কোভিড ১৯ এবার কেড়ে নিল সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে, বাংলা সংবাদজগতে নক্ষত্র পতন

  • কোভিডে বাংলা সংবাদজগতে আরও এক নক্ষত্রপতন
  • এবার চলে গেলেন বিখ্যাত সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন শৌনক লাহিড়ি
  • প্রখ্যাত সাংবাদিক শৌনক লাহিড়ির যেন পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন অঞ্জন
     

দীর্ঘ বছর পাঁচ পরে ফিরে এসেছিলেন টেলিভিশন সংবাদমাধ্যমে। বাংলা টেলিভিশন সাংবাদিকতার শুরুর সময় থেকেই এক মহিরুহ হয়ে উঠেছিলেন। ফলে ২০২১ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে টেলিভিশন সাংবাদিকতায় অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যাবর্তনটা ছিল অনিবার্য। এক্কেবারে নতুন লুক, শরীরটা আগের থেকে অনেকটা পাতলা, মাথায় একরাশ চুল এবং চোখে চশমা। বলতে গেলে নতুন লুকে- নতুন উদ্যোমে জি ২৪ ঘণ্টার সঙ্কটের সময় দলবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু যে লড়াইয়ের জন্য তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল জি ২৪ ঘণ্টায়, সেই লড়াইয়ের শেষে জয়ের হাসির নিচে যে এমন বিষাদের সুর লুকিয়ে থাকবে তা হয়তো কেউই অনুমানই করতে পারেননি। রবিবার অর্থাৎ ১৬ মে রাতে যখন বিখ্যাত সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন প্রকৃতপক্ষে খবরটা যেন কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। বাংলা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত অনেক প্রবীণ যাঁরা অঞ্জনের সমসাময়িক অথবা সিনিয়র তাঁদের একটাই বক্তব্য 'রাজা' কি তাহলে তাঁর শেষ লড়াইটাকে স্মরণিয় করে রাখতেই প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিলেন জি ২৪ ঘণ্টায়!

 

Latest Videos

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করতে ময়দানে নিজেও নেমে পড়েছিলেন জি ২৪ ঘণ্টার এডিটর অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। স্টুডিও-র ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন বাংলার কোণে কোণে খবর সংগ্রহে। যথার্থভাবেই এক সাংবাদিকের ধর্ম তিনি পালন করে যাচ্ছিলেন সেই সময়ে। কিন্তু, একজন সাংবাদিকের ধর্ম পালন করতে গিয়ে করোনাভাইরাসের বিষ যে শরীরে ঢুকে পড়েছে তা টের পাননি। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসুস্থতা দীর্ঘ হতেই সামনে আসে তাঁর করোনাভাইরাসে পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি। হাসপাতালে ভর্তিও হয়ে যান। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে যান। কিন্তু, ফের নতুন করে অসুস্থতা শুরু হয়। এবার পরীক্ষা করে দেখা যায় পোস্ট কোভিড অধ্যায়ে ফুঁসফুঁসে প্রবল সংক্রমণে আক্রান্ত হন তিনি। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছিল যে তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছিল। তাতেও তাঁর শাররীক সুস্থতায় কোনও স্থীতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা যায়নি। ফলে অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে একমো সাপোর্টে দিতে হয়। এই পর্যায়েই জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে হার মানেন বাংলা টেলিভিশন সাংবাদিকতার এক অন্যতম জনপ্রিয় মুখ অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘড়ির কাঁটায় তখন রবিবার রাত ৯.২৫ মিনিট। বাংলা সংবাদজগতে যে এক নক্ষত্র পতন ঘটেছে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে দেয়। 

বিখ্যাত সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ হয়ে যায় বাংলা সংবাদজগত। প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন বিভিন্ন মহলের মানুষ। রাজনীতির আঙিনার মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশিষ্ট সাংবাদিক, বিশিষ্ট মানুষজন এবং সংবাদমাধ্যমের শীর্ষকর্তারা সকলেই অঞ্জনের সঙ্গে তাঁদের জড়িয়ে থাকা মুহূর্তের স্মৃতিচারণা করেন। অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকাল প্রয়াণে সকলেই যে বাকরুদ্ধ যে কথাও জানান। 
বাংলা সাংবাদিকতায় এ এক অপূরণীয় ক্ষতি বলেও অনেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। 

