'করানোকে হারাতে গৃহবন্দি থাকুন', 'লক-ডাউন ইটালি' থেকে বার্তা বাঙালি বিজ্ঞানীর

  • করোনা সংক্রমণে কার্যত 'মৃত্যুপুরী' ইটালি
  • মৃতের সংখ্যা চিনকে ছাড়িয়ে গিয়েছে
  • ভারতের মতো ইটালিতেও লকডাউন চলছে
  • প্রবাস থেকে কলম ধরলেন বাঙালি বিজ্ঞানী 
     

সব্যসাচী সিদ্ধান্ত, বিজ্ঞানী: ইতালি এবং সার্বিকভাবে গোটা ইউরোপে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। এই যুদ্ধে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী এক অদৃশ্য শত্রু। এক ভাইরাস। নাম তার নোভেল করোনাভাইরাস। কয়েক সপ্তাহ আগে যখন ইতালিতে লকডাউন ঘোষণা করল, সেটা ছিল  আধুনিক ইউরোপের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ লকডাউন। স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, থিয়েটার, পার্ক সব বন্ধ। সবরকম অনুষ্ঠান, জমায়েত নিষিদ্ধ। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে কয়েকদিন আগে ঘোষণা করলেন সব কারখানা যেগুলি দেশের সুরক্ষার সঙ্গে যুক্ত নয়, সেগুলিও বন্ধ করা হল। ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ। শুধু মাত্র অত্যাবশ্যক পণ্য, ওষুধ এবং খাওয়ার জিনিসের দোকান খোলা থাকবে। নাগরিকরা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরোতে পারবেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতালিতে এইরকম সঙ্কট আর আসেনি। উত্তর ইতালিতে এই করোনা ভাইরাস যেভাবে দাবানলের থেকেও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল, তারপর ইতালির বিভিন্ন জায়গায় এটি ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করে, তাতে এই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া উপায় ছিল না।। ইতালিতে যখন প্রথম এই নভেল করোনাভাইরাস এর সংক্রমণ পাওয়া গেল তখন হয়তো কিছু কিছু সিদ্ধান্ত অন্যরকম ভাবে নেওয়া যেতে পারত। কিন্তু কি করলে কি হতে পারতো তার বিচার করার সময় এটা না। এই মূহুর্তে আমাদের আশু কর্তব্য হচ্ছে এই দুঃসময় সবরকম সহযোগিতা করা। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতেও এই ধরণের কিছু ব্যবস্থা নেওয়া আরম্ভ হয়েছে।  

আরও পড়ুন: মাত্রা ৪ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়াল , এখন করোনা সংক্রমণে বিশ্বের ৪ লক্ষ মানুষ

Latest Videos

সারা দেশে লকডাউন আরম্ভ হওয়ার আগে উত্তর ইতালির কিছু জায়গায় আলাদা করে  লকডাউন করা হয়েছিল। মোটামুটি আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছিলো যে. এরকম কিছু হতে যাচ্ছে যেটা ইউরোপের অন্যান্য দেশেও হতে দেরি নেই। আমার মার্চ মাসে ভারতে যাওয়ার পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ভারতে যাত্রা করাটা সমীচীন মনে করিনি। ইতালিতে এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে আমার অনেক বন্ধু আছেন যাঁরা ভারতের নাগরিক, তাঁরাও এই ভাবনার শরিক ছিলেন। শুধু নিজেদের সংক্রমণ হতে পারে সেই জন্য নয়, যদি আমাদের সংক্রমণ থাকে তাহলে সেই যাত্রাপথে আমরা হয়তো অন্যান্য অনেক যাত্রীকে সংক্রামিত করবো, এবং ভারতেও এই সংক্রমণকে নিয়ে যাব। তাই আমরা সেই যাত্রা করা থেকে বিরত থেকেছি। কিন্তু বুঝতে পারছি, যাঁদের এখানে থেকে যাওয়া মুশকিল ছিল, সর্বোপরি যাঁরা পর্যটক তাঁদের ফিরে যেতেই হত। ইউরোপের দেশগুলিকে প্রায় এক শতাব্দী আগেও কলেরা আর স্প্যানিশ ফ্লু আর কোনও মহামারীর সম্মুখীন হতে হয়নি। তাই হয়তো আধুনিক ইউরোপের কাছে এই পরিস্থিতি নতুন। তাই যুদ্ধটাও নতুন।

