সংক্ষিপ্ত

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে দ্বারকানাথ চৌধুরী বাংলাদেশ থেকে এসে নিমতিতা এলাকায় জমিদারির পত্তন করেন। ১৯৫৭ সালে এই রাজবাড়িতে সত্যজিৎ রায় জলসাঘর ছবির শুটিং করেন। 

শতাব্দী প্রাচীন নিমতিতা রাজবাড়ির সাথে সম্পর্ক রয়েছে  কবি নজরুল ইসলাম, সত্যজিৎ রায়, শিশির ভাদুড়ি থেকে একাধিক দিকপাল ব্যক্তিত্বের। সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় সপরিবারে এক সপ্তাহ কাটিয়ে গিয়েছেন নিমতিতা রাজবাড়িতে। নিমতিতা রাজবাড়ির পুজো নিয়ে লিখেছেন অনিরুদ্ধ সরকার। 

পুজো শুরু কবে থেকে

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে দ্বারকানাথ চৌধুরী বাংলাদেশ থেকে এসে নিমতিতা এলাকায় জমিদারির পত্তন করেন। দুর্গাপুজো শুরু তখন থেকেই। 

ইতিহাস- লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সূত্র ধরে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জমিদার রামচন্দ্র চৌধুরীর দুই সন্তান গৌরসুন্দর চৌধুরী ও দ্বারকানাথ চৌধুরী তৈরি করেন নিমতিতার রাজবাড়ি। ইতালিয়ান ধাঁচের বাড়িতে রয়েছে পাঁচটি উঠোন এবং দেড়শো ঘর। এই বাড়িতে একসময় এসেছিলেন বহু গুণীজন। দ্বারকানাথের ছেলে রায়বাহাদুর জ্ঞানেন্দ্রনাথ চৌধুরীর মেয়ের বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে এসেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম।




পুজো কাহিনী

একচালার প্রতিমা। প্রতিমা শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় এই রাজবাড়ির দুর্গা বানিয়ে আসছেন। অতীতে শতাধিক ঢাক সহযোগে পুজোর সুচনা হত নিমতিতা রাজবাড়িতে। গ্রাম ছাড়িয়ে দূরদূরান্তের মানুষ আসতেন পুজো দেখতে। পুজোর ক’দিন নববধূর সাজে সেজে উঠত রাজবাড়ি। ষষ্ঠীর দিন হত মায়ের আবাহন। পুজোর ক'দিন গ্রামের হাজার খানেক মানুষের পাত পড়ত রাজবাড়িতে। বিজয়াদশমীতে ওড়ানো হত নীলকণ্ঠ পাখি। 


ঐতিহ্যের নিমতিতা রাজবাড়ি -

বাংলার নাট্যজগতের সাথে আত্মিক সম্পর্ক ছিল এই রাজবাড়ির। ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, শিশির কুমার ভাদুড়ির নাটক মঞ্চস্থ হত এখানে। ১৯৫৭ সালে এই রাজবাড়িতে সত্যজিৎ রায় জলসাঘর ছবির শুটিং করেন। পরে ১৯৫৯ এবং ১৯৬০ সালে দু’বার এসেছিলেন দেবী এবং সমাপ্তি ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তথ্যচিত্রের কিছু অংশ চলচিত্রায়নের জন্য। জলসাঘর সিনেমায় দেওয়ালে সবুজ রং এর যে কারুকাজ দেখা যায় সেগুলি ছবি বিশ্বাসের নিজের হাতে আঁকা। নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত চিত্রসাংবাদিক ব্রায়ান ব্রেক তরুণী অপর্ণা সেনকে ‘মনসুন ইন ইন্ডিয়া’ নামে ফটো স্টোরির করিয়েছিলেন নিমতিতা জমিদার বাড়িতে। 

বর্তমানে এই রাজবাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছে সরকার। 

আরও পড়ুন-
মহানন্দার জলে তলিয়ে যায় ইটাহারের জমিদারবাড়ি, তারপর ভূপালপুরের রাজপ্রাসাদে শুরু হল দুর্গাপুজো
মুসলমান সম্প্রদায়ের দেখানো আলোতেই পথের দিশা পান মা দুর্গা, মালদহের চাঁচল রাজবাড়ির পুজোয় অদ্ভুত স্বপ্নাদেশ
অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীরামপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ছিল নক্ষত্রের সমাহার