জেনেভার (Geneva) মেডিসিন পেটেন্ট পুল-এর (Medicines Patent Pool) সঙ্গে তাদের তৈরি কোভিড-১৯ বড়ির বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করল ফাইজার ইনকর্পোরেশন (Pfizer Inc.)। ফলে বিশ্বের অর্ধেকের বেশই মানুষ এই ওষুধ পাবেন।
তাদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের (Covid-19 Vaccine) রেসিপি আর কাউকে জানাতে না চাইলেও, তাদের পরীক্ষামূলক কোভিড-১৯'এর ওষুধটি বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যার চিকিত্সার জন্য উপলব্ধ করল মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ফাইজার ইনকর্পোরেশন (Pfizer Inc.)। রাষ্ট্র সংঘ (United Nations) সমর্থিত জেনেভার (Geneva) মেডিসিন পেটেন্ট পুল-এর (Medicines Patent Pool) সঙ্গে তারা এই বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যার ফলে অন্যান্য ওষুধ নির্মাতারাও ফাইজারের এই অ্যান্টিভাইরাল পিল তৈরি করতে পারবে।
মঙ্গলবার, ফাইজারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এর জন্য মেডিসিন পেটেন্ট পুল-কে তারা একটি লাইসেন্স দেবে। ফলে জেনেরিক ওষুধ কোম্পানিগুলির এই পিল তৈরি করতে কোনও বাধা থাকবে না। তবে তা অবশ্য বিশ্বের সব দেশে ব্যবহার করা যাবে না। ৯৫ টি দেশের জন্য এই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। চুক্তির তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, এমন বেশ কিছু বড় বড় দেশের নাম, যেখানে করোনাভাইরাস মহামারির (Coronavirus Pandemic) ভয়ঙ্কর প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল (Brazil), চিন (China), আর্জেন্টিনা (Argentina), থাইল্যান্ডের (Thailand) মতো দেশ৷ এই দেশের জেনেরিক ওষুধ সংস্থাগুলি এই ওষুধ তৈরি করতে পারলেও, নিজেদের দেশে তা বিক্রি করতে পারবে না।
আরও পড়ুন - 'ফাইজার' টিকা নিয়েই গুরুতর অসুস্থ, হঠাৎ কী হল পরিণীতির, বোনের সেবা করছেন দিদি প্রিয়ঙ্কা
তারপরও, এই চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতংশ মানুষ এই অ্যান্টিভাইরাল পিলটি পাবেন। নিম্ন-আয়ের দেশগুলিতে এই ওষুধ বিক্রির উপর কোনও রয়্যালটি পাবে না ফাইজার। এছাড়া, কোভিড-১৯ যতদিন একটি জনস্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসাবে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত চুক্তির আওতায় থাকা সমস্ত দেশেই এই ওষুধ বিক্রয়ের উপর রয়্যালটি নেবে না মার্কিন সংস্থাটি।
মেডিসিন পেটেন্ট পুলের নীতি নির্ধারণ কমিটির প্রধান এস্তেবান বুরনের (Esteban Burrone) দাবি, তাঁদের চুক্তির ফলে ৪০০ কোটিরও বেশি মানুষের কাছে এই কোভিড প্রতিরোধি ওষুধটি উপলব্ধ হবে। অন্যান্য ওষুধ প্রস্তুতকারীরা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই পিল উত্পাদন করা শুরু করে দিতে পারবে বলেই মনে করছেন তিনি। তবে, এই চুক্তি যে সবাইকে খুশি করতে পারবে না, তাও তিনি মেনে নিয়েছেন। তাঁর সাফাই, সংস্থার স্বার্থ, জেনেরিক উৎপাদকদের জন্য প্রয়োজনীয় স্থায়িত্ব এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলির জনস্বাস্থ্যগত প্রয়োজনিয়তার মধ্যে তাঁরা একটা সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেন।
কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকেই, বিশ্বব্যাপী গবেষকরা কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য একটি পিল বা বড়ি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এই মুহুর্তে, কোভিড-১৯'এর যেসব কার্যকর চিকিত্সা হয়, তা সবই ইন্ট্রাভেনাস অর্থাৎ সরাসরি শিরায় দিতে হয়, অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করাতে হয়। কিন্তু, গিলে খাওয়ার বড়ির আকারে করোনার ওষুধ দেওয়া গেলে, মানুষ বাড়িতে বসেই তা করতে পারত। ফলে উপসর্গগুলিও সহজে সেড়ে যেত। দ্রুত সেরে উঠতেন রোগীরা। আর সবথেকে বড় কথা হাসপাতালে শয্যার টানাটানি পড়বে না।
এখন কিন্তু, বিভিন্ন দেশেই এই ধরণের বড়ি তৈরি হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার জন্য ক্লিনিকাল পরীক্ষা চলছে। ফাইজার বলেছে, মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পিলটি অনুমোদন করার জন্য অনুরোধ করবে। ব্রিটেনে (Britain) তাদের তৈরি কোভিড-১৯ পিলের অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষা করছে 'মার্ক' (Merck) সংস্থা। তাদের সঙ্গেও প্রায় ফাইজারের মতোই একটি চুক্তি করেছে মেডিসিন পেটেন্ট পুল। তবে মার্ক তাদের কোভিড-১৯ বড়ি বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছে ১০৫টি দরিদ্র দেশে।