ইতালিতে ২৩ মার্চ সন্ধে ছটার হিসেবে অনুযায়ী, এখনো পর্যন্ত ৬৩৯২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭০২৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দুর্ভাগ্যবশত, ৬০৭৭ জন গত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৩৭৭৬ জন উত্তর ইতালির লোম্বার্দিয়া অঞ্চলের। সেই অঞ্চলের কিছু জায়গায় পরিস্থিতি ভয়াবহ। ইতালিতে এখনও পর্যন্ত ২৭৫৪৬৮ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে, যেটা এই সংক্রমণের পরিধি বুঝতে সাহায্য করেছে। এই ধরণের সংক্রমণের বৃদ্ধি, গণিতের এক্সপোনেনশিয়াল বৃদ্ধির নিয়ম মেনে চলে, যার জন্যে খুব কম সময়ের মধ্যে সংক্রামিতের সংখ্যা খুব বেড়ে যায়। তবে গত কয়েক সপ্তাহের তথ্যের দিকে চোখ রাখলে বোঝা যাবে যে এই সংক্রমণের দৈনিক বৃদ্ধির হার হ্রাস পাচ্ছে, যেটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু এখনো অনেক পথ চলা বাকি। আমাদের এই লকডাউনের নিয়ম মেনে চলতেই হবে, নাহলে এই সংক্রমণের ওপর রাশ টানা যাবে না।

আরও পড়ুন: রাজপথে ছেড়ে দিয়েছেন ক্ষুধার্ত বাঘ-সিংহ, এভাবেই নাকি রাশিয়ায় করোনা আটকাচ্ছেন পুতিন

এবার ভারতবর্ষের কথায় আসি। সরকারি মতে এখনও এই ভাইরাস এর গোষ্ঠী সংক্রমণ আরম্ভ হয়নি। অর্থাৎ সংক্রমণের এক্সপোনেনশিয়াল বৃদ্ধি শুরু হয়নি। আমাদের চেষ্টা করতে হবে যাতে এই সংক্রমণ যেন কোনো ভাবেই সেই দিকে না যায়। ইতালির স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম সেরা হলেও এই বিপর্যয় সামলাতে ভীষণ মুশকিল হচ্ছে। ইতালি এবং ইউরোপের সার্বিক অবস্থা থেকে আমাদের খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষা নিতে হবে। ভারতবর্ষে লকডাউন চালু হয়েছে। খুব জরুরি সিদ্ধান্ত। আমাদের সবার কর্তব্য বিশেষজ্ঞদের এবং সরকারের সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা। লকডাউন মানে কিন্তু বন্ধুদের সাথে নৈশভোজে বেরোনো নয়। বাইরে ক্রিকেট খেলাও নয়। বাড়িতে থাকুন। বাইরে বেরোলে নিয়ম মেনে চলুন। বিপর্যয়ের এই বন্ধুর পথে আমাদের পথ চলা সবে শুরু। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে পারি তাহলে সেই পথের শেষে অবশ্যই আলোর দিশা অপেক্ষা করে থাকবে।

সব্যসাচী সিদ্ধান্ত, বিজ্ঞানী:  ইতালির  ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের বিজ্ঞানী। সুইৎজারল্যান্ডের সার্নের গবেষণার সঙ্গেও জড়িত।

Share this article
click me!

Latest Videos

'TMC একা ৮০ শতাংশ ভোট পায় কি করে!' প্রশ্ন দিলীপ ঘোষের | Dilip Ghosh | BJP News |
'উপনির্বাচনের ফলাফল নিয়ে BJP ভাবেনা' আর কি বললেন শুভেন্দু? দেখুন | Suvendu Adhikari
ভেঙে পড়ার কারন নেই! কেন BJP-র হার, জানালেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | BJP News
WB By Election: ‘Madarihat-এ যেই ফলাফলটা হয়েছে সেটা প্রত্যাশিত নয়!’ এ কী বললেন Samik Bhattacharya
রুগী মৃত্যু কে কেন্দ্র করে Doctor ও Nurse-দের উপর আক্রমণ, শুনুন সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা