লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দলের মধ্যে তাঁর অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল দলের মধ্যে। তিনি মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দলের মধ্যে তিনি অন্তর্ঘাত করতে পারেন বলেও সন্দেহ ছিল অনেকের । তার উপরে নির্বাচনের আগে মুকুল রায় তাঁর বাড়িতে যাওয়ায় জল্পনা তুঙ্গে উঠেছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, সব্যসাচীর বিজেপি-তে যোগদান সময়ের অপেক্ষা।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য তৃণমূল ছাড়েননি সব্যসাচী দত্ত। দল তাঁর গতিবিধি নজরেও রাখছিল। শেষ পর্যন্ত ভোটের ফল বেরোতে দেখা গেল, সব্যসাচীর নিজের বিধানসভা রাজারহাট-নিউটাউন থেকে ভাল লিড পেয়েছেন দলীয় প্রার্থী। কিন্তু যাঁরা সব্যসাচীকে কটাক্ষ করেছিলেন, সেই খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর মতো মন্ত্রীরা নিজের বিধানসভাতেই পিছিয়ে পিছিয়ে পড়েছেন। এমন কী, সব্যসাচীর নিজের এলাকা বিধাননগরে পিছিয়ে রয়েছেন আর এক মন্ত্রী সুজিত বসুও।
স্বভাবতই ভোটের ফল বেরনোর পরে সুযোগ পেতেই তাঁদের বিঁধলেন সব্যসাচী। এ দিন বারাসত আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে সরব হন সব্যসাচী। ভোটের আগে তাঁকে পচা আলু বলে সব্যসাচীকে কটাক্ষ করেছিলেন দলেরই কেউ কেউ। তাঁদের জবাব দিয়ে সব্যসাচী বললেন, "কেউ কেউ বলেছিলেন পচা আলুকে সরিয়ে রাখতে হয়। তখন মনে হয়েছিল, আমি হয়তো পচা আলু। ফল বেরোতেই দেখলাম, পচা আলু উতরে দিল, আর যারা টাটকা আলু, তারা হড়কে গেল। পচা আলু দিয়ে তরকারি করলে তার স্বাদটা ভাল হয়। যাঁরা বলেছিলেন, তাঁরা বোধহয় বুঝতে পারেননি।"
নিজের বিধানসভা রাজারহাট-নিউ টাউনে ২৩ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন সব্যসাচী। সব্যসাচী বিধাননগরের মেয়র। সেখানকার বিধায়ক দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। দু' জনের বিবাদ দলের বাইরেও অজানা নয়। সব্যসাচী নিজের এলাকায় এগিয়ে থাকলেও বিধাননগর থেকে সাড়ে ১৮ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়েছেন সুজিত বসু। এমন কী, নিজের ওয়ার্ডেই পিছিয়ে রয়েছেন সুজিত বসু। যদিও মঙ্গলবারই মন্ত্রিসভায় সুজিতের দায়িত্ব বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়েও দলকে বিঁধতে ছাড়েননি বিধাননগরের মেয়র, "যেখানে আমি থাকি, সেখানে উনি সাড়ে ১৮ হাজার ভোটে হেরেছেন। আর নিজের ওয়ার্ডেও হেরেছেন। সেই জন্য ওনার প্রমোশন হল।"
সুজিত বসুকে কটাক্ষ করে সব্যসাচী বলেন, "মানুষ রায় দিয়েছে। শুধু সাইরেন বাজিয়ে ঘুরে বেড়ালে যা হয়, তাই হয়েছে। উনি তো বারাসত লোকসভার দায়িত্বে ছিলেন। নিজের ওয়ার্ডেও জিততে পারেননি। যিনি নিজের ওয়ার্ডে জিততে পারেন না, তিনি বাংলার নেতা হন, এটাই এখন ট্রেন্ড। আগামী দিনে উনি সর্বভারতীয় নেতা হবেন।"
কিছুদিন আগেই নিজের ওয়ার্ড অফিসে মুকুল ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেন সব্যসাচী। সেখানেই গঠিত হয় নবজাগরণ নামে একটি মঞ্চ। নতুন এই মঞ্চ নিয়ে সব্যসাচী বলেন, "যাঁরা নির্যাতিত, অবহেলিত, পুলিশের দ্বারা আক্রান্ত, তাঁদের পাশে আমরা দাঁড়াব।" সব্যসাচী অবশ্য বলেন, পুলিশ উপর মহলের নির্দেশেই কাজ করে। নবজাগরণ নিয়ে তাঁর আরও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, "আগে আগে দেখিয়ে হোতা হ্যাঁয় ক্যায়া।"