সাত সকালের এই সংবাদ যেন স্তব্ধ করে দিল গোটা দেশ, চলে গেলেন ভারতের নাইটেঙ্গেল লতা মঙ্গেশকর। শনিবার বেলা থেকেই বাড়তে থাকে উদ্বেগ। আইসিইউ-তে চিকিৎসা চলছিল লতা মঙ্গেশকরের
"না যেও না রজনী এখনও বাকি"- সকলকে চোখের জলে ভাসিয়ে বিদায় নিলেন সুরসম্রাজ্ঞী। ২৭ দিনের টানা লড়াইয়ের অবসান হল আজ। লতা মঙ্গেশকরের প্রথম রেকর্ড করা গান ছিল ১৯৪২ সালে। যখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৩। একটি মারাঠি সিনেমার জন্য তিনি প্লেব্যাক করেন কিন্তু পরে অ্যালবাম থেকে বাদ দেওয়া হয় সেই গান। লতা মঙ্গেশকর-কে দিয়ে একটি প্লেব্যাক করানোর জন্য সঙ্গীত পরিচালকরা বহু প্রচেষ্টা করতেন। কিন্তু শেষের দিকে তিনি বাড়ি থেকেই খুব কম বেড় হতেন। তাঁর শেষ রেকর্ড করা গানটি ছিল ২০১৫ সালে, একটি ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের প্রতি শান্তি ও সৌজন্য বিনিময়ের জন্য গেয়েছিলেন।
১৯৪২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, একের পর এক জনপ্রিয় গান দিয়েছেন তিনি। লতা মঙ্গেশকর, বলিউডের গানের সুর সম্রাজ্ঞী। তাঁর চলে যাওয়া এক স্বর্ণ যুগের অবশান। দেশের এত বড় ক্ষতি পূরণ হয়তো আর কখনো হবে না। ৭৩ বছর ধরে, এবং তাঁরও বেশি সময় ধরে, তিনি তাঁর সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে শ্রোতাদেরকে আনন্দ দিয়েছেন এবং বলিউডের শীর্ষস্থানীয় গায়িকা হিসাবে আধিপত্য বিস্তার করেছেন। তার নামে প্রকাশিত হওয়া একটি অন্যতম ফিল্ম ম্যাগাজিনটির নাম ছিল - "মঙ্গেশকর মনোপলি।" লতা এবং তাঁর ছোট বোন আশা ভোঁসলের মধ্যে, তৃতীয় কোনও মহিলা গায়িকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ খুব কম পেয়েছেন।
লতা মঙ্গেশকর পরিবারের বেশিরভাগই ছিলেন অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর বাবা একটি থিয়েটার কোম্পানি চালাতেন এবং মঙ্গেশকর বোনেরা সঙ্গীতের সঙ্গে বেড়ে ওঠেন। গান গেয়ে বোনেরা তাঁদের বাবার সমৃদ্ধ উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত ছিল। খুব অল্প বয়স থেকেই মঙ্গেশকর রাগ পুরিয়া, ধনশ্রী গাইতে পারতেন। তাঁর বাবাই লতাঁর আসল প্রতিভা আবিষ্কার করেছিলেন। একটি সাক্ষাত্কারে এই কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
বাবার মৃত্যুর কয়েক বছর পর লতা মুম্বাই চলে আসেন। প্রাথমিকভাবে, তিনি ১৯৩০-এর দশকের একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং মঙ্গেশকরদের পারিবারিক বন্ধু গুলাম হায়দারের দ্বারা পৌঁছান মাস্টার বিনায়কের কাছে। পরবর্তী সময়ে মাস্টার বিনায়ক তাঁদের লালনপালন করেছিলেন। যিঁনি লতাকে বলিউডে প্রথম ব্রেক দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ১৯৫০ এবং ৬০ এর দশকে, তিনি আল্লাহ তেরো নাম এর মতো ভজন এবং হোটোঁ পে আইসি বাত-এর জনপ্রিয় গান একে একে গাইতে শুরু করেন। 'লগ জা গেলে'-এর মতো রোমান্টিক সুর এবং আয়ে মেরে ওয়াতান কে লোগোর মতো দেশাত্মবোধক গানগুলি আজও ততটাই জনপ্রিয়।
১৯৫০ থেকে প্লে-ব্যাক শুরু করে পরবর্তীতে সঙ্গীত পরিচালক মদন মোহন সঙ্গে কাজ যা ২০০০ সালের 'মুহব্বতে' ছবিতেও প্লেব্যক করে সুরের জাদুতে মাতিয়ে রেখেছেন তাঁর শ্রোতাদের। শুধু হিন্দিতেই নয় কয়েক হাজার বাংলা গানও গেয়েছেন তিনি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। দেশের এই সুর সম্রাজ্ঞী ২০ টিরও বেশি ভাষায় প্রায় ২৫ হাজারেও বেশি এবং ১১ হাজারেরও বেশি একক গান গেয়েছেন।