মৃত ব্যক্তিকেও দেওয়া হল করোনা টিকা। তাও আবার ছেলের ভোটার কার্ডের আইডি নম্বর ব্যবহার করে। শংসাপত্রে ছেলের ভোটার আইডি নম্বর আবার অন্য কারও। মা দ্বিতীয় টিকা নিলেও মিলছে একটি শংসাপত্র। মোবাইলে পাঠান এমনই হযবরল শংসাপত্র দেখে চক্ষু চড়কগাছ পরিবারের। আবার দ্বিতীয় টিকা নিলেও শংসাপত্র মেলেনি মায়ের। স্বাস্থ্য কর্মীদের এই কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ পরিবার।
জানা গিয়েছে, বীরভূমের রামপুরহাট থানার কবিচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা অমর কুমার মণ্ডল। পেশায় তারাপীঠ মন্দির সংলগ্ন এলাকায় প্যাঁড়া বিক্রেতা। ২০০৭ সালে তার বাবা দুলাল মণ্ডল মারা যান। চলতি বছরের ১ এপ্রিল মা তোলাবতী মণ্ডল, স্ত্রী জ্যোৎস্না মণ্ডলকে নিয়ে তিনজন মিলে বালিয়া গ্রামের স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের টিকা নেন তাঁরা। কিন্তু মোবাইলে শংসাপত্র আসে চারজনের। ১৫ মে তাঁরা তিনজন দ্বিতীয় টিকা নেন। এবার শংসাপত্র আসে দুটি। দিন দুয়েক আগে একটি সাইবার ক্যাফে থেকে শংসাপত্র প্রিন্ট করতে গিয়ে তাদের চক্ষুচড়ক গাছ। বেরিয়ে আসে ১৪ বছর আগে মৃত বাবার শংসাপত্র।
অমর মণ্ডল বলেন, “১ এপ্রিল আমি মা ও স্ত্রীকে নিয়ে বেলিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিয়েছিলাম। সকলেই ভোটার কার্ডের পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকা নিয়েছিলাম। দ্বিতীয় টিকা নিয়েছিলাম ১৫ মে। প্রথম টিকা নেওয়ার সময় আমার একটি মোবাইল নম্বরেই চারটি শংসাপত্র ঢোকে। প্রয়োজন না থাকায় সে সময় শংসাপত্র প্রিন্ট করায়নি। ১৫ মে দ্বিতীয় টিকা নিয়েছিলাম। এরপর শংসাপত্র প্রিন্ট করতে গিয়ে দেখি মায়ের প্রথম টিকা নেওয়ার শংসাপত্র রয়েছে। আমার এবং স্ত্রীর দুটো শংসাপত্র বের হলেও আমার শংসাপত্রে যে ভোটার পরিচয়পত্র নম্বর দেওয়া হয়েছে তা ভুয়ো। আর বাবা মারা গিয়েছেন এক দশক আগে। তাকে কীভাবে টিকা দেওয়া হল বুঝতে পারলাম না। বাবা কি স্বর্গে টিকা নিয়েছেন”?
প্রতিবেশী বুদ্ধদেব দাস বলেন, “অমর মণ্ডল মণ্ডল আমার কাছে শংসাপত্র প্রিন্ট করাতে যায়। ওনারা প্রথমবার তিনজন টিকা নিলেও শংসাপত্র বেরিয়ে আসে চারজনের। তখন দেখা যায় শংসাপত্রে ছেলে অমর মণ্ডলের ভোটার কার্ডের নম্বর এবং বয়স বসিয়ে মৃত দুলাল মণ্ডলের শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছে। আবার অমর মণ্ডলের শংসাপত্রে দেওয়া ভোটার কার্ড নম্বর অন্য কারও। তাঁর মা দ্বিতীয় টিকা নিলেও বেরিয়ে আসছে প্রথম টিকার শংসাপত্র। এসব দেখে মনে হচ্ছে যাঁরা টিকার দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা হয় অনভিজ্ঞ কিংবা দায়সারা কাজ করেছেন। মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা উচিত নয়। কীভাবে এমনটা হল তদন্ত হওয়া প্রয়োজন”। তবে এনিয়ে মুখ খুলতে চায়নি স্বাস্থ্য দফতরের কোন আধিকারিক।