মৃত্যু মিছিল চলছেই ইতালিতে, মাত্র ৬ কোটি মানুষের দেশে কেন মহামারীর আকার নিল করোনা

  • গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা প্রাণ কাড়ল আরও ৬০২ জনের
  • ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ৬ হাজার
  • আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৬৩ হাজারের ঘরে
  • কেন এমন পরিস্থিতি হল বিশ্বের অন্যতম এই সুন্দর দেশের

কিছুতেই ইতালির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৬০২ জন। যার ফলে ইতালিতে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে  ৬,০৭৭। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৬৩,৯২৮। 

গত শনিবার ইতালিতে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল ৭৯৩ জনের। সোমবার সেই তুলনায় সংখ্যাটা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০২। যদিও এই সংখ্যাটাও ভয় ধরানোর পক্ষে যথেষ্ট। প্রশ্ন উঠছে যেখানে ১৪০ কোটির দেশ চিনে করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ৮১ হাজারের থেকে একটু বেশি সেখানে ৬ কোটি মানুষের দেশ ইতালিতে সংখ্যাটা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেল কী করে। ২ মাসেরও কম সময়ে দেশটিতে মারা গেলেন ৬ হাজারের বেশি মানুষ। যার ৮০ শতাংশই মারা গিয়েছেন শেষ ১০ দিনে।

Latest Videos

বর্তমানে গোটা বিশ্বে ১৯০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে  করোনা ভাইরাস। তাদের মধ্যে মৃত্যু মিছিলে এগিয়ে রয়েছে ইতালি। কিন্তু কেন এমন ভয়ানক পরিস্থিতি হল দেশটির। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ইতালিতে প্রথম কোভিড-১৯ রোগীর সন্ধান পাওয়া যায় রাজধানী রোমে,  তারা ছিলেন দুইজন চিনা পর্যটক। এর এক সপ্তাহের মাথায় একজন ইতালিয়ান আক্রান্ত হন, যিনি আবার চিনের উহান শহর থেকে ফিরেছিলেন।

ইতালিয় বিশেষজ্ঞরা প্রথমে এই ভেবে সন্তুষ্ট ছিলেন যে কোভিড-১৯ মূলত বিদেশ ফেরতেদের মধ্যেই সীমিত। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে তাদের এ ভুল ভাঙলো যখন দেখা গেল দেশের  উত্তরাঞ্চলের লোম্বার্ডি প্রদেশে ৩৮ বছরের একজন ইতালিয় আক্রান্ত হলেন করোনায়। এই ব্যক্তি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাইরে যাননি এবং বিদেশ ফেরত কারো সংস্পর্শে আসেননি। পরেরদিনই লোম্বার্ডিতে ১৬ জন কোভিড-১৯ আক্রান্তের সন্ধান মেলে।

চিনে ফের ঘনাচ্ছে আশঙ্কার মেঘ, উহানে নতুন করে দেখা দিয়েছে করোনা সংক্রমণ

মাত্রা ৪ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়াল , এখন করোনা সংক্রমণে বিশ্বের ৪ লক্ষ মানুষ

রাজপথে ছেড়ে দিয়েছেন ক্ষুধার্ত বাঘ-সিংহ, এভাবেই নাকি রাশিয়ায় করোনা আটকাচ্ছেন পুতিন

বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ,সমাজবিজ্ঞানী ও জনসংখাবিদগণ ইতালির এ অবস্থার পেছনের কারণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। তারা মনে করছেন,ইতালির অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর জন্য নতুন শিক্ষা নিয়ে এসেছে। এ শিক্ষা ভারতের জন্যেও প্রযোজ্য। যে বিষয়গুলো ইউরোপের এই দেশটির পরিস্থিতির জন্য দায়ি তা হল:

১.  ধীরে চলা নীতি: অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন  ইতালি সরকার একটু একটু করে প্রথমে শহর, তারপর প্রদেশ ও সব শেষে  সারা দেশ লকডাউন করে, যা করোনাভাইরাসকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে। এই ধীরে চলো নীতির কারণে ইতালির নাগরিকেরা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেননি। মহামারীর প্রথম দিকে রাজনৈতিক নেতাদের ঢিলেঢালা মন্তব্য অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়টিকে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে উপস্থাপন করেছে।

