অসামান্য এক খেয়ালি কণ্ঠ, যেখানে কাওয়ালি স্টাইলের কণ্ঠে সুরের ওঠানামা কিন্তু তাতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পুরো ছন্দের মসৃণ আনাগোনা। ভূপিন্দর সিং তাঁর এই অনন্য বৈশিষ্ঠ্যের জন্য গজল গায়িকী নিজেকে এক অন্য মর্যাদায় তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন।
মন ছুঁয়ে যায় তাঁর মিষ্টতায় ভরা গানের বোল, আবার কখনও সেই কণ্ঠে গেয় ওঠে শহরের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া এক মনের কথা। যেমন দেবেন তেমন পাবেন-- এমনই যেন ছিল ভূপিন্দরের গায়িকি। অসামান্য এক প্রতিভায় ভরা দীপ্ত কণ্ঠ। নিজস্ব এক খেয়ালি ঢঙে সুরের বোলকে নিয়ে তিনি যেন পাড়ি জমাতেন এক অজানার দেশে। আর তাঁর গায়িকিকে অনুসরণ করতে করতে সঙ্গীতপ্রেমীরা হারিয়ে যেত আরও গভীরে- সুরের এক সাগরে। মন যে কখন গেয়ে উঠল দিল ঢুনতা হে ফির ওহি..., আবার কখনও হুজুর ইস কদর ভি না ইকরাকে চলিয়ে.... তার হুঁশ আর কারও থাকত না।
ভূপিন্দরের জন্ম অমৃতসরে হলেও তাঁর বেড়ে ওঠা এবং কর্মজীবন-এর শুরুটা দিল্লিতেই। বাবা ছিলেন অধ্যাপক। বেজায় রাশভারি লোক এবং প্রচণ্ড শৃঙ্খলাপরায়ণ। সংস্কৃতি ও সঙ্গীত চর্চায় ছিল প্রবল আগ্রহ। ফলে ছেলে ভূপিন্দরকেও সেই একই পথের পথিক করতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন তিনি। কিন্তু, ছোট থেকেই ভূপিন্দর খানিকটা বেয়ারা গোছরের। গণ্ডিতে আবদ্ধ করে রাখে এমন কিছু তাঁর ভালো লাগতো না। স্বভাবতই অনিচ্ছুক বিদ্রোহী ঘোড়াকে বাগে আনতে পিতৃদেবকে বেশ কিছু সময় কয়েক ঘা দিতেও হত। ভূপিন্দর ছোটবেলায় সঙ্গীত থেকে এতটাই দূরে থাকতে চাইতেন যে তিনি মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্টগুলো পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখতেন না।
যাইহোক পিতৃদেবের অসামান্য চাপে শেষমেশ ভূপিন্দর সঙ্গীতে নাড়া বাধেন। আস্তে আস্তে সঙ্গীতে আগ্রহ জন্মায় তাঁর। শিখতে শুরু করেন গিটার। এই গিটারের হাত ধরেই দিল্লির অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে কাজ পেয়ে যান ভূপিন্দর। সেখানেই একদিন বসের কেবিনে পরিচয় হয় বলিউডের মদন মোহন-এর সঙ্গে। মদন মোহনকে সুরের মূর্চ্ছনায় বুদ করে দেন ভূপিন্দর।
মদন মোহনের হাত ধরেই মুম্বইতে ডাক আসে। সেখানে গিয়ে একের পর এক প্লেব্যাক সিগিং করতে থাকেন এবং অবসরে গিটারিস্ট হিসাবে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। মদন মোহনের হাত ধরেই ১৯৬৪ সালে বলিউডে প্রথম প্লে-ব্যাক সিঙ্গিং করেন। ছবির নাম ছিল হকিকত, মুক্তির সাল ছিল ১৯৬৪। আর গানের মুখড়া ছিল 'হোকে মজবুর মুঝে হুসনে ভুলয়া হোগা'।