একের পর এক রাজ্যে বন্ধ ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকাদান
বেশিরভাগ রাজ্যেই শুধু ৪৫ ঊর্ধ্বরাই করোনা টিকা পাচ্ছেন
কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যগুলি
কারা দায়ী এর জন্য
দেশে কোভিড ভ্যাকসিনের তীব্র ঘাটতির কারণে, একের পর এক রাজ্য ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকাদান আপাতত স্থগিত রেখেছে। বেশিররভগ রাজ্যেই এখন শুধু ৪৫ ঊর্ধ্বদেরই করোনা টিকার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। বুধবার, মহারাষ্ট্র ১৮-৪৪'এর টিকাদান স্থগিত করেছে। একই দিনে বন্ধ করেছে দিল্লিও। তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দরপত্র চেয়েছে। রাজস্থানও একই পথে হাঁটছে। কিন্তু, এই ঘাটতির কারণ কী, কারা দায়ী এর জন্য?
সিরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেক জানিয়েছে আগামী চার মাসে তারা যথাক্রমে ১০ কোটি এবং ৭.৮ কোটি ডোজ টিকার উৎপাদন বাড়াতে পারে। মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে জানিয়েছেন, ২০ মে-র পরে রাজ্যে দেড় কোটি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন আসবে। তাই, আপাতত ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের জন্য কেনা টিকার স্টক আপাতত ৪৪ ঊর্ধ্বদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অতএব, দিল্লিও বুধবার অভিযোগ করেছে ভারত বায়োটেক তাদের জানিয়েছে 'অতিরিক্ত' কোভাক্সিন ডোজ তারা সরবরাহ করতে পারবে না। কেন্দ্রের নির্দেশেই টিকা দেওয়া হচ্ছে না বলে দিল্লির অভিযোগ।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব লব আগরওয়াল অবশ্য রাজ্যগুলির ভ্যাকসিন কেনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কোনও ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। ভারত বায়োটেকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুচিত্রা এলা জানিয়েছেন, তারা ১০ মে তারিখেই ১৮টি রাজ্যে কোভাক্সিন পাঠিয়েছে। বস্তুত, রাজ্যগুলির টিকার চাহিদা, এই দুটি সংস্থার পক্ষে মেটানো এক প্রকার অসম্ভব। তামিলনাড়ু জানিয়েছে তাদের যে ১৩ লক্ষ ভ্যাকসিন ডোজ বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। ওড়িশা বলেছে, তাদের কমপক্ষে ২৫ লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিনের প্রয়োজন। কেরলও কেন্দ্রের কাছে আরও আরও ভ্যাকসিন সরবরাহের আবেদন করেছে।
ভ্যাকসিনের এই ঘাটতির বিষয়ে সরাসরি বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছে কংগ্রেস, শিবসেনা, আপ-এর মতো বেশ কয়েকটি বিরোধী দল। তাদের অভিযোগ এই বছরের গোড়ার দিকে অন্যান্য দেশে ভারত সরকার যে ৬ কোটি ভ্যাকসিন রফতানি করেছে, তার জন্যই বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিজেপিও পাল্টা বিরোধী দলগুলি ভারতের টিকাদান কর্মসূচী নিয়ে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, বিদেশে পাঠানো ভ্যাকসিন ডোজের ৮৪ শতাংশের বেশি ছিল দুই ভারতীয় নির্মাতাদের বাণিজ্যিক এবং লাইসেন্সিং দায়ের অংশ।
এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে একটি চিঠি লিখে, সমাধানের পথ বাতলেছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও জেডিএস নেতা এইচডি দেবগৌড়া, এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তামিলনাড়ুর এমকে স্টালিন, ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন-এর মতো ১২ জন নেতার সাক্ষরিত ওই চিঠিতে, বিনামূল্যে গণ টিকাকরণ অভিযানের দাবি জানানো হয়েছে।
দেশ এবং বিদেশের সমস্ত উপলভ্য উত্স থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে দেশীয় ভ্যাকসিনের উত্পাদন সম্প্রসারণের কথাও বলা হয়েছে।