বয়স তখন মাত্র ১৬। জাতীয় দলের হয়ে প্রথম টেস্ট। বিপক্ষে ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিসের মত বিশ্ব ক্রিকেটের সেই সময়কার ভয়ঙ্কর পেস ও সুইং বোলি জুটি। আর ১৬ বছরের বালকের অভিজ্ঞতা বলতে কেবল মাত্র স্কুল ক্রিকেট। প্রথম ম্যাচে ওয়াকার ইউনিসের বলে বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন সেদিনের ছোট্ট সচিন তেন্ডুলকর। ড্রেসিং রুমে ফিরে কেঁদেই ফেলেছিলেন সচিন। ধরেই নিয়েছিলেন এটিই তার কেরিয়ারের প্রথম ও শেষ টেস্ট ম্যাচ। সেই সময় সচিনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ রবি শাস্ত্রী। সচিনের প্রত্যাবর্তনের রাস্তাও নাকি সেদিন রবি শাস্ত্রীই বলে দিয়েছিলেন। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথাই জানিয়েছেন সচিন সচিন তেন্ডুলকর।
আরও পড়ুনঃবিশ্বকাপের মেডেল হারিয়ে ফেলেছেন জোফরা আর্চার, দিন-রাত খুঁজছেন পাগলের মত
সচিন বলেছেন, ‘‘জীবনের প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের দুই পেসার ওয়াসিম আক্রম এবং ওয়াকার ইউনিসের বিরুদ্ধে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। স্কুল জীবনে যে ভাবে খেলতাম, সে ভাবে ব্যাট করছিলাম। ওয়াসিম, ওয়াকাররা গতির সঙ্গে খাটো লেংথের বল করছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘ওদের গতি ও বাউন্স বুঝতে না পেরে ১৫ রানে আউট হই। ড্রেসিংরুমে ফিরে হতাশ লাগছিল। মনে মনে বলছিলাম, কেন এ ভাবে খেললে? বাথরুমে দাঁড়িয়ে চোখে জল এসে গিয়েছিল।’’ এমনও তাঁর মনে হয়েছিল যে, এটাই জীবনের প্রথম ও শেষ টেস্ট হয়ে দাঁড়াতে পারে। ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কী বস্তু, সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই করতে পারছিলাম না।’’ এর পরেই পথপ্রদর্শক হিসেবে উদয় হন রবি শাস্ত্রী। সচিনের কথায়, ‘‘শাস্ত্রী তখন আমাকে বলে, স্কুল ম্যাচের মানসিকতা নিয়ে খেলো না। বিশ্বের সেরা বোলারদের বিরুদ্ধে খেলছ। তাদেরও তো সম্মান করতে হবে।’’ তিনি শাস্ত্রীকে বলেন আক্রমদের গতিতে পরাস্ত হয়েছেন। সচিনের কথায়, ‘‘শুনে রবি বলেছিল, এটা হতেই পারে। সব কিছু ভুলে শুধু আধঘণ্টা ক্রিজে টিকে থাকো।’’
আরও পড়ুনঃসুযোগ পেলে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের রেজাল্ট বদলে দিতাম, জানালেন কে এল রাহুল
আরও পড়ুনঃকরোনা ভাইরাস মহামারীর জেরে স্থগিত হয়ে গেল ওয়েস্ট উইন্ডিজের ইংল্যান্ড সফর
শাস্ত্রীর পরামর্শে ফয়সালাবাদে পরের টেস্টে সফল হয়েছিলেন সচিন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফয়সালাবাদে দ্বিতীয় টেস্টে দলে সুযোগ পাওয়ার পরে একটা কথায় মাথায় ছিল স্কোরবোর্ডে তাকাব না, ঘড়ির দিকে চোখ রাখব। রান করার জন্য তাড়াহুড়ো করব না। যে ভাবেই হোক আধঘণ্টা ব্যাট করে যাব৷’ দ্বিতীয় টেস্টে বিশ্বসেরা পাক ত্রয়ী পেসারের বিরুদ্ধে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বিশ্বক্রিকেট সেদিনের সেই বিস্ময় বালক৷ তারপর ২৪ বছরের ক্রিকেট বিশ্বে রাজ করেছেন লিটল মাস্টার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ সেঞ্চুরির মালিক। রেকর্ডের ঝুলিতে বাকি নেই কোনও কিছুই। সেদিনের বিষ্ময় বালক হয়ে উঠেছেন আজকের ক্রকেট ঈশ্বর।