৩ বছর বয়সেই কার্ডের ম্যাজিক, শকুন্তলার প্রতিভায় বিস্মিত হয়েছিল সকলে

Published : Aug 03, 2020, 11:30 AM IST
৩ বছর বয়সেই কার্ডের ম্যাজিক, শকুন্তলার প্রতিভায় বিস্মিত হয়েছিল সকলে

সংক্ষিপ্ত

অনু মেনন পরিচালিত  'শকুন্তলা দেবী' সদ্যই অ্যামাজন প্রাইমে  মুক্তি পেয়েছে ছোট বয়সেই কিউব থেকে ক্যালকুলেটর চটজলদি কষে ফেলতেন শকুন্তলা  দেবী লম্বা সংখ্যার গুণও সেকেন্ডের মধ্যে করে ফেলতে পারতেন শকুন্তলা দেবী অসামান্য় প্রতিভার জন্য় গিনেস বুক অব ওয়র্ল্ড রেকর্ডে তিনি নিজের জায়গা করে নিয়েছেন

অনু মেনন পরিচালিত  'শকুন্তলা দেবী' সদ্যই অ্যামাজন প্রাইমে  মুক্তি পেয়েছে। আগামী ৩১ জুলাই ছবিটি অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে।  বিস্ময়প্রতিভা গণিত সম্রাজ্ঞী শকুন্তলা দেবীর  বায়োপিকেই ঝড় তুলেছেন বিদ্যা বালন। বেঙ্গালুরুর কন্নড় পরিবারে জন্ম শকুন্তলা দেবীর। মাত্র ৬ বছর বয়সেই মাইসোর বিশ্ব বিদ্য়ালয়ে নিজের সংখ্য়াগণনার ক্ষমতা প্রদর্শন করেন। খাতায় লেখা হোক বা ক্য়ালকুলেটার কিংবা কম্পিউটার বড় অঙ্কের ক্য়ালকুলেশান তিনি মুহূর্তের মধ্য়ে মুখে মুখেই করে ফেলতেন। আর এই কারণের জন্য়ই তাকে মানব ক্য়ালকুলেটার বা মানব কম্পিউটার বলা হয়। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও তিনি সমান ভাবে খ্য়াতির শীর্ষে ছিলেন। তার এই অসামান্য় প্রতিভার জন্য় গিনেস বুক অব ওয়র্ল্ড রেকর্ডে তিনি নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। সংখ্য়া নিয়ে খেলার পাশাপাশি তিনি জ্য়োতিষচর্চাও করতেন। এর পাশাপাশি বই লিখেছেন জ্য়োতিষ, সমকামিতা নানা বিষয় নিয়ে। তার এই বর্ণময় জীবনকেই সেলুলয়েডের পর্দায় ফুটিয়ে তুলছেন বিদ্য়া বালন।

আরও পড়ুন-ঐশ্বর্য থেকে সলমন, রাখি বন্ধন স্পেশ্যালে দেখে নিন রক্তের বন্ধন ছাড়া বলিউডের ভাই-বোন জুটিকে...

অ্যামাজন প্রাইমে সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবির দৌলতে আজ তিনি চর্চার শিরোনামে। অঙ্ক শব্দটা শুনলেই যাদের ভয়ে হৃদকম্পন শুরু হয়, সেই অঙ্ককেই তিনি মুহূর্তে সমাধান করে দিয়েছেন। প্রথাগত কোনও শিক্ষা ছিল না শকুন্তলা দেবীর। এমনই অঙ্কের সমাধান তিনি মুহূর্তে করে দিতেন, যা অন্য কোনও বিজ্ঞানীও কষে উঠতে পারেননি। আর এই কারণের জন্য়ই তাকে মানব ক্য়ালকুলেটার বা মানব কম্পিউটার বলা হয়। তাহলে তার মাথায় কি বিশেষ কোনও যন্ত্র ছিল। সালটা ১৯২৯। শকুন্তলা দেবীর জন্ম দরিদ্র পরিবারে। তারা বাবা-মা দুজনেই  সাকার্সের দলে কাজ করতেন। তিনিও মাত্র ৩ বছর বয়স থেকেই সেই দলে ভিড়েছিলেন। আর সেখানেই প্রথম আবিস্কার হয়েছিল তার বিস্ময়কর ম্যাজিক। কার্ডের ম্যাজিক দেখাতে গিয়েই আবিস্কার হয়েছিল তার প্রতিভা। ওই ছোট বয়সেই কিউব থেকে ক্যালকুলেটর চটজলদি কষে ফেলতেন শকুন্তলা  দেবী।

আরও পড়ুন-কোয়ারেন্টাইনের দিন শেষ, 'দাদাগিরি'র সেটে ফিরলেন সৌরভ...


