৬০৪৬৬৬, এই সংখ্যা গুলো পর পর দেখে অনেকেই কোনও শহরের পিন কোড বলে ভাবতেই পারেন। না ভাবার কারণও নেই। এক ঝলকে দেখলে তেমনটাই মনে হচ্ছে। কিন্তু এই সংখ্যাগুলো একটা ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়। ২০১৯ থেকে টাইম-মেশিনে পাড়ি দিয়ে চলে যান ১৯৮৯ সালে। স্থানটা পাকিস্তান। ভারত বনাম পাকিস্তানের প্রদর্শনী ম্যাচ, জেতার জন্য পাঁচ ওভারে ৬৯ রান প্রয়োজন ভারতের। তরুণ স্পিনার মুস্তাক আহমেদকে দুটো ছয় মারলেন সচিন। ৩৪ বছরের আব্দুল কাদির ১৬ বছরের বালককে বললেন, ‘বাচ্চাদের বলে কি মারছিস, ক্ষমতা থাকে তো আমাকে মেরে দেখা।’ পরের ওভারেই দেখা হয়ে গেল দুজনের। আর তারপর কাদির যে ছটা বল করলেন তার পোস্ট মর্টেম রিপোর্টা ছিল এই রকম - ৬, ০, ৪, ৬,৬,৬। কাদিরের এক ওভারে ২৮ রান তুলেছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার। বাকিটা ইতিহাস।
গোটা দেশ সেদিন সচিনকে নিয়ে ভেসে গিয়েছিল উন্মাদনায়। ক্রিকেট বিশ্ব প্রহর গুনতে শুরু করেছিল এক মহাতারকার আগমনের। আর কেমন যেন হাসির খোরাক হয়ে গিয়েছিলেন আব্দুল কাদির। একটা ওভার তাঁর লম্বা কেরিয়ারের গৌরব যে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল সেদিন। সেই স্মৃতি শেষ দিন পর্যন্তও ভুলতে পারেননি কাদির। তরুণ এক ক্রিকেটারকে খোঁচা দিতে গিয়ে নিজেই খোঁচা খেয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার। কেন সচিনকে স্লেজ করতে গিয়েছিলেন ? একাধিক ইন্টারভিউতে কাদির বলেছেন তিনি মোটেই সচিনকে খোঁচা দেননি, বরং টিনএজার সচিনকে বলেছিলন, আর পাঁচ জন সাধারণ বোলারের মতই তাঁকে খেলতে। কাদির যে কথাই বলে থাকুন না কেন, সচিন সেদিন তাঁকে অতি সাধারণ এক বোলারেই পরিণত করেছিলেন মাত্র ছ’টা বলে।
একটা ম্যাচ যা অফিসিয়াল ম্যাচের তকমা পায়নি। মন্দ আলোর জন্য বাতিল হয়ে যাওয়া ম্যাচের বদলে একটা ২০ ওভারের প্রদর্শনী ম্যাচ কাদিরের কেরিয়ারের অন্যতম বড় ক্ষত তৈরি করেছিল। পাকিস্তানি বোলারের গুগলির ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতেন যে ব্যাটসম্যানরা তাঁরাও যেন নতুন অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছিলেন। তাই অনেকেই বলে থাকেন সচিনের সেই ইনিংস ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল কাদিরের মনে। শুক্রবার রাতে কাদির শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। রয়ে গেল তাঁর রেকর্ড বুক, আর অনেক অনেক গল্প। কাদিরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেও এমন একটা দিনে সচিন প্রেমীদের মনে বারবার ফিরে আসছে, ‘৬০৪৬৬৬’ গল্পটাই ।