রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন 'ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এটা ভালো কথা, কিন্তু এর বাইরেও আমাদের ভাবতে হবে এবং বুঝতে হবে। ঋষি ভারতীয় বংশোদ্ভূত হতে পারে, কিন্তু এখন তিনি ব্রিটেনের নাগরিক এবং নিজেই ব্রিটেনের নেতা।
সোমবার বরিস জনসন, প্রধানমন্ত্রী পদের লড়াই থেকে তার নাম প্রত্যাহার করেন। পেনি মর্ডান্টও পর্যাপ্ত এমপি-সমর্থন পেতে ব্যর্থ হলে, কোথাও সকলেই মনে করেছিলেন যে ঋষি সুনকই হচ্ছেন পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সোমবার সেটি অফিসিয়ালি ঘোষিত হওয়ায় বেশ খুশির রেশ আন্তর্জাতিক মহলে। ঋষির ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে ভারতে উৎসব চলছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীরা নানাভাবে ঋষিকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, ঋষি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হলে ভারত অনেকভাবে উপকৃত হবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? ঋষি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ভারতের কী লাভ হবে? এটা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে? জেনে নিন এই প্রতিবেদনে।
ঋষি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ফলে ভারতের কতটা লাভ?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন 'ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এটা ভালো কথা, কিন্তু এর বাইরেও আমাদের ভাবতে হবে এবং বুঝতে হবে। ঋষি ভারতীয় বংশোদ্ভূত হতে পারে, কিন্তু এখন তিনি ব্রিটেনের নাগরিক এবং নিজেই ব্রিটেনের নেতা। এমতাবস্থায় মনে রাখতে হবে যে, আগামী সময়ে ঋষি যে সিদ্ধান্তই নেবেন না কেন, তিনি তার দেশের অর্থাৎ ব্রিটেন এবং ব্রিটেনের নাগরিকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই নেবেন। যদিও সেই ইস্যুটি খোদ ভারতের সাথে সম্পর্কিত নয়।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, 'আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও নিজেকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত না বলে নিজেকে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত বলে দাবি করেন। নির্বাচনে নিজেকে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত বলেও বর্ণনা করেছেন তিনি। উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ভারতের প্রতি তার মনোভাবও খুব একটা ভালো হয়নি। এটাও কারণ কমলা ভারতের প্রতি নরম অবস্থান নিলে মানুষ তাকে প্রশ্ন করতে শুরু করবে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা দুই পয়েন্টে ব্যাখ্যা করেছেন যে কীভাবে সুনকের প্রধানমন্ত্রী হওয়া ভারতকে প্রভাবিত করতে পারে।
১. ভিসার নিয়ম সহজ হতে পারে: ঋষি সুনক ভারতীয়দের সরাসরি উপকার নাও করতে পারেন, কিন্তু তিনি পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারেন। বিপুল সংখ্যক ভারতীয় এখন পড়াশোনা ও কাজ করতে যুক্তরাজ্যে যায়। তারা কঠোর ভিসা নিয়মের সম্মুখীন হয়। যদিও ঋষির প্রধানমন্ত্রী ভিসার নিয়মে পরিবর্তন আনতে পারেন। এটা সরলীকরণ করতে পারেন।
২. অনেক চুক্তি বন্ধ হতে পারে: ঋষি ব্রিটেনের কৃষ্ণাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী এবং তাকে প্রথমে তার দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে চুক্তিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, শ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে সহজে মোকাবিলা করতেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকবে না, যেখানে ঋষির ক্ষেত্রে তা হবে ঠিক উল্টো। ঋষি শুধু ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন, হিন্দুও। এমতাবস্থায় তিনি ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি করলে সবার চোখ থাকবে তার দিকে। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও। নাজিব আবদুল রাজাকের মতো একজন স্থানীয় মালয় ব্যক্তি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল ছিল তখন সেখানে ভারতের ভালো সম্পর্ক ছিল। এই কারণেই ভারতের পক্ষে সাদা প্রধানমন্ত্রীকে মোকাবেলা করা সহজ হতে পারে।
জেনে নিন ঋষির গল্প
ঋষি সুনক ১৯৮০ সালের ১২ মে যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম ঊষা সুনক এবং পিতার নাম যশবীর সুনক। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার দাদু-দিদা ছিলেন পাঞ্জাব থেকে। ১৯৬০ সালে, তিনি তার সন্তানদের সাথে পূর্ব আফ্রিকায় চলে যান। পরে তার পরিবার এখান থেকে ইংল্যান্ডে চলে যায়। তারপর থেকে সুনকের পুরো পরিবার ইংল্যান্ডে থাকে। ঋষি ভারতের অন্যতম বড় শিল্পপতি ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির কন্যা অক্ষতা মূর্তিকে বিয়ে করেছেন। সুনক ও অক্ষতার দুই মেয়ে। তার কন্যাদের নাম অনুষ্কা সুনক এবং কৃষ্ণা সুনক।
আরও পড়ুন--
প্রতিবাদ করলেই শাস্তি, তালিবান-শাসনের বিরুদ্ধে এবার গর্জে উঠল আফগান মহিলারা
অ্যাপেলের সিইওর টুইটারে দীপাবলির শুভেচ্ছা বার্তা , প্রশংসায় পঞ্চমুখ মুম্বইয়ের ফোটোগ্রাফার