চির ঘুমের দেশে শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। অনেকদিন আগেই চলে গিয়েছেন দেশের কিংবদন্তি শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্য়ায়, তবুও আজও সব স্মৃতি টাটকা। ঝগড়া সত্ত্বেও শুধু হেমন্তের জন্যই গান গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
চির ঘুমের দেশে শিল্পী লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)। অনেকদিন আগেই চলে গিয়েছেন দেশের কিংবদন্তি শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্য়ায় (Hemanta Mukherjee )। তবুও আজও সব স্মৃতি টাটকা। ঝগড়া সত্ত্বেও শুধু হেমন্তের জন্যই গান গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
বাংলা গানের দুনিয়ায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তখন ঋতুরাজ বসন্ত
বাংলা গানের দুনিয়ায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তখন ঋতুরাজ বসন্ত। গ্রামোফোন কোম্পানিতে গান শেখানোর পাশাপাশি গান গাইছেন। একটি দুটি বাংলা ছবিতে সুর করার জন্য ডাকও পাচ্ছেন তখন। দেশ তখন সবেমাত্র স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রায় কম বেশি সব জায়গাতেই তখন তাঁর গান শোনা যাচ্ছে। তখন রেডিওতে গাওয়া দেশ হামারা হিন্দুস্থান, সব সে সুন্দর হিন্দুস্থান প্রায় ভেসে আসত বেতার তরঙ্গে। তখন ভাড়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন টালিগঞ্জের আজাতগড়ের নিজের একতলা বাগানবাড়িতে। এহেন সময়েই তার ডাক আসে বোম্বে থেকে। ডেকে নেন পরিচালক হেমন্ত গুপ্ত। ফিল্মিস্থান স্টুডিওতে তখন আনন্দমঠ ছবির পরিচালক তিনি। আর তার ভারি ইচ্ছে সেই ছবিতে সুর দিক খোদ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। বলাইবাহুল্য এমন প্রস্তাব যে ফেলাও যায় না। এদিকে খাঁটি বাঙালিয়ানা-শহর কলকাতা ছেড়ে যেতে মনও যে চাইছে না । তখন আর কী করা, হেমেন গুপ্তের সঙ্গে কথা বললেন হেমন্ত।
'১৯৫১ সালের মার্চে চলে গেলাম বম্বে'
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, 'হেমেনদাকে বললাম যাব, তবে একটা ছবির কাজযে বাকি রয়ে গেল। অজয় করের জিঘাংসা ছবির মিউজিক দিচ্ছি। গান গুলি হয়ে গিয়েছে। বাকি শুধু ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক।' এই শুনে হেমেন গুপ্ত বললেন, 'ছবি তো এখনও শেষ হয়নি। তবে শেষ হোক, তখন এক ফাঁকে এসে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করে দিয়ে যেও। এখন চল।' এরপর আর কী, হেমন্ত জানালেন, '১৯৫১ সালের মার্চে চলে গেলাম বম্বে। তুলারাম জ্বালের ফিল্মিস্থান দেখলাম। জালান নামেই মালিক। আসলে সামলাচ্ছেন শশধর মুখোপাধ্যায়। তিনিই সর্বময় কর্তা। বিরাট ব্যক্তিত্ব। ওকে দেখলে কুঁকড়ে যেত সবাই। সেখানেও ব্যতিক্রম আমি। ওরা কাজে ডেকেছেন। হলে হবে, না হলে ফিরে যাব। আর আমার তখন কলকাতার বাজার বেশ ভালোই' বলে জানালেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এরপরেই আসল মোড়।
'গানটা গাওয়াতে হবে লতাকে দিয়ে, এদিকে শশধর বললেন লতা ফিল্মিস্থানে আসবে না, ও অনেক ব্যাপার'
শশধর মুখোপাধ্যায় হেমন্তকে বললেন, 'তুমি তো ভাড়া খাটা মিউজিক ডিরেক্টর।ফুরনের কাজ করে এসেছো। ফিল্মিস্থানের নিয়ম একটু অন্যরকম। আমরা বাঁধা লোক রাখি। বাঁধা মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করবে। তার জন্য মাস মাইনে পাবে হাজিরা দিতে হবে অফিসের মতোই। ১১ টা থেকে ৫ টা, তারপর ছুটি। এদিকে চাকরি তো এর আগে করিনি। তাই নতুন লাগল। তারপরেও ভাবলাম, হোক না একটা নতুন অভিজ্ঞতা। দেখাই যাক না কেমন লাগে। এরপরেই শশধর মুখোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। যাইহোক আনন্দ মঠ ছবির কাজ শুরু হল। বন্দে মাতরম গানের সুর করতে হবে। গানটা গাওয়াতে হবে লতাকে দিয়ে। কথা বললাম শশধরের সঙ্গে। তিনি বললেন লতা ফিল্মিস্থানে আসবে না। ও অনেক ব্যাপার । তুমি অন্য কাউকে দিয়ে গাওয়াও। চিন্তুায় পড়ে গেলাম, লতাকে দিয়ে এইগানটা না গাওয়াতে পারলে সবই যে মাটি। মনে মনে একটা প্ল্যান করলাম। শশধরকে বললাম, আমি যদি লতাকে আনতে পারি , আপনাদের কোনও আপত্তি আছে। উনি বললেন, না। উনি এলে বরং ভালই হয়। '
আরও পড়ুন, 'জনপ্রিয় হিন্দি সিরিয়ালের গানে লতাজির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়', মনের দুয়ারে জিৎ গাঙ্গুলি
'তখন লতা নানাচকে একটি একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত, সোজা চলে গেলাম লতার কাছে'
হেমন্ত এরপর একদিন লতার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। হেমন্তের কথায়, 'তখন লতা নানাচকে একটি একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। সোজা চলে গেলাম লতার কাছে। খুব আদর আপ্যায়ন করল। মুগ্ধ হলাম ওর ব্যবহারে। প্রথম আলাপেই খুব অন্তরঙ্গ হয়ে উঠলাম। তারপর আমার প্রস্তাব পেশ করলাম। এরপর শতা শুনে বলল, ফিল্মিস্থানে আমার সঙ্গে ঝগড়া। আমি ওখানে গাইবো না ঠিক করেছি। কিন্তু শুধু আপনার জন্যই গাইব। জিজ্ঞাসা করলাম কত টাকা। ও বলল , শুধু আপনার জন্যই গাইছি। পয়সার জন্য নয়। ফিল্মি স্থানে এবিষয়ে কথা বলার দরকার নেই। আমার সুরে প্রথম রেকর্ড হল ফিল্মি স্থানে।' তারপর আর কী, বাকিটা ইতিহাস।
আরও পড়ুন, 'ওনার গান শুনেই বড় হয়েছি', লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে স্মৃতির শহরে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী
আরও পড়ুন, 'উনি স্বয়ং মা সরস্বতী', লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ হৈমন্তি শুক্লার