কোভিশিল্ডের পর কোভ্যাক্সিন - যোগী-রাজ্যে 'ভুল করে' টিকার ককটেল, নাকি গ্রামবাসীরা গিনিপিগ

এ যেন করোনা টিকার ককটেল

প্রথম ডোজ কোভিশিল্ড, দ্বিতীয় ডোজ কোভাক্সিন

উত্তরপ্রদেশের এক গ্রামের বাসিন্দাদের এমনই টিকা দেওয়া হয়েছে

গ্রামবাসীদের উপর কী গিনিপিগের মতো পরীক্ষা চালালো সরকার, উঠছে প্রশ্ন

 

Asianet News Bangla | Published : May 26, 2021 4:08 PM IST

করোনার প্রতিষেধক হিসাবে ভারতে 'অ্যান্টিবডির ককটেল' চালু করা হয়েছে। এবার ভুল করে উত্তরপ্রদেশের এক প্রান্তিক গ্রামের অন্তত ২০ জন বাসিন্দা পেলেন করোনা টিকার ককটেল। তাদের প্রত্যেককে প্রথমে কোভিশিল্ড এবংতার পরের ডোজে কোভাক্সিন দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই গ্রামবাসীদের মধ্যে দারুণ আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রশাসনের কর্তারাও এই 'ভুল' মেনে নিয়েছেন। এমনতিতেই ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে টিকাকরণের নিরিখে খুব খারাপ জায়গায় রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য। এই ঘটনায় নতুন করে চাপে রাজ্য প্রশাসন।

ঘটনাটি ঘচেছে উত্তরপ্রদেশের নেপাল-সীমান্তবর্তী জেলা সিদ্ধার্থনগরের একটি গ্রামে। ককটেল ভ্য়াকসিন পাওয়া গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ১ এপ্রিল তাঁদের প্রত্যেককেই করোনা টিকার প্রথম ডোজ হিসাবে কোভিশিল্ড দেওয়া হয়েছিল। তারপর ১৪মে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়। কিন্তু, কোভিশিল্ডের বদলে এবার দেওয়া হয় কোভাক্সিন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাঁরা টিকা নিয়েছেন, সেখানে তাঁদের প্রথম ডোজ কোন ভ্যাকসিনের দেওয়া হয়েছিল, তাই নিয়ে কেউ মাথাই ঘামায়নি। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই দাবি করছেন, নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর কি দুটি টিকার মিশ্র ডোজ দিলে কী হয়, তার পরীক্ষা চালাচ্ছে সরকার?

প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ভুলের বিষয়টি মেনে নেওয়া হলেও, পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টিকে আমল দেওয়া হয়নি। সিদ্ধার্থনগরের চিফ মেডিকেল অফিসার সন্দীপ চৌধুরী বলেছেন, এটা একেবারেই ভুল করে ঘটেছে।  সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিনের ককটেল দেওয়ার কোনও নির্দেশ ছিল না। এই বিষয়ে ইতিমধ্য়েই প্রশাসনিক স্তরের তদন্তের রিপোর্ট তিনি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক। দোষী ব্যক্তিদের কাছে, এই ভুলের ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছ। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

মজার বিষয় হল, ভ্যাকসিনের মিশ্র ডোজের কার্যকারিতা ও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গোটা পৃথিবীতেই গবেষণা চলছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল, সবকটি প্রথম সারির করোনা টিকার ডোজ মিশ্রিত করে পরীক্ষা চালাচ্ছে। বেশ কয়েকটি টিকার ক্ষেত্রে কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দুইই বেশি এসেছে। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কোনওটাই খুব  বেশি কিছু নয়। কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন নিয়ে কিন্তু, এই ধরণের কোনও গবেষণা এখনও হয়নি। যদি দেখা যায়, কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিক থেকে এই দুই ভারতীয় ভ্য়াকসিনের মিশ্র ডোজে সমস্যা হচ্চে না, সেই ক্ষেত্রে ভারতের টিকাকরণের ক্ষেত্রে কিন্তু অনেকটাই সুবিধা হবে।

সিদ্ধার্থনগরের চিফ মেডিকেল অফিসারের দাবি, তাঁদের পক্ষ থেকে একটি দল পাঠানো হয়েচিল ওই গ্রামে। তারা মিশ্র ডোজ পাওয়া সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা সকলেই সুস্থ আছেন। কোনও সমস্যা হয়নি তাদের। কোনও বিরূপ প্রভাব দেখা যায়নি। তবে টিকার ককেল পাওয়ার কথা জানা ইস্তক ওই জনা ২০ গ্রামবাসীর মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে কেউই তাঁদের খোঁজ-খবর নিতে আসেননি, বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। এই নিয়ে দারুণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন তাঁরা।

তবে এই ধরমের ভিতি উত্তরপ্রদেশের টিকাকরণের প্রক্রিয়া আরও শ্লথ করে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। গুজরাট ও কেরলের মতো রাজ্যে যেখানে জনসংখ্যার ছয় শতাংশের বেশি মাানুষ করোনা টিকার দুটি ডোজ পেয়ে গিয়েছেন, সেখানে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যের জনসংখ্য়ার মাত্র ১.৪ শতাংশ টিকার সম্পূর্ণ ডোজ পেয়েছেন। রাজ্যের জনসংখ্যা যেখানে ২৩ কোটিরও বেশি, সেখানে এত শ্লথ গতির টিকাকরণ ভারতের সার্বিক করোনাচিত্রে প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Share this article
click me!