(কিউব রুট) ঘনমূলঃ  

ছোটবেলায় এই অঙ্ক কমবেশি সকলেই করেছি। ১৯৩০ সালে তিনি যখন ছোট ছিলেন তখনই মুহূর্তের মধ্যে  এই হিসেব বার করে নিতেন। যেমন ,৯৫,৪৪৩,৯৯৩ এই সংখ্যার ঘনমূল কী হবে? এর উত্তর ৪৫৭, শকুন্তলা দেবী মাত্র ২ সেকেন্ডে বলে দিয়েছিলেন এই উত্তর। ১৯৮৮ সালে তাঁর মস্তিষ্কের এই ক্ষমতার পরীক্ষা নিতে গিয়ে তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া-বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ববিদ আর্থার জেনসন।  আবার ২০৪,৩৩৬,৪৬৯ সংখ্যার ঘন কিউব ৫৮৯ যা ৫ সেকেন্ডে শকুন্তলা দেবী বলে দিয়েছিলেন এবং ২,৩৭৩,৯২৭,৭০৪-এর ঘনমূল (কিউব রুট) হবে ১৩৩৪ যা ১০ সেকেন্ড বলে দিয়েছিলেন এই মানব কম্পিউটার।

 হাইয়ার রুটসঃ

১৯৩৩ সাল থেকে একইভাবে অঙ্কের জটিল হিসেব সামলেছেন শকুন্তলা দেবী। কেবল কিউব রুট নয় 'হাইয়ার রুটস' অর্থাৎ কোনও সংখ্যার সেভেনথ রুট কী হতে পারে তাও অসীম দক্ষতায় বলে দিয়েছেন তিনি। ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর দিয়েছেন ৪৫৫,৭৬২,৫৩১,৮৩৬,৫৬২,৬৯৫,৯৩০,৬৬৬,০৩২,৭৩৪,৩৭৫ এই সংখ্যার সেভেনথ রুট ৪৬,২৯৫। 


বড় সংখ্যার গুণঃ

এত গেল অঙ্কের কথা। লম্বা সংখ্যার গুণও সেকেন্ডের মধ্যে করে ফেলতে পারতেন শকুন্তলা দেবী। ১৯৮২ সালে এই ক্ষমতার জোরে গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ নিজের নাম তুলেছিলেন শকুন্তলা দেবী। ১৯৮০ সালের ১৮ জুন, লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজে চলছিল তাঁর গাণিতিক দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা। তখনও যুক্তিবাদীদের তাজ্জব বানিয়ে দিয়ে দুটি ১৩ সংখ্যাকে গুণ করে সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন শকুন্তলা দেবী। সংখ্যা দুটি ছিল- ৭,৬৮৬,৩৬৯,৭৭৪,৮৭০ x ২,৪৬৫,০০৯,৭৪৫,৭৭৯। মাত্র  ২৮ সেকেন্ডের মধ্যে  শকুন্তলা উত্তর দিলেন ১৮,৯৪৭,৬৬৮,১৭৭,৯৯৫,৪২৬,৭৭৩,৭৩০। তার উত্তরে সকলেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।


ক্যালেন্ডার ক্যালকুলেশনঃ

যোগ, গুণ, ভাগ শুধু নয়, শকুন্তলা দেবী সমানভাবে সাবলীল ছিলেন ক্যালেন্ডার ক্যালকুলেশনেও। সেটিরও পরীক্ষা দিতে হয়েছিল মানব কম্পিউটারেক। গত শতকের যে কোনও একটি তারিখ তাঁকে বলা হলেই তিনি বলে দিতেন সেই তারিখে কী বার ছিল। যেমন , যদি তাঁকে বলা হত ১৯২০ সালের ৩১ জুলাই কোন বার ছিল?তিনি উত্তর দিতেন শনিবার। তার উত্তর শুনে গবেষকরা মিলিয়েও দেখেছেন একদম ঠিক। আর মাত্র এক সেকেন্ড এই উত্তর দিতেন তিনি। মাত্র এক সেকেন্ড। বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেছিলেন,শকুন্তলার উত্তর স্টপওয়াচ চালুর আগেই এসে যেত।

কীভাবে শিখেছিলেন এই অঙ্কঃ

অঙ্ক নামটা শুনলেই যাদের ভয়ে এখনও জ্বর আসে। সেই  অঙ্কের জটিল হিসেব-নিকেশ, পাজলস তার কাছে জলভাত ছিল। এই নিয়ে প্রায় কয়েক ডজন বইও লিখেছিলেন শকুন্তলা দেবী। কিন্তু বিস্ময় জাগে সেখানেই, কারণ কোনও প্রথাগত শিক্ষাই ছিল না শকুন্তলা দেবীর। ছোটবেলা থেকেই  দারিদ্রতার মধ্যে দিন কেটেছে তার । সম্পূর্ণটাই তিনি আয়ত্ত করেছিলেন নিজে থেকেই। শারীরবিদ্যা বলে, আমাদের মস্তিষ্কের প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্সে অঙ্কের বিশ্লেষণ চলে। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শকুন্তলা দেবীর ক্ষেত্রে সেই প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই। মনস্তাত্বিক জেনসনের মত, প্রথাগত শিক্ষার বেড়া ভেঙে সম্পূর্ণ নিজের নিয়মেই অঙ্ক সমাধান করতেন শকুন্তলা। আর সেই ব্যতিক্রমী গাণিতিক পথের সন্ধান মেলেনি আজও।
 

PREV
click me!

Recommended Stories

Year ending 2025: চলতি বছরে দর্শকদের নজর কেড়েছেন এই ১০ তারকা, রইল তালিকা
ডিপফেক কনটেন্ট বানালে অনুমতি নিতে হবে, নয়া বিল পেশ হল লোকসভায়, রইল বিস্তারিত