Mukesh Ambani-ইনফিনিটির মঞ্চে মোদীর প্রশংসায় আম্বানি,GIFT তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানান জিও মালিক

আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এবং ব্লুমবার্গ এশিয়াস ইনফিনিটি ফোরামের আলোচনায় অংশ নেন মুকেশ আম্বানি। ভারতকে ডিজিটালি আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন রিল্যায়েন্স মালিক। 

Kasturi Kundu | Published : Dec 4, 2021 5:18 AM IST / Updated: Dec 04 2021, 12:21 PM IST

শুক্রবার আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এবং ব্লুমবার্গ এশিয়াস ইনফিনিটি ফোরামের আলোচনায় এই বক্তব্য রাখেন মুকেশ আম্বানি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ইনফিনিটি ফোরামে সবাইকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ভারত সরকার, আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ, GIFT সিটি এবং ব্লুমবার্গকে ইনফিনিটি ফোরাম আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি। তারপর ইনফিনিটি ফোরামের মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, এই শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে কানেক্টিভিটি প্রযুক্তি, কম্পিউটার প্রযুক্তি, পরবর্তী প্রজন্মের সিলিকন চিপস এবং অনেক প্রযুক্তির অভিসারে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। আভানা ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা ও দেনা ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অঞ্জলি বানসালের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনাতেও অংশ নেন রিল্যায়েন্স মালিক।  অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুপ্রেরণাদায়ক নেতৃত্বের প্রশংসা করেন তিনি বলেন শুধুমাত্র GIFT সিটিই নয়, ইনফিনিটি ফোরামকে সম্ভব করেছে।

এই ফোরামটি কার্যত GIFT সিটি থেকে সংঘটিত হচ্ছে এবং GIFT সিটি একটি দুর্দান্ত জায়গা হবে যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি, অর্থায়ন এবং সক্ষম নীতি কাঠামো একত্রিত হয়ে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং নতুন যুগের স্টার্ট-আপগুলির জন্য অনন্য সুযোগ তৈরি করতে একত্রিত হবে। এগুলি কেবল ভারতের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যই যুগান্তকারী সুযোগ হবে মনে করছেন তিনি। মোদী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গুজরাত ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স টেক-সিটি, বা GIFT সিটির ধারণাটিই শুধু তৈরি করেননি, এর বাস্তবায়নের কাজও শুরু করেছিলেন। এটা এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তাই GIFT City সংস্থার সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নিজের জীবদ্দশায় ৬৩ বছরের জীবনে চারটি প্রযুক্তির রূপান্তর দেখেছেন, যা অত্যন্ত উন্নতমানের। প্রথমটি ছিল মেইনফ্রেম কম্পিউটার থেকে রূপান্তর, কেবলমাত্র কয়েক জন লোকের দ্বারা সেটি পরিচালিত হত। সেখান থেকে হাজার হাজার লোকের দ্বারা ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার, আর সেটি যখন ঘটেছিল, আমি তিনি ছিলেন সত্তরের দশকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন ছাত্র। দ্বিতীয়টি ছিল এই মৌলিক কম্পিউটার বিপ্লব থেকে ICT বিপ্লবে রূপান্তর, যখন মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট দুটি পৃথক বিকাশ হিসাবে উদ্ভূত হয়েছিল। তৃতীয়টি ছিল এই মোবাইল এবং কম্পিউটার থেকে রূপান্তর। উভয়ই একটি ডিজিটাল বিপ্লবে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলস্বরূপ, ব্যবহারকারীর সংখ্যা যা হাজার হাজার থেকে আক্ষরিক অর্থে বিলিয়নে গিয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এখন  তিনি বিশ্বাস করেন সেটি হল চতুর্থ রূপান্তর। ডিজিটাল বিপ্লব থেকে যেখানে কোটি কোটি মানুষ বিশ্ব ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকেই প্রথম ডিজিটাল বিপ্লব বলতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন বিলিনিয়ার মুকেশ আম্বানি। 

আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় মানব জগতের প্রায় প্রতিটি ক্রিয়াকলাপই এখন ডিজিটালাইজড। ১০ বছর পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, মিটিং করা বা কেনাকাটা করা বা সিনেমা দেখা বা বিক্রেতাকে অর্থ প্রদান করা এই সমস্ত কাজগুলো শারীরিক ভাবেই সম্পন্ন হত। কিন্তু আজ বাড়ি বসেই ডিজিটাল মিডিয়ার সহায়তায় সেগুলো করা সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য, স্মার্টফোনের একটি বোতামে ক্লিক করলেই হয়ে যায় আর্থিক লেনদেনও। কেয়ার ফর দ্য প্ল্যানেট এবং কেয়ার ফর দ্য পিপল এই দুটি মন্ত্র একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকে নির্দেশ করবে বলে মত প্রকাশ করেন মুকেশ আম্বানি। অনুষ্ঠানের মঞ্চে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে, তিনি প্রায়ই বলেন,ডেটা হল নতুন তেল। ডেটা যদি নতুন তেল হয়, তাহলে ডিজিটাল পরিকাঠামো হল নতুন পাইপলাইন। ভারত এই পথের নেতৃত্ব দিয়েছে, তাই তিনি মনে করেন ভারত পাবলিক ডিজিটাল পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে একটি বিশাল উদ্ভাবকের ভূমিকায়। সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডেটা প্রকৃতপক্ষেই নতুন তেল, কিন্তু এই নতুন তেলটি ঐতিহ্যগত তেল থেকে মৌলিকভাবে আলাদা। ঐতিহ্যবাহী তেল শুধুমাত্র নির্বাচিত স্থানেই উত্তোলন করা হয় । এইভাবে, এটি শুধুমাত্র কয়েকটি দেশের জন্য সম্পদ তৈরি করেছিল। বিপরীতে, নতুন তেল অর্থাৎ ডেটা তৈরি এবং প্রত্যেকে তা ব্যবহার করতে পারে।  প্রত্যেক ব্যক্তি এই ডেটার মালিক হতে পারে। অতএব, নতুন তেলের সম্পূর্ণরূপে গণতান্ত্রিক এবং বিকেন্দ্রীকৃত হয়েছে। এবং এখানে, ভারতের যে অনন্য সুবিধা রয়েছে  সেটি হল জনসংখ্যা। ১.৩৫ বিলিয়ন মানুষের একটি দেশ এই ভারতবর্ষ এবং শীঘ্রই চিনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হব এবং বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ বয়সের দেশে। দ্বিতীয় প্রধান শক্তি হল ভারত ডিজিটাল পাইপলাইন তৈরি করেছে। একটি বিশ্বমানের ডিজিটাল পরিকাঠামো যা সমস্ত শহর ও শহরগুলিতে এবং প্রায় সমস্ত ৬00,000 গ্রামে পৌঁছেছে৷ এই কারণে আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছ প্রধানমন্ত্রী মোদির ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ভিশনকে। 

আরও পড়ুন-Ambani-সম্পত্তির ভবিষ্যৎ মালাকানা নিয়ে পরিকল্পনা মুকেশ আম্বানির,ওয়ালটন পরিবারকে অনুসরণ রিল্যায়েন্স কর্তার

জিও-র মালিক হিসাবে তিনি গর্ববোধ করেন। অনুষ্ঠানের মঞ্চে জিও প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনটাই বলেন রিল্যায়েন্স কতৃপক্ষ। অপটিক ফাইবার, ক্লাউড, এবং ডেটা সেন্টার পরিকাঠামোর দ্রুত রোলআউট করে বৃহত্তর গ্রহণযোগ্য করার জন্য ডিভাইসগুলির সাশ্রয়ী মূল্যের ইকোসিস্টেম তৈরি করার প্রক্রিয়ার কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। পরবর্তী পদক্ষেপটি হবে মেশিন, ডিভাইস এবং যানবাহনের সংযোগ, যা ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)। ভারত পরের বছর ৫জি রোলআউটের সঙ্গে বিশ্বের যে কোনও অর্থনীতিতে সবচেয়ে উন্নত ডিজিটাল পরিকাঠামোগুলির মধ্যে একটি হওয়ার পথে রয়েছে জিও। ডেটা এবং ডিজিটাল পরিকাঠামো উভয়ই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও।  গত দুই বছরে কোভিড পরিস্থিতির প্রতিটি স্তরের কঠিন অবস্থা দেখার পর তিনি মনে করেন, প্রতিটি দেশের নিজস্ব কৌশলগত ডিজিটাল পরিকাঠামো নির্মাণ ও সুরক্ষা করা অত্যাবশ্যক। তাঁর মতে, এই দেশের নাগরিকদের অভিন্ন বৈশ্বিক মান প্রয়োজন, যাতে আন্তঃসীমান্ত লেনদেন, সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব কোনওভাবেই বাঁধাপ্রাপ্ত না হয়।

আরও পড়ুন-Olive Trees -একটি গাছের কাহিনি,আম্বানি পরিবারে ঠাঁই পেল ২০০ বছরের পুরনো ২ টি অলিভ গাছ

মুকেশ আম্বানির মতে, অর্থ হল সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু এবং সেই জন্যই ফিনান্সকে পূর্ণ সম্ভাবনার জন্য ডিজিটালাইজ করেননি। তিনি বিশ্বাস করেন ভারত বিক্ষিপ্ত ডিজিটাইজেশনের খুব প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। গত একুশ বছরে সংগঠিত অর্থায়নে একটি খুব কেন্দ্রীভূত মডেলে বিকশিত হয়েছেন, এবং তিনি এখনও বিশ্বাস করেন যে সেখানে কেন্দ্রীভূত সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নীতি থাকবে। তবেই একটি  বিকেন্দ্রীকৃত প্রযুক্তিগত সমাধানের পথ থাকবে যেখানে অর্থ সক্ষম হবে এবং উপলব্ধ হবে। মুকেশ আম্বানি রিয়েল টাইমে বিশ্বাসী। তাই সবকিছু রিয়েল টাইমে স্থির হবে। স্মার্ট চুক্তি বাস্তব হয়ে উঠবে। তিনি মনে করেন, এখন সময় এসেছে GIFT সিটির। যে পরিকাঠামো এবং যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে GIFT সিটি তৈরি করা হয়েছিল, তা শুধু ভারতে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনকে সক্ষম করার জন্যই নয়, বাকি বিশ্বেরও প্রবেশদ্বার হতে পারে। রিলায়েন্সে  ৩০ বছর বয়সীদের সাথে যোগাযোগ করার সময় তিনি যা শিখেছেন, সেটি দ্বারা তিনি সর্বদাই অনুপ্রাণিত হন। রিয়্যালেন্স মালিক মুকেশ আম্বানি বলেন, সত্যিই সামনে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন। তাই ব্লুমবার্গ এবং ইনফিনিটি ফোরামের মাধ্যমে, প্রত্যেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণ ভারতীয় উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক এবং ডিজিটাল পরিবর্তন-এজেন্টকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ছেন।

Read more Articles on
Share this article
click me!