পুজো মানেই বন্ধুদের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়া ,আর মাঝে মাঝে মণ্ডপে গোলচক্কর -আর কি বলছেন সুজন চক্রবর্তী

সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে বুকস্টল করার রেওয়াজটা বামপন্থীদের অনেকদিনের তাই পুজোর দিনগুলোতে  একদফা রাউন্ড মেরে  বুকস্টলে বসা , বই পড়া  এই নিয়েই কাটে বামপন্থী নেতা সুজন চক্রবর্তীর পুজো। এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে টেলিফোনিক পুজোর আড্ডায় বামপন্থী নেতা সুজন চক্রবর্তী

Bhaswati Mukherjee | Published : Oct 4, 2022 6:52 AM IST

চারিদিকে পুজো পুজো আমেজ। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের  উদাত্ত চন্ডীপাঠ শোনার পর কোথাও যেন কাজে আর মন বসছে না আমার।  অফিস করতে একদম  ভালো না লাগলেও   উপায় না পেয়ে বসতেই  হলো কাজে। লেখালিখির কাজ শুরু করতেই যাবো মনে পড়লো দুদিন আগের একটা  ঘটনার কথা । দুদিন আগে ইন্টারভিউয়ের জন্য ফোন করেছিলাম পশ্চিমবঙ্গের এক দাপুটে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্ত বামপন্থী চিন্তাধারার মানুষ এখনো  বাম্পন্থাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বঙ্গে  তাদের মধ্যেই  অন্যতম  হলেন ইনি। মনে আছে যেদিন ফোন করেছিলাম সেদিন ফোনটা ধরেই প্রচন্ড কাশছিলেন  তিনি। মনে মনে ভেবেওছিলাম এই মুহূর্তে বিরক্ত করাটা হয়তো  ঠিক হচ্ছে না বোধহয়।  কিন্তু পেশাদারিত্ব একটি অদ্ভুত জিনিস। মন বা মন রিলেটেড বিষয়গুলি পেশাগত জীবন থেকে যত দূরে সরিয়ে রাখা যায় ততই নাকি  ভালো।  তাই অগত্যা খানিক পেশাদারিত্বের তাগিদেই নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম " আপনার একটা টেলিফোনিক ইন্টারভিউ নিতে চাই যদি, ১০ মিনিট একটু সময় দেন। " ওপাশ খানিক কাশির আওয়াজের সাথেই উত্তর এলো " শরীরটা খুব খারাপ আপনি যদি কাইন্ডলি দুদিন বাদে কল করেন খুব ভালো হয় " ব্যাস এরপর আর বেশি পেশাদারিত্ব দেখাতে পারিনি। 

ফোনটা রেখে দিয়েছিলাম সেদিন। কিন্তু আজ বড়ো ইচ্ছা  হচ্ছিলো একবার ফোন করি। মূলত শরীর কেমন আছে সেটা জানার তাগিদেই। তো যেমন ভাবা তেমন কাজ। করলাম ফোন। ফোনটা তুলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর।  বললেন " হ্যালো ,বলুন " .গলাটা শুনে মনে হলো আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ আছেন এখন।  তাই ভরসা পেয়ে বললাম ," স্যার টেলিফোনিক ইন্টারভিউয়ের জন্য কথা হয়েছিল আপনার সঙ্গে ,মনে আছে ? ".কথা শেষ হবার আগেই উনি বললেন " হ্যাঁ হ্যাঁ ,বলুন ইন্টারভিউটা কি এখুনি নেবেন ?' বাহ্ ,এতো মেঘ না চাইতেই জল। বেশ উৎফুল্ল হয়েই বললাম " তাহলে এখুনি শুরু করি ?" শুরু হলো আলাপচারিতা।  শোনালেন ছোটবেলায় গ্রামের বাড়িতে কাটানো পুজোর দিনগুলোর কথা। এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে টেলিফোনিক পুজোর আড্ডায় বামপন্থী নেতা সুজন চক্রবর্তী।



 

