ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে রাজা রামমোহন রায়, গুণীজনের স্মৃতি নিয়ে জাড়া রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ছাড়াল আড়াইশো বছর

Published : Oct 02, 2022, 05:50 PM IST
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে রাজা রামমোহন রায়, গুণীজনের স্মৃতি নিয়ে জাড়া রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ছাড়াল আড়াইশো বছর

সংক্ষিপ্ত

প্রায় আড়াইশো বছরের পুরোনো জাড়া রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। যে মন্দিরে পুজো দেখতে আসতেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে রাজবাড়ির আত্মীয় রাজা রামমোহন রায়। 

কবিগানের লড়াই চলছে, কলকাতা থেকে এসেছেন ভোলা ময়রা। প্রতিযোগী স্থানীয় কবিয়াল যজ্ঞেশ্বর ধোপা। লড়াইয়ে ভোলা কবিয়াল গান বাঁধলেন, “কেমন করে বললি জগা/ জাড়া গোলোক বৃন্দাবন/ এখানে বামুন রাজা চাষা প্রজা/ চৌদিকে তার বাঁশের বন।” কবিগানের এমনই এক দৃশ্যপট আমরা পাবো অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি সিনেমায়। সিনেমার কবিগানের দৃশ্যে আমরা এক রাজবাড়ির মন্দিরকোঠা দেখেছিলাম মনে করতে পারছেন? সেই মন্দির প্রাঙ্গণ অন্য কোথাও না, এই জাড়া গ্রামের রাজবাড়ির প্রাঙ্গণ। পশ্চিম মেদিনীপুরের জাড়াগ্রামে সেই প্রাঙ্গণ আজ অবলুপ্তির দিন গুনছে। লিখেছেন সংবাদ প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ সরকার।


রাজবাড়ির ভগ্নপ্রায় স্থাপত্যে জেগে আছে এর অতীত ইতিহাস। আর তাতে মিশে রয়েছে বিষ্ণুপুরী ঘরানা ও ব্রিটিশ স্থাপত্যের মিশেল। ফাটল ধরা, আধভাঙা, শ্যাওলা পড়া দালানকোঠা জানান দেয় তার প্রাচীনত্ব। প্রায় দুশো বছরের পুরোনো এই দুর্গাপুজোর সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে  রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। 


পুজো শুরু কবে থেকে- 
এই বংশের রামগোপাল রায় রাজবাড়িতে প্রথম কালীপুজোর প্রবর্তন করেন। ১১৫৫ বঙ্গাব্দে তিনি একটি দুর্গামন্দিরও প্রতিষ্ঠা করেন।রামগোপালের পুত্র রাজীবলোচন রায় জাড়া বংশের গৌরবকে আরও মহিমান্বিত করেন। রাজীবলোচন রায়  ‘রাজা’ উপাধি পেয়েছিলেন। তাঁর হাত ধরেই দুর্গাপুজোর সূচনা হয় জাড়া রাজবাড়িতে।পিতৃপ্রতিষ্ঠিত নাটমন্দিরে দুর্গাপুজোর প্রচলন তিনিই করেন। তাঁর আমলেই এই পুজোর আড়ম্বরের কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।


ইতিহাস- 
এই জাড়াগ্রামের রায় বংশের বংশের আদি পদবি ছিল গঙ্গোপাধ্যায়, পরবর্তী কালে ‘রায়’ উপাধি পেয়েছিলেন।বর্ধমানের জনৈক ব্রাহ্মণ জমিদার একবার জাড়া গ্রামে আসেন। জমিদারী রক্ষার কাজ নিয়ে। ক্রমে রাজস্ব আদায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এই গ্রাম আয়বর্ধক হয়ে ওঠে। পাকাপাকিভাবে তিনি মেদিনীপুরেই থেকে যাওয়ার কথা ভাবেন। কুলদেবতা গোপাল ঠাকুরের মূর্তিও প্রতিষ্ঠা করেন এখানে। এই ব্রাহ্মণ বংশজাত জমিদারের পদবি ছিল গঙ্গোপাধ্যায়। পরে তিনি "রায়বাহাদুর" উপাধি পান। এরপর নিজেকে রামগোপাল রায় হিসেবেই পরিচয় দিতে থাকেন। তিনিই প্রথম কালীপুজো প্রবর্তন করেন। ১১৫৫ বঙ্গাব্দে স্বহস্তে দুর্গামন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে পলাশীর যুদ্ধেরও আগে এই জমিদার বাড়ি নির্মিত হয়েছিল। এই বংশের সুসন্তান রামগোপাল রায়ের সুপুত্র রাজীবলোচন রায় জাড়া বংশের গৌরবকে আরও মহিমান্বিত করেন। তিনিই বড়লাটের থেকে "রাজা" উপাধি পেয়েছিলেন। 


পুজো পদ্ধতি- 
জাড়া রাজবাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো। সেই প্রথম দিন থেকে আজও রায় পরিবারে প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই পুজো হয় দেবীর। এই রাজবাড়ির পুজো হয় বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে এবং এখানে বলিদানের কোনো প্রথা নেই। মহাষ্টমীর দিন ব্রাহ্মণভোজন এবং দরিদ্রনারায়ণ সেবার আয়োজন করেন রাজবাড়ির সদস্যরা। সন্ধিপুজোর সিঁদুরখেলায় এখনো আসে অগণিত দর্শনার্থী। 


দশমী পর্ব- 
প্রতিমা নিরঞ্জনের পর রাজবাড়ির সদস্যরা একত্রে নজরুলগীতি গাইতে গাইতে ঘরে ফেরেন। দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের পর পরিবারের সকল সদস্য বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘যাসনে মা ফিরে, যাসনে জননী’ গানটি গাইতে গাইতে বাড়ি ফেরেন। 

ভোগবৃত্তান্ত- 
এই বাড়িতে পুজোর সময় প্রায় পঁচিশ রকমের রান্নার পদ হয় – খিচুড়ি, সাদাভাত, নানা রকমের ভাজা, তরকারি, পায়েস, চাটনি ইত্যাদি। মহানবমীর দিন পরিবারের সকল সদস্য একসঙ্গে মিলে খাওয়াদাওয়া করেন। 

আরও পড়ুন-
ইতালিয়ান ধাঁচের নিমতিতা রাজবাড়িতে রয়েছে দেড়শোটা ঘর, তবে দুর্গাপুজোর পরম্পরায় প্রতিমা আজও একচালার 
পটাশপুরের পাঁচেটগড় রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়েছিলেন মোঘল সম্রাটরা?

‘বর্গী এল দেশে’, আর সেই বর্গীদের রুখে দিলেন রানি জানকী, তিনিই শুরু করলেন মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো

PREV
Read more Articles on
click me!

Recommended Stories

Durga Puja 2025: সঙ্ঘাতির 'দ্বৈত দুর্গা' থিমে বাংলার দুর্গা এবং শেরাওয়ালি মাতা, বিষয়টা ঠিক কী?
Durga Puja 2025: দুর্গাপুজোয় চাঙ্গা রাজ্যের অর্থনীতি? ১০-১৫% বৃদ্ধির সম্ভাবনা, আনুমানিক ৪৬,০০০-৫০,০০০ কোটি টাকা