যদিও ইতালির সরকার ৯ মার্চ দেশের সব অঞ্চল লকডাউন করে, কিন্তু তারপরেও বেশ কয়েকদিন লোকজন রাস্তায় ছিলেন। ভিড় চোখে পড়েছিল দোকান-বাজারে। এমনকি অবকাশ যাপন কেন্দ্রগুলো উপচে পড়েছিল পর্যটকদের ভিড়ে।

২. ইতালির বয়স্কদের বাস: ইতালি বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্কদের বাস দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয়। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এপর্যন্ত ইতালিতে কোভিড-১৯ এ যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের গড় বয়স ৬৩ বছর। আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গিয়েছেন তাদের গড় বয়স ৭৮.৫ বছর। 

৩. স্বাস্থ্য সংকট: উত্তরে ইতালির লোম্বার্ডিতে কোভিড-১৯ প্রথম সংক্রমণ শুরু হয়।  প্রথমদিকে সংক্রমণের হার যথেষ্ট কম থাকলেও দু’সপ্তাহের মধ্যে তা হু হু করে বাড়তে থাকে। স্বাস্থ্য বিভাগ সাধ্যমত চেষ্টা করেও সব আক্রান্তদের চিকিৎসা করা যানি। এর পিছনে আসল কারণটা হল,  প্রথম থেকে তারা এমন পরিস্থিতির জন্য তৈরিই ছিল না। হাসপাতালের বিছানা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাঁচার সম্ভাবনা যাদের বেশি তাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে চিকিৎসা দেয়। দুঃখজনকভাবে যারা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয় তাদের অধিকাংশই পরে মারা যায়। হাসপাতালে রোগীর উপচে পড়া ভিড়কে কোনভাবেই ঠেকানো সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ফেরত গিয়েছেন। যার ফলে গোষ্ঠী সংক্রমণ স্বল্প সময়ের মধ্যে গোটা দেশটিকে গ্রাস করে ফেলে। 

৪. কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট সংকট:বিশ্বের বহু দেশের মতো ইতালিতেও করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিটের সংকট দেখা দেয়। ফলে সংক্রমিত আনেক ব্যক্তিকেই শনাক্ত করা ও আলাদা রাখা সম্ভব হয়নি।  

ইতালিতে শুধুমাত্র কোভিড-১৯ এর লক্ষণ ও উপসর্গ যেমন জ্বর কিংবা শুকনো কাশি আছে এমন ব্যক্তিদেরকেই করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হতো। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর করোনাভাইরাস পরীক্ষা ব্যাপকহারে শুরু করে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে যথাযথ উপায় ভাইরাসটির সংক্রমণ কমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়।

ভারতেও ধীরে ধীরে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইতিমধ্যে এই মারণ রোগে ১০ জনের মৃত্যুও হয়েছে। করোনা সংক্রমণ যাতে দ্বিতীয় স্টেজ ছাড়িয়ে তৃতীয় অর্থাৎ গোষ্ঠী সংক্রমণ পর্যন্ত না যার তারজন্য লকডাউন শুরু হয়েছে। তারপরেও এদেশে কিছু মানুষের মধ্যে দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা চোখে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ইতালি  থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যত সম্পর্কে সচেতন হওয়াই কাম্য ১৩০ কোটি ভারতবাসীর। 
 

Share this article
click me!

Latest Videos

'ইয়ে ডর মুঝে আচ্ছা লাগা' হিন্দুদের প্রতি সহানুভুতি, বাংলাদেশী জঙ্গিদের টার্গেট Suvendu Adhikari
Mamata Banerjee-র প্রশাসনকে বেলাগাম তুলোধোনা Agnimitra Paul-এর, দেখুন কী বললেন BJP নেত্রী
বাংলাদেশের হুমকি! হেসেই উড়িয়ে দিলেন প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান অরূপ রাহা | Kolkata News |
Narendra Modi : বড়দিনের অনুষ্ঠানে মাতলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সকলকে জানালেন শুভেচ্ছা
২৬-এ Mamata Banerjee-কে বিদায়! মমতাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বানানোর শপথ Suvendu Adhikari-র