১। পুজোর কটা দিন কি রাজনীতিকে ভুলে থাকা যায়?
শারদোৎসব মানুষের সামাজিক অংশগ্রহণ বেশি হয়। এখানে সবাই যেমন ইনভল্ভ থাকেন আমরাও তেমন ইনভল্ভ থাকি। আমাদের অনেকেই আছেন যারা পুজোর কাজকর্মের সাথে যুক্ত থাকেন ,সার্বজনীন পুজোর অংশ হিসাবে।  এর বাইরে পার্টির  কমরেডদের একটা বড়ো অংশ শারদোৎসব উপলক্ষ্যে যে নানান অনুষ্ঠানর  সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এছাড়াও যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি বাইরে  ঘুরতে গিয়ে না থাকেন  তাহলে তারা বুকস্টলে বসেন। সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে বুকস্টল করার রেওয়াজটা বামপন্থীদের অনেকদিনের, আজকের না। তাতে বুকস্টল করাও হলো আর ভিড়ের মধ্যে দিয়ে যেসব মানুষ যাতায়াত করছেন তাদের দেখবার একটা সামাজিক দায়িত্বও পালন পালন করা হলো ।  আমিও তাই করি।  কখনো বাইরে যাই আর এখানে থাকলে একদিন দুদিন একটু পুজো ঘুরে দেখে নিলাম বাকি সময়টা বুকস্টলেই  বসি। 


২। পুজোর সময় কখনও ঘুরতে গিয়েছেন
হ্যাঁ হ্যাঁ।  এটাই বরং খানিকটা সুযোগ দেয় ঘুরতে যাবার অন্য সময় সুযোগটা কম থাকে। তবে কখনো কখনো ঘুরতে যাই সবসময় যে যাই সেটা না। 

৩। এমন একটা পুজোর কথা মনে পরে  যেখানে নিশ্চিন্তে ভুরিভোজ আর ঘুম দিয়েই দিন কেটে গিয়েছে
হ্যাঁ হ্যাঁ ,মনে পড়ে।  আমার ছোটবেলায় আমি যখন গ্রামে থাকতাম তখন সেখানে যে সার্বজনীন পুজো প্যান্ডেল হতো সেখানেই সারাদিন বেশ কেটে যেত আমার।  আবার একটা সময় ছিল যখন একটু বেশি পরিশ্রান্ত থাকতাম তখন ষষ্ঠীর দিন একটু ঘোরাঘুরি করে  সপ্তমী , অষ্টমী , নবমী , দশমী বিশ্রাম নিতাম বই পড়তাম। বই পড়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ থাকতো তখন। 


 

৪। মণ্ডপে মণ্ডপে যান প্রতিমা দেখতে
না এটা আমার কোনোদিনই খুব একটা অভ্যাস ছিল না।  কোনোদিনই এইসব ব্যাপারে বেশি উৎসাহ ছিল না।  তবে মণ্ডপে মণ্ডপে নতুনত্ব কি হচ্ছে সেটা দেখতে যাই কিন্তু ভিড় খুব একটা সুবিধের নয় তাই  কখনো কখনো মনে হয়  ভিড়ে যাওয়াটা খুব একটা ঠিকও হচ্ছে না।  কিন্তু থিমের যা ভেরিয়েশন দেখা যায় আজ কাল ,সেইকারণে আমি চেষ্টা করি অন্তত ২ বছর বা ১ বছর অন্তর অন্তর  একটা করে  রাউন্ড মেরে আসতে যে কিধরনের চলছে সেটা দেখার জন্য।  আবার পুজোর দিনগুলোতে বুকস্টলেও যেতে  ইচ্ছে হয় তাই একদফা রাউন্ড মেরে  বুকস্টলেও বসে পড়ি । আর তাছাড়া পুজোতে বিশ্রাম করার বা বই পড়ার ঝোঁকও থাকে। 


৫। পুজোর দিনগুলো কোন রুটিনে দিনটা শুরু করেন
এক এক বছর এক এক রকম। প্রত্যেক বছর একরকম থাকে না।  কোনোবার বেহালার দিকে একটু ঘোরাঘুরি বেশি করলাম। কোনোবার আবার যাদবপুরের দিকে বেশি ঘোরাঘুরি করলাম। কোনোবার বাড়ির উৎসব বা গ্রামের পুজোয় ঘুরলাম। আবার এমন হয়েছে যে পুজোর দু তিনদিন ডায়মন্ড হারবারের দিকে একটু ঘুরে আসলাম পুজোর প্যান্ডেলগুলোও ঘোরা হলো , বিশ্রামও হলো।বুকস্টলেও বসা থাকে। ওটা হলে তো কমপ্লিটলি বিরাম। 


