুধু বলতে পারি তাঁকে কয়েকদিন আগে পদ্মশ্রী দেওয়া হল আগে থেকে কেন দেওয়া হল না? তাঁর মতো মানুষকে আরও বেশি সম্মান দেওয়া প্রয়োজন।"
আরও পড়ুন- টানা ২৫ দিনের লড়াই, শেষ তিন দিনেই নারায়ণ দেবনাথের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি
১৯২৫ সালে হাওড়ার শিবপুরে জন্ম নারায়ণ দেবনাথের। খুব ছোট বয়স থেকে আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। বাড়িতে অলঙ্কার তৈরির চল ছিল। ছোট থেকেই গয়নার নকশা তৈরি করতেন তিনি। এরপর স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আর্ট কলেজে। কিন্তু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আর্ট কলেজে পড়া। তারপর কয়েকটি বিজ্ঞাপন সংস্থার হয়ে কাজ করেন। এরপর তিনি সৃষ্টি করেছিলেন একাধিক কমিকস চরিত্রের। বাঙালির অন্তরে চিরটাকালই স্মরণীয় হয়ে থাকবে সেই চরিত্রগুলি।