২২ হাজার টাকায় বন্ধক রেশন কার্ড, লকডাউনে তাই রেশনহীন পুরুলিয়ার কালিন্দীদের গ্রাম

  • নিম্নবর্গের ডোম সম্প্রদায়ের মানুষ  ওঁরা
  • অভাবের সংসারে রেশন কার্ড বন্ধক রেখেছিলেন
  • সেই টাকা শোধ দিতে না-পারায় রেশন তুলতে পারছেন না
  • ফলে লকডাউনের বাজারে তাঁদের কার্যত অনাহারে থাকতে হচ্ছে

বুদ্ধদেব পাত্র: লকডাউনের বাজারে এমনিতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে রুজিরোজগার। যেটুকু যা  চাল-ডাল-আটা পাওয়া যেত রেশন দোকান থেকে, সেটুকুও জুটছে না। কারণ, ২২ হাজার টাকার বিনিময়ে বন্ধক রয়েছে রেশন কার্ড। সেই টাকা শোধ দেওয়ার ক্ষমতা নেই।  তাই এক প্রকার অনাহারেই থাকতে হচ্ছে পুরুলিয়ার  সরজুমাতু গ্রামের শ্যামলা কালিন্দী, ইন্দ্র কালিন্দী, রাধা কালিন্দী আর ভগীরথ কালিন্দীদের। 

Latest Videos

আরও পড়ুন: মেয়ে মারা গিয়েছে বিহারে, বাংলায় লকডাউনে আটকে দিনমজুর মা

পুরুলিয়ার এই ঝালদা মহকুমার সরজুমাতু গ্রামের এই মানুষগুলো মূলত ডোম সম্প্রদায়ের। সমাজের নিম্নবর্গের এই মানুষগুলো কখনও কাজের খোঁজে পাড়ি দেন ঝাড়খণ্ডে, কখনও-বা  অন্য় কোথাও। মধ্য়বিত্তের ঘরে যেমন সোনা, ঠিক তেমনই এই মানুষগুলোর কাছে রেশন কার্ডই ঘরের সবচেয়ে বড় সম্পদ। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য় বা চিকিৎসার কারণে কোনও  সমস্য়ায় পড়লে এঁরা রেশন কার্ড বন্ধক দিয়ে টাকা ধার নেন। পরিবারে ক-টা কার্ড রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে ঋণের পরিমাণ। কখনও ৫ হাজার টাকা, কখনও-বা ২২ হাজার টাকায় চলে এই বেআইনি বন্ধকি কারবার। অপেক্ষাকৃত সচ্ছলরা অনেকটা যেন সোনা বন্ধক রাখার মতো করেই রেশন কার্ড বন্ধক রেখে টাকা ধার দেন। চলে সুদের কারবার। আর, যে পরিবারের কার্ড বন্ধক দেওয়া হয়, তাদের তরফ থেকে রেশন ডিলারকে বলে দেওয়া হয়, যিনি ওই কার্ডগুলো নিয়ে আসবেন, তাঁকেই যেন রেশন দেওয়া হয়। এটাই এখানকার রেওয়াজ। 

আরও পড়ুন: ৩ সেকেন্ডেই করোনা সাফ, কলকাতার পুর বাজারগুলিতে বসছে জীবাণুনাশক চ্যানেল

আরও পড়ুন: করোনা সতর্কতায় নজির, ১৪টি পরিবারকে সংবর্ধনা দিল পুরসভা

কিন্তু মুশকিল হয়েছে অন্য়ত্র। লকডাউনের সময়ে কাজ মিলছে না। নিরন্ন মানুষগুলোর কাছে এখন একমাত্র ভরসা সরকার ঘোষিত বিনাপয়সার চালডাল। কিন্তু তার জন্য় দরকার রেশন কার্ড। যদিও সরকার জানিয়েছেন, যাঁদের কার্ড হয়নি, তাঁরা আবেদন করলে চাল-ডাল পাবেন। কিন্তু এঁদের  নামে যেহেতু রেশন কার্ড রয়েছে, তাই সেই পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঘরে খুঁদকুড়ো যা ছিল তা শেষ হয়ে গিয়েছে। এ-বাড়ি ও-বাড়ি থেকে চেয়েচিন্তে যেটুকু যা জোগাড় করা গিয়েছে কুড়িয়ে-বাড়়িয়ে, সেটুকুও এখন শেষ।  ঘরে চাল-ডাল বাড়ন্ত। তাই একপ্রকার অনাহারেই কাটাতে হচ্ছে সরজুমাতু গ্রামের পরিবারগুলোকে। 


রেশন কার্ডের বন্ধকি কারবার করেন যাঁরা  তাঁদের মধ্য়ে রয়েছেন গুনা কুইরি। তিনি নির্দ্বিধায়  স্বীকার করে নেন, "২২হাজার টাকার বিনিময়ে দুজনের রেশন কার্ড বন্ধক রেখেছি। শুধু আমি নই। গ্রামে আরও অনেকেই আছেন যাঁরা কার্ড বন্ধক রেখে ধার দিয়েছেন। যেদিন ২২হাজার টাকা হাতে পাবো সেদিনই কার্ড দিয়ে দেবো।" 

এদিকে এই কথা জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। যদিও সরাসরি এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ  সংবাদ মাধ্য়মের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, "যিনি কার্ড বন্ধক দিয়েছেন এবং যিনি কার্ড বন্ধক রেখেছেন দুজনেই সমান অপরাধী।  অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" এদিকে শাসকদলকে কার্যত আক্রমণ করে জেলা বিজেপির  কার্যকরী সভাপতি শঙ্কর মাহাতোর কটাক্ষ,  "জীবনে প্রথম শুনলাম, রেশন কার্ড বন্ধক রাখা যায়। কীভাবে কার্ড বন্ধক নেওয়া হচ্ছে তা প্রশাসনের দেখা উচিত। দিদি এতো উন্নয়ন উন্নয়ন বলে গলা ফাটাচ্ছেন। এ কেমন অবস্থা চলছে এখানে?"  

Share this article
click me!

Latest Videos

‘বাংলায় সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হচ্ছে ভূমি এবং ভূমি রাজস্ব দফতরে’ বিস্ফোরক Adhir Ranjan Chowdhury
আমজনতার উদ্দেশ্যে অগ্নিমিত্রা পালের বক্তব্য, দেখুন সরাসরি
'আপনি হিন্দুদের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন নি', মুর্শিদাবাদের জনসভা থেকে Mamataকে আক্রমণ Suvendu-র
‘Sanatani-দের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে!’ বেলডাঙ্গাতে সীতা রাম মন্দির উদ্বোধনে বার্তা Suvendu Adhikari-র
Suvendu Adhikari : মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় সীতা রাম মন্দিরের উদ্বোধন করলেন শুভেন্দু অধিকারী