ছাত্র হিসাবে অতি মেধাবী ছিলেন তিনি। বাংলা সাম্মানিকে স্নাতকস্তরে এবং স্নাতকোত্তর স্তরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। তাঁর বাংলা লেখণি এতটা গুণে সমৃদ্ধ ছিল যে তাঁর পরীক্ষার খাতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভে রাখা ছিল। সাংবাদিকতায় তিনি ছাপ ফেলতে শুরু করেছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকায় নব্বইয়ের দশকে দিল্লি থেকে জাতীয় রাজনীতির কভারেজে। আনন্দবাজার থেকে তিনি পা রেখেছিলেন ইটিভি বাংলায়। সেটা ছিল টেলিভিশন সাংবাদিকতায় তাঁর অভিষেক। সাফল্যের সঙ্গে ইটিভি বাংলা-কে একটা স্থানে নিয়ে আসার পর তিনি যোগ দিয়েছিলেন আকাশ বাংলা নামে আরও এক টেলিভিশন নিউজ সাংবাদিকতায়। এরপর সেখান থেকে জি ২৪ ঘণ্টায়। এই সংস্থায় অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সাংবাদিকতাকে একটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ২৪ ঘণ্টায় তাঁর সাংবাদিকজীবন এতটাই বর্ণময় ছিল যে আনন্দবাজার ডিজিটাল  প্ল্যাটফর্মের দায়িত্ব ছেড়ে তিনি ফের ফিরে আসেন জি ২৪ ঘণ্টায় হাল ধরতে। আনন্দবাজার ডিজিটাল-এর দায়িত্ব ছেড়ে একটি নতুন টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলের দায়িত্ব নিলেও সেখানে তাঁর মন টেকেনি। জি ২৪ ঘণ্টার পরিচালন কর্তৃপক্ষের ডাক পেয়েই ফিরে গিয়েছিলেন নিজের ঘরে। প্রত্যাবর্তন হল, জয় এলে কিন্তু বিজয় উৎসবকে অধরা রেখেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে কিছুদিন আগেই পাড়ি জমিয়েছেন আজকাল সংবাদসংস্থার সিনিয়র সাংবাদিক শৌনক লাহিড়়ি। 

এই মহূর্তে বাংলা সংবাদজগতের অন্তত ৮০ শতাংশ সাংবাদিক এবং অসাংবাদিকরা কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত। এরমধ্যে যেমন নিচুতলার কর্মীরা রয়েছেন তেমনি রয়েছেন শীর্ষস্তরের কর্তারাও। অধিকাংশই সুস্থ হয়ে ফিরে আসছেন কাজে। সংবাদসংগ্রহের প্রয়োজনে ফের জীবনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেমে পড়ছেন সকলে। অনেকে এখনও রয়েছেন ভেন্টিলেশনে। সকলেই সুস্থ হয়ে ফের কাজে যোগ দিক সেই প্রার্থনাই করছে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। 

Share this article
click me!

Latest Videos

‘প্রণামের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে বাঙালি’ বিস্ফোরক মন্তব্য Dilip Ghosh-এর, দেখুন কী বলছেন | Dilip Ghosh
'কুমিল্লা ছেড়ে চলে যা' কুমিল্লায় বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা! | Bangladesh News |
পুলিশের তৎপরতায় বানচাল ডাকাতির প্ল্যান! গ্রেফতার ২ অপরাধী, চাঞ্চল্য Birbhum-এ
West Bengal-এ জঙ্গিযোগ নিয়ে Mamata Banerjee-কে চরম তুলোধোনা Agnimitra Paul-এর! দেখুন কী বললেন
'যেসব মুসলমানরা হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন তাঁদেরই পূর্বপুরুষেরা হিন্দু ছিল' বিস্ফোরক অর্জুন