পটাশপুরের পাঁচেটগড় রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়েছিলেন মোঘল সম্রাটরা?

স্বমহিমায় বিরাজমান পাঁচেটগড় রাজবাড়ির পুজো। রাজবাড়ীর ইতিহাসে জড়িয়ে রয়েছে সুরসাধক যদুভট্টের কাহিনি।

Web Desk - ANB | Published : Oct 2, 2022 11:31 AM IST

কালামুরারি দাস মহাপাত্র তৈরি করেন বিখ্যাত পঞ্চেশ্বর শিবের মন্দির। যার থেকে এলাকার নাম হয় পাঁচেটগড়। তিনিই এই অঞ্চলে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। প্রায় সাড়ে চারশো বছরেরও বেশি সময়কার ঐতিহাসিক দুর্গাপুজোর খোঁজ নিলেন সংবাদ প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ সরকার।


ইতিহাস- 
দাস মহাপাত্র পরিবারের এই রাজবাড়ি গড়ে ওঠার পেছনে আছে চমকপ্রদ ইতিহাস। ওড়িশার আটঘর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বাড়ির আদি পুরুষ কালামুরারি দাস মহাপাত্র। জগন্নাথ দেবের সামনে নিত্যদিন সঙ্গীত পরিবেশন করতেন তিনি। সেই সঙ্গীতেই মুগ্ধ হয়ে রাজা তাকে মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মন্দিরের পাশে পেয়েছিলেন জমি। পরবর্তী সময় জাহাঙ্গীরের নেক নজরে পড়েন তিনি। জাহাঙ্গীর তাঁকে বাংলা, বিহার ও তাম্রলিপ্ত বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেন। মোঘল সম্রাটের কাছ থেকে কালামুরারি পান জমিদারি।  তিনি এরপর পটাশপুর এলাকায় বিশাল গড় নির্মাণ করেন।




কেউ কেউ অবশ্য বলেন এই রাজবাড়ির পূর্বপুরুষ কালা মুরারিমোহন দাস মহাপাত্র ছিলেন বিখ্যাত সেতার বাদক। তাঁর সেতার বাজানোর খ্যাতি পৌঁছে যায় দিল্লীর মুঘল দরবারে। সেই সূত্রে পান জমিদারি। এখন কোন মোগল সম্রাট কালা মুরারিকে জমি দিয়েছিলেন এবং কোন মোঘল সম্রাটের আমলে জমিদারির পত্তন হয়েছিল তা নিয়ে বিস্তর বিবাদ রয়েছেন। গবেষকদের কেউ বলেন আকবর, তো কেউ জাহাঙ্গীর। কেউ কেউ আবার ঔরঙ্গজেবও বলেন। মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব নাকি খুশি হয়ে কালামুরারিকে তাম্রলিপ্ত বন্দরের প্রশাসকের কাজ দেন।

পুজো পদ্ধতি- 
প্রতিবছর ষষ্ঠী থেকে রাজবাড়ির পুজো শুরু হয়। ঢাক, ঢোল, কাঁসর-ঘন্টা ধ্বনি সহযোগে পঁচেটগড় রাজবাড়ির প্রাচীন পুকুর থেকে জল আনা হয় এবং দুর্গাপুজোর ঘট স্থাপন করা হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে রাজবাড়ির পুজো। তবে সময়ের সঙ্গে বার বার পরিবর্তন হয়েছে পুজোর। একটা সময় পর রাজপরিবার শৈব থেকে বৈষ্ণব হয়ে যান। ফলে বন্ধ হয়ে যায় মুর্তি পূজো। ঘট পূজোর প্রচলন হয়।  চাল চিত্রের প্রচলন হয়। পটে আঁকা প্রতিমায় শুরু হয় পুজো। পটেই পূজিত হন দেবী দশভূজা। এই দুর্গোৎসবে দেবী মৃন্ময়ী পূজিতা হন। স্থায়ী মণ্ডপের ওপরে শিব, ডান পাশে লক্ষ্মী ও গণেশ এবং বাম পাশে সরস্বতী ও কার্তিককে নিয়ে দুর্গা বিরাজ করেন।

আরও পড়ুন-
ইতালিয়ান ধাঁচের নিমতিতা রাজবাড়িতে রয়েছে দেড়শোটা ঘর, তবে দুর্গাপুজোর পরম্পরায় প্রতিমা আজও একচালার 
সাদা রঙের সিংহ, তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা প্রতিমা, বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় পূজিতা হন দুর্গার দুই সখীও
মহানন্দার জলে তলিয়ে যায় ইটাহারের জমিদারবাড়ি, তারপর ভূপালপুরের রাজপ্রাসাদে শুরু হল দুর্গাপুজো

Read more Articles on
Share this article
click me!