শার্লক হোমসের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যোমকেশ, ফেলুদা নয়! আমার প্রতিদ্বন্দ্বী বেনেডিক্ট কামবারব্যাচ: ঋষভ

বাঙালি গোয়েন্দারা বাংলার তারকাদের দখলে। ঋষভ বসু তাই বিদেশি গোয়েন্দা? সায়ন্তর ঘোষালের আগামি ছবির শার্লক হোমস ওরফে ‘সরলাক্ষ হোমস’ তিনি! প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যোমকেশ, ফেলুদা? উপালি মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্নের জবাবে অকপট সিরিজের ‘শ্রীকান্ত’
 

Web Desk - ANB | Published : Oct 27, 2022 10:45 AM IST

বাঙালি গোয়েন্দারা বাংলার তারকাদের দখলে। ঋষভ বসু তাই বিদেশি গোয়েন্দা? সায়ন্তর ঘোষালের আগামি ছবির শার্লক হোমস ওরফে ‘সরলাক্ষ হোমস’ তিনি! প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যোমকেশ, ফেলুদা? উপালি মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্নের জবাবে অকপট সিরিজের ‘শ্রীকান্ত’

প্রশ্ন: আগামি তিন মাস আপনার ঠিকানা লন্ডন?
ঋষভ: (হেসে ফেলে) হ্যাঁ, সে রকমই হতে চলেছে। সায়ন্তন ঘোষালের পরের ছবি ‘সরলাক্ষ হোমস’-এ আমি নামভূমিকায়। শার্লক হোমসের জুতোয় পা গলাচ্ছি।
প্রশ্ন: হোমসের বাড়িতে শ্যুটিং হবে?
ঋষভ: যত দূর শুনেছি, হোমসের বাড়িতে শ্যুট হবে না। তবে বাড়ির আশপাশে, বেকার স্ট্রিটে শ্যুট হবে। এটাই মস্ত পাওনা।
প্রশ্ন: যখন শুনলেন আপনি শার্লক হোমস...?
ঋষভ: বিশ্বাস করতে পারিনি। বিরাট কোহলি যেমন ইনিংস খেলার পরেও বুঝে উঠতে পারছিলেন না দীপাবলিতে ভারতীয় তিনি কত বড় উপহার দিলেন, আমারও ঠিক সেই অবস্থা। কী ভাবে আমায় এই চরিত্রের জন্য বাছা হল, কী কারণে আমি চূড়ান্ত নির্বাচিত হলাম— সব ঘেঁটে ‘ঘণ্ট’। সব থেকে মজা কী জানেন? যাদবপুরে ফিল্ম স্টাডিজ নিয়ে পড়ার সময় আমার স্নাতকোত্তর পেপার ছিল শার্লক হোমস! সেই পেপার এখন যাদবপুরে পড়ানো হয়।