৬। এমন কোনও পুজো জাস্ট রাজনৈতিক কারণে অন্যদিকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে
না না সচরাচর সেটা হয় না। আমরা পুজোর সময়টাতে একেবারে সারাক্ষন রাজনৈতিক কাজকর্ম করে বেড়াচ্ছি সেটা হয়নি কখনো। 

৭। পুজোর দিনে পুরনো দিনের বন্ধুদের সঙ্গে কি আড্ডাটা আজও হয়
কম।  কম হয়। পুজোর সময় যার যার নিজের কাজেও ব্যস্ত থাকে।  আমি ফ্রি মানে যে আমরাও বন্ধুরাও ফ্রি থাকবে সেটা হয় না। কখনো কখনো যেটা হয় সেটা হলো পুনর্মিলন বা রিইউনিয়ন।  গ্রামে বা কোনো অনুষ্ঠানে কারুর মেয়ে বা ছেলের বিয়ে তখন আগে থেকে কথা বলে নি যে আসছিস তো? এইভাবে এক ঘন্টা দু ঘন্টা আগে আমরা চলে গেলাম তারপর নিখাদ আড্ডায় বসলাম।  এইরকম হয় কিন্তু পুজোর সময় সেই সুযোগটা কম থাকে। 



৮। এবারের পুজো প্ল্যান কেমন ? কোথাও ঘুরতে যাবার প্ল্যান আছে এবার ?
এবছরে কোথায় যাবো এখনো ঠিক করিনি তবে যেতে পারি এবার ঘুরতে।  আমি তো আর একা একা যাই না আমাদের বিভিন্ন বন্ধুদের টীম এখানে ওখানে ঘোরে। সবাই বলে " যাবি নাকি ?'" আমি ঠিক নাও বলিনা হ্যাঁও বলিনা। বলি " দেখে নিচ্ছি ".. তারপর স্কোপ পেলে কোথাও না কোথাও চলে গেলাম কোনো না কোনো টিমের সঙ্গে। ওদেরই অর্র্যাঞ্জমেন্ট থাকে আমি ওদের মধ্যে ঢুকে পড়ি। আমি নিজে প্ল্যান করলে সেটা খুব ভুলভাল হয়। 


৯। এক কথায় যদি জানতে চাই পুজো মানে আপনার জীবনে কি
আমার কাছে পুজো মানে হচ্ছে নানাবিধ। একটা যেমন পুজোকে কেন্দ্র করে যে উৎসবমুখীনতা সেটা। এর মধ্যেও কারুর প্রাচুর্যের সুযোগ থাকে। আবার একটা বড়ো অংশ আছে যাদের প্রাচুর্য্য নেই তাদের অভাব আছে দারিদ্র আছে। তারা পুজোর এই কটা দিনই উপার্জন করে আবার কারুর কারুর ক্ষেত্রে বাড়তি উপার্জনের সুযোগ করে দেওয়াতে তাদের পরিবারের মুখেও হাসি ফোটে। পুজোকে কেন্দ্র করে  যেমন সামাজিকতা থাকে , সাংস্কৃতিক মনন  থাকে তেমন একটা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও থাকে যেমন পুজোকে ঘিরে প্যান্ডেল তার ব্যবসা মাইক, লাইট , তার ব্যবসা ডেকোরেটর ইত্যাদি ইত্যাদি।  আজকাল ক্রিয়েটিভ অনেক আর্ট পুজোকে কেন্দ্র করে হয়। এসব খুবই পসিটিভ একটা সময় পুজো মানেই ছিল একটা ধর্মের ব্যাপার লোকে মনে করতো এখন পুজো মানে অনেক বেশি উৎসবমুখীনতা। 

আরও পড়ুন-
প্যান্ডেল হপিং করতে দিয়ে ত্বকে দেখা দিচ্ছে কালো প্যাচ? সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে ঘরোয়া উপায়
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে রাজা রামমোহন রায়, গুণীজনের স্মৃতি নিয়ে জাড়া রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ছাড়াল আড়াইশো বছর

অনলাইন বেটিং-এর বিজ্ঞাপন আটকাতে এবার সীমা টানল কেন্দ্র, কড়া বার্তা খবরের ওয়েবসাইট, চ্যানেল ও ওটিটি সাইটগুলিকে

Share this article
click me!