ইরফান খানের মৃত্যু সকলকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করেছে। মাস দুয়েক পরও তাঁর ছবি, ভিডিও সামনে এলে বড্ড কঠিন হয়ে ওঠে মেনে নেওয়া যে তিনি আর নেই। জীবনের সবটুকু নিংড়ে দিয়েছিলেন অভিনয় জগতে। বলিউডের জাকজমকে তাঁর মত বিরল মানুষ আর কটা ছিল। খান-বচ্চন-কুমার ভক্তরাও চোখের জলে ভাসিয়েছিলেন সেই দিনটায়। ইরফানের মত মানুষ, না শিল্পী বলব না, তাঁর মত মানুষ বেঁচে থাকে সারাজীবন। আমাদের মধ্যে দিয়েই। কখনও রানার মত বেনারসের ঘাটে বসে থাকা, বা কখনও সাজন ফারন্যানডিসের মত লাঞ্চবক্সে লুকিয়ে থাকা প্রেমকে খুঁজে বের করা, আবার কখনও সাধা-সিধে নির্মলের মত হঠাৎ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে ফেলা। এভাবেই ইরফান বাঁচবেন আমাদের মধ্যে।
আরও পড়ুনঃসমস্ত সতর্কতা মেনেই শুরু হল শ্যুটিং, নতুন ছন্দে ফিরল বাংলা
আরও পড়ুনঃসম্পর্ক টেকাতেই কি নিজের বয়স গোপন রেখেছিলেন রহমান, ফাঁস করলেন সুস্মিতা
ইরফানের স্ত্রী সুতাপা সিকদারও আমাদের আরও একটু সাহায্য করলেন তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরফানের বিভিন্ন ছবির ক্লিপিংসের মাধ্যমে পোস্ট করলেন নানা ভিডিও। ইংরেজি মিডিয়াম, পিকু, নেমসেক। সবই আছে তাতে। ইরফান এভাবেই থাকুক সকলের মধ্যে। এমন মানুষ কখনও আমাদের ছেড়ে যেতে পারে না। বিশ্বাস করেন সুতাপাও। তবে সত্যি তাঁর মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না। বরং মেনে নিতে চাইছে না। কেবল দক্ষ অভিনেতাই নন, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি যেমন মানুষ ছিলেন তাঁকে ভুলে যাওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।
ইরফানের স্ত্রী সুতাপা ইরফানের প্রয়াণের দু'দিন পর ইরফানের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে সকলের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি পোস্ট করেছিলেন। যা দেখে চোখের জল ধরে পারেনি অনেকেই। তিনি সেই দীর্ঘ চিঠিতে লেখেন, "ইরফানের মৃত্যু আমাদের কাছে ক্ষতি নয় বরং এক বড় পাওয়া। ওঁ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে গিয়েছে। সে সমস্ত বিষয়গুলি শিখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ইরফান যেভাবে বলত, সবটাই আসলে ম্যাজিক। ওঁ থাকুক বা না থাকুক, ওঁ কখনও একভাবে জীবন যাপন করতে চায়নি। বরং জীবনের দুটি দিক বেছে নিয়ে, ভিন্ন ধারায় জীবনকে চিনতে শিখেছিল। আমাদের জীবনটাও অভিনয়ের মাস্টারক্লাস ছিল। যখন সেই অপ্রত্যাশিত অথিতির (ক্যান্সার) আগমণ ঘটল, আমি তখনই শিখে নিয়েছিলাম বেসুরো অবস্থাতেও সামঞ্জস্য খুঁজে নিতে হবে।"
সুতাপা সকল ভক্তদের, গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং বিশেষত ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছিলেন, তিনি কখনই একা নন। সকলে ইরফানের প্রয়াণকে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষতি হিসেবে দেখছে, সেখানে তিনি কখনই এই যাত্রাপছে একা নন। সুতাপা আশা করছেন, তাঁর ছেলে বাবিল এবং অয়ন, তাদের বাবার দেখানো পথেই এগিয়ে যাবে। বাবিল যেমন বাবার থেকে শিখেছে, পরিস্থিতির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে বিশ্বের উপর ভরসা রাখা। অন্যদিকে অয়ন শিখেছে, মনকে তোমায় চালনা করতে দিও না, তুমি মনকে চালনা করো।