প্রশ্ন: অর্থাৎ, আপনি শার্লকে মাস্টার?
ঋষভ: মাস্টার কিনা জানি না, তবু বিদেশি গোয়েন্দাকে নিয়ে পড়ার অনেক সুযোগ পেয়েছি। আর্থার কোনান ডয়েল ছাড়াও অন্যান্য সাহিত্যিকদের লেখাও পড়েছি। রাজশেখর বসু প্রথম মজা করে শার্লক হোমসের নাম দিয়েছিলেন সরলাক্ষ হোমস। সেই নামেই আমার পরের ছবি। ওঁর সেই রম্য রচনাও পড়েছি। চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত এ ভাবেই সাহিত্যিককে সম্মান জানাচ্ছেন।
প্রশ্ন: এ বার নিজের চেহারা নিয়ে গর্ব হচ্ছে?
ঋষভ: বলতে পারেন। এত দিন সবার আমার চেহারায় বিদেশি ছাপ দেখতে পেতেন। অনেক চরিত্রে নির্বাচিত হয়ে বাদও পড়েছি। এ বার সেই গুণের জন্য এই চরিত্রে নির্বাচিত হলাম (হাসি)।
প্রশ্ন: বাংলার তাবড় তারকাদের হারিয়ে দিলেন...!
ঋষভ: কাউকে অসম্মান না করেই বলছি, আমি আর সায়ন্তনদা আলোচনা করছিলাম, বাংলার গোয়েন্দা গল্প এবং অভিনেতাদের অভিনয় যেন একপেশে হয়ে গিয়েছেন। সোনাদা, ফেলুদা, ব্যোমকেশ— সবাই যেন এক রকমের। অভিনেতাদের এতে কোনও দোষ নেই। তাঁরা গল্প এবং চিত্রনাট্য অনুযায়ীই কাজ করছেন। ব্যতিক্রম একেন বাবু। এক দম ভিন্ন ধাঁচের। বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকরসে ভরপুর। ভাল লাগে তাই দেখতে। হলিউড অভিনেতা বেনেডিক্ট কামবারব্যাচ যেমন তাঁর অভিনয় দিয়ে চেনা শার্লক হোমসকে ভেঙেচুরে একুশ শতকের অনুযায়ী গড়ে নিয়েছিলেন। আমারও সেটাই ধরার ইচ্ছে। 
প্রশ্ন: এই প্রথম এক জন বিদেশি গোয়েন্দা বাংলার মাটিতে পা রাখতে চলেছেন...!
ঋষভ: এই শার্লক হোমসের মধ্যে প্রচণ্ড বাঙালিয়ানা থাকবে। তাঁর সহকারী ওয়াটসহ এবং বাকি চরিত্ররাও তাই। তাছাড়া, ‘দ্য হাউন্ড অফ দ্য বাস্কারভিলস’ বিশ্ব সাহিত্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ রকম একটি সাহিত্যনির্ভর ছবিতে কাজ করতে পারাও ভাগ্যের কথা। সব মিলিয়ে আশা করছি দর্শকদের ভাল লাগবে।
প্রশ্ন: নিজেকে কী ভাবে তৈরি করছেন?
ঋষভ: শার্লক হোমস নামটা এত বড় যে ওঁর মাপে নিজেকে গড়ে নেওয়া অসম্ভব। আমি তাই ওঁকে আমার মধ্যে মিশিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি (হাসি)। ওঁকে আরও বাঙালি করে তোলার চেষ্টা করব। যাতে ব্যোমকেশ, ফেলুদার পরে বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা সরলাক্ষ হোমস হয়ে ওঠে। আর শার্লকের মধ্যে একটা পাহগলামি আছে। পরিচালক সায়ন্তন ওই কারণেই আমায় বেছেছেন। আমাকেও ওই দিকটাই তুলে ধরতে বলেছেন। শার্লক এই ছবিতে অনেক কমবয়সীও। 
 প্রশ্ন: আপনার ঠোঁটেও ও রকম পাইপ ঝুলবে!
ঋষভ: পাইপ নাও থাকতে পারে। সিগারেটও খেতে পারেন শার্লক। আবার কিছু নাও টানতে পারেন। গোয়েন্দার সবটাই ভীষণ রহস্যে মোড়া। এটাও না হয় রহস্যই থাক।
প্রশ্ন: একুশের শার্লকের নায়িকা রাজনন্দিনী পাল? 
ঋষভ: না না, শার্লক নারীবর্জিত। রাজনন্দিনী গল্পের অন্যতম একটি চরিত্র। অনন্ত এই গল্পে নেই।
প্রশ্ন: তার মানে ফ্র্যাঞ্চাইজি হচ্ছে?
ঋষভ: গোয়েন্দার উপরে গোয়েন্দাগিরি! প্রযোজনা সংস্থা এসকে মুভিজ শার্লক হোমসকে নিয়ে পাঁচটি ছবি করার কথা ভাবছে। পুরোটাই নির্ভর করবে প্রথম ছবির সাফল্যের উপরে। কারণ, একটা বড় ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন: ‘সরলাক্ষ’ ঋষভও চিন্তিত? 
ঋষভ: চিন