এতদিন ধারণা ছিল, করোনা জলবাহিত ভাবে ছড়ায় না
সাম্প্রতিক গবেষণা সেই ধারণা ভেঙে দিল
প্রাকৃতিক জলে দীর্ঘদিন সজীব থাকে সার্স-কোভ-২, বলছেন গবেষকরা
বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা আইআইটির অধ্যাপকের
এতদিন গবেষকরা বলতেন জলের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হওয়া সম্ভব নয়। উত্তরপ্রদেশ-বিহার বা ঝাড়খণ্ডে গঙ্গায় করোনা রোগী হিসাবে সন্দেহভাজনদের মৃতদেহ ভাসার দৃশ্য সামনে আসার পরও, সেই কারণেই বিষয়টি অস্বাস্থ্যকর হলেও এভাবে করোনাভাইরাস ছড়াবে না - এমনটাই বলেছিলেন মহামারি বিশেষজ্ঞরা। কারণ, জীবিত দেহ ছাড়া অন্য কোনও তলে , ঠিক কতদিন বা কতক্ষণ পর্যন্ত করোনাভাইরাস সজীব থাকতে পারে, তা নিয়ে তর্কের বিষয়। কিন্তু, সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে এই তাত্ত্বিক ধারণা মিলছে না।
গুজরাতের রাজধানী আহমেদাবাদের সবরমতি নদী, এবং কাঁকরিয়া ও চান্দোলা হ্রদ থেকে নেওয়া জলের নমুনায় নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন আইআইটি গান্ধীনগর (IIT, Gandhinagar) এবং জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (JNU) স্কুল অফ এনভায়র্নমেন্ট সায়েন্সেস-এর গবেষকরা। আইআইটি গান্ধিনগরের পৃথ্বি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, মনীশ কুমার জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই জলের নমুনাগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল। সাবরমতি নদী থেকে নেওয়া হয়েছিল ৬৯৪ টি নমুনা, চান্দোলা হ্রদ থেকে ৫৪৯ টি এবং কাঁকরিয়া হ্রদ থেকে ৪০২ টি নমুনা নেওয়া হয়েছিল।
অধ্যাপক মনীশ কুমার আরও বলেছেন, হ্রদ এবং নদীতে সারস-কোভ-২ অর্থাৎ নতুন করোনাভাইরাসের উপস্থিতি একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কারণ এতদিন এই বিষয়টি অজানা থাকায়, জলে করোনাভাইরাস মিশে যাওয়া আটকাতে কোন তিনি বলেছেন, তাঁরা প্রমাণ পেয়েছেন, প্রাকৃতিক উৎসের জলে এই ভাইরাস দীর্ঘদিন পর্যন্ত সজীব থাকতে পারে। এতদিন এই বিষয়টি অজানা থাকায় জলে করোনাভাইরাস মিশে যাওয়া আটকাতে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। আইআইটি এবং জেএনইউ-এর এই গবেষকরা চাইছেন সারা দেশেই এইরকম ভাবে নদ-নদী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক জলের উৎসগুলির নমুনা পরীক্ষা করা হোক।
তবে, কর্ণাটকে ইতিমধ্য়েই এই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গে বেহাল অবস্থায় পৌঁছেছিল দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্য। অনেক জায়গাতেই এখনও কড়া লকডাউন জারি করা রয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই, ভারতের প্রথম রাজ্য হিসাবে, সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ক্লাস্টারগুলি সনাক্ত করতে, বেঙ্গালুরু শহরের নিকাশী ব্যবস্থায় করোনাভাইরাস-এর বিষয়ে নজরদারি ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে।
এর আগে যেভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তিদের মৃতদেহ উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের গঙ্গায় ভাসতে দেখা গিয়েছিল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, অন্তত শতাধিক মৃতদেহ এইভাবে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাই জলপথে এইভাবে ঠিক কতদূর পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তাই নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত এদিনই মুর্শিদাবাদে প্রতিবেশি রাজ্য থেকে কোভিড-মৃতদেহ ভেসে আসার খবর সামনে এসেছে।