একালের 'সত্যবান', লকডাউনে ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী নিয়ে ১৩০ কিলোমিটার সাইকেলে অতিক্রম

Published : Apr 12, 2020, 04:02 PM IST
একালের 'সত্যবান', লকডাউনে ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী নিয়ে ১৩০ কিলোমিটার সাইকেলে অতিক্রম

সংক্ষিপ্ত

  স্ত্রীকে নিয়ে ১৩০ কিলোমিটার সাইকেল যাত্রা লকডাউনে ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসা তামিলনাড়ু থেকে পদুচেরি পর্যন্ত যাত্রা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলেন স্ত্রী 

ভালোবাসা চিরন্তন।  তা দিন কাল সময় ক্ষেত্র কিছুই মানে না।  আরও একবার প্রমান করলেন তামিলনাড়ুর দরিদ্র দিনমজুর আরিভাসাগান। না মানলেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়। না তোয়াক্কা করলেন লকডাউনের।  মারণ কর্কট রোগে আক্রান্ত তাঁর স্ত্রী। আর কিছুতেই স্ত্রীর কেমোথেরাপির দিন পার হতে দেবেন না তিনি। তাই লকডাউনের গাড়িঘোড়া না পেয়ে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ১৩০ কিলোমিটার পথ নিজের পুরনো ঝরঝরে সাইকেলেই অতিক্রম করলেন ৬৫ বছরের দিনমজুর। 

তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা এই দিনমজুর। লকডাউনে কোনও যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। কিন্তু সময় নষ্ট করতে নারাজ তিনি। কারণ স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর লড়াই যে সরাসরি যমের সঙ্গে। দীর্ঘ দিন ধরেই ক্যান্সারে আক্রান্ত তাঁর ৬০ বছরের স্ত্রী মঞ্জুলা। কেমোথেরাপির জন্য নিজের সাইকেলকে সম্বল করেই এগিয়ে গেলেন। অসুস্থ স্ত্রীকে সাইকেলের পিছনের সিটে বসিয়ে একটি তোয়ালে দিয়ে শক্ত করে নিজের সঙ্গে তাঁকেও বেঁধে নিলেন। তারপরই পাড়ী দিলের দীর্ঘ পথ। দিনের আলো ফোটার আগেই গ্রামের বাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন এই দম্পতি। ভোর ৪.৪৫টা রওনা দেন পদুচেরির জওহরলাল নেহেরু পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে সেখানে পৌঁছে যান। রাস্তায় মাত্র দুঘণ্টা চা খাওয়া আর বিশ্রামের জন্য তাঁরা থেমেছিলেন। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বন্ধ ছিল হাসপাতালের আউটডোর। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চরম এই সংকটের মধ্যেই দীন দরিদ্র দম্পতিকে ফিরিয়ে দিতে রাজি ছিল না। তাঁর সম্পূর্ণ রূপে সহযোগিতা করেন অসহায় দম্পতির।  প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করেন স্ত্রীর। রাতে হাসপাতালেই দম্পতির থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

আরও পড়ুনঃ ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৪ মৃত্যু ভারতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্যে নতুন করে আক্রান্ত আরো ৯০৯
আরও পড়ুনঃ করোনা-সৈনিকদের সঙ্গে চরম বর্বরতা পঞ্জাবে, লকডাউনে হাত কাটা হল পুলিশের.
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানে কোয়ারেন্টাইনে 'বন্দি' আইনজীবী, করোনাভাইরাসে সংক্রিমত না হওয়া সত্ত্বেও ছাড় নেই
তবে গল্পটা এখানেই শেষ নয়। দম্পত্য প্রেমে কিছুটা হলেও গা ভাসিয়েছেন হাসপাতাল কর্তপক্ষ। তামিলনাড়ুর দিনমজুর স্বামীর স্ত্রীর চিকিৎসা করেই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলেনি হাসপতাল কর্তৃপক্ষ। মানবিকতারও পরিচয় দিয়েছে তাঁরা। কারণ মঞ্জুলাকে এক মাসের ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি একটি অ্যাম্বুলেন্সেরও ব্যবস্থা করা হয়। আর সেই অ্যাম্বুলেন্সের যাতাযাতের খরচ বাবদ ৬৩০০ টাকাও দিয়ে দেওয়া হয় হাসপাতালের তরফ থেকে। 

তামিলনাড়ু সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্পে নাম ওঠেনি আরিভাসাগানের। তাই স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত এই দম্পতি। তা নিয়ে অবশ্য তেমন ক্ষোভ নেই তাঁদের। দিনমজুর স্বামী জানিয়েছেন দৈনিক যা রোজগার হয় তা থেকে কিছুটা সঞ্চয় করে রাখেন স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য। আর সেই টাকাই নিয়ে আসে পদুচেরির হাসপাতালের বিল মেটান তিনি। তবে তিনি জানিয়েছেন কী করে তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে এতটা রাস্তা সাইকেল চালিয়েছেন তা এখনও ভাবতেই পারছেন না। পুরো বিষয়টা এখনও তাঁর কাছে আবিশ্বাস্যকর ঘটনা। 
 
 



 

PREV
click me!

Recommended Stories

জনগণনা ২০২৭: ৩০ লক্ষ কর্মী, ১১,৭১৮ কোটি টাকা বাজেট, বিশ্বের বৃহত্তম সমীক্ষা
আর্টিলারি বৈঠকে সেনাপ্রধান, প্রযুক্তি-চালিত যুদ্ধের প্রশিক্ষণ পর্যালোচনা