বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী সিপিএমের প্রাক্তনী, যাদবপুরের দিকে তাকিয়ে সারা রাজ্য

  • নজরে যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র 
  • দীর্ধ দিনের ধরেই এই কেন্দ্রে জয়ী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য 
  • এবার লড়াই গুরু ও শিষ্যার 
  • সুজনের সঙ্গে লড়াই হবে বিজেপির রিঙ্কু নস্করের 
     

Asianet News Bangla | Published : Apr 6, 2021 9:14 AM IST

তাপস দাস, প্রতিনিধি, ১৫০ নং যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ৯৬, ৯৯, ১০১, ১০২, ১০৩, ১০৪, ১০৫, ১০৬, ১০৯ ও ১১০ নং ওয়ার্ড। 

যাদবপুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কেন্দ্রও বটে। তিনি ১৯৮৭ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছিলেন। সিপিএম দুর্গ বলে একটা কথা প্রায়শই ব্যবহৃত হয়। যাদবপুর আক্ষরিক অর্থেই সিপিএমের দুর্গ ছিল। ১৯৬৭ সালের ভোট থেকে ২০০৬ সালের সালের ভোট পর্যন্ত একবারও সিপিএম এখানে হারেনি। ১৯৭১-৭২ সালের ইন্দিরা কংগ্রেসের রিগিং খ্যাত ভোটেও নয়। শুধু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নয়, প্রবাদপ্রতিম সিপিএম নেতা দীনেশ মজুমদার, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অশোক মিত্রও এই কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন সময়ে জয়লাভ করেন। ইন্দ্রপতন এই বিধানসভায় ঘটেছে একবারই, ২০১১ সালে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পরাজিত হন, একদা তাঁরই সরকারের আধিকারিক মণীশ গুপ্তের কাছে। কিন্তু ফের, তার পরের ভোটে ওই কেন্দ্র থেকে জিতে আসেন সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী।

২০১১ সালের ভোটে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পেয়েছিলেন ৮৭ হাজারের কিছু বেশি ভোট, আর মণীশ গুপ্ত পেয়েছিলেন প্রায় ১ লক্ষ চার হাজার ভোট। সিপিএমের সেবার ভোট কমেছিল ১৬.৪৯ শতাংশ, তৃণমূলের ভোট বেড়েছিল প্রায় সমপরিমাণে, ১৬.০৮ শতাংশ। 

২০১৬ সালের ভোটে সুজন চক্রবর্তী পেয়েছিলেন প্রায় ৯৯ হাজার ভোট, পরাজিত মণীশ গুপ্ত পেয়েছিলেন ৮৪ হাজারের সামান্য বেশি ভোট। তৃণমূলের ভোট শেয়ার কমেছিল ১২.১৬ শতাংশ, সিপিএমের ভোট শেয়ার বেড়েছিল ১.২৪ শতাংশের মত। 

২০১১ সালের ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ২৭৪৯টি ভোট। ২০১৬ সালে বিজেপি এখান থেকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করায় পরিবেশবিদ তথা বঙ্গবিজেপির অন্যতম তাত্ত্বিক নেতা মোহিত রায়কে। তিনি ১৩, ৯২২ টি ভোট পান। অর্থাৎ ৫ বছরে বিজেপির ভোটবৃদ্ধির পরিমাণ ৫ গুণেরও বেশি। 

যাদবপুর যে বাম দুর্গ হয়ে উঠেছিল, তার অন্যতম কারণ এখানকার ডেমোগ্রাফি। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার অনেকাংশ জুড়েই বসবাস পূর্ববঙ্গ থেকে আগত শরণার্থীদের। শরণার্থীদের মধ্যে বামেদের সংগঠন ছিল প্রশ্নাতীত। সেই সুবাদেই বাম দুর্গ হয়ে উঠেছিল যাদবপুর। সেই উদ্বাস্তু মানুষদের মধ্যে একট বড় অংশের মধ্যে হিন্দুত্বের রাজনীতি চাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে গেরুয়া শিবির, যার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে ভোট বাক্সে। 

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কিন্তু যাদবপুর কেন্দ্রে তেমন আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি। এই বিধানসভা কেন্দ্রে ৮০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন ফিল্ম তারকা মিমি চক্রবর্তী, প্রাক্তন সিপিএম মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পেয়েছিলেন ৬৮ হাজারের বেশি ভোট, বিজেপির অনুপম হাজরা পেয়েছিলেন ৪৮ হাজার ৬৯৬ ভোট। 

শোভন সোনালি ফ্যাক্টর ডায়মন্ড হারবারে, লড়াইয়ে না থেকেও 'অগ্নি' পরীক্ষায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় .

ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অপব্যবহার করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনকে টুইট মমতার ...

এবারের ভোটে যাদবপুরে সিপিএমের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়েছেন মলয় মজুমদার। কিন্তু এবারের যাদবপুর মানুষের নজর কাড়ছে বিজেপি প্রার্থীর কারণে। বিজেপি এবার সেখানে দাঁড় করিয়েছে ১০২ নং ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর রিঙ্কু নস্করকে। তিনি নভেম্বর মাসে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। দিলীপ ঘোষের পাশে দাঁড়িয়ে রিঙ্কু বলেছিলেন, “এখন আবার নীতি-আদর্শ কেউ মানে নাকি!”

প্রকাশ্যে নীতি-আদর্শহীনতার কথা স্বীকার করে নেওয়া সদ্য দলে আসা একজনকে যাদবপুরের মত কেন্দ্রে দাঁড় করিয়ে বিজেপি নিজেদের আদর্শ সম্পর্কে অবস্থান কিঞ্চিৎ ঘোরালো করে তুলেছে সন্দেহ নেই। ফলে এ আসনের দিকে চোখ থাকবে সকলেরই। 

যাদবপুরে ভোট হবে চতুর্থ দফায়, ১০ এপ্রিল। 

Share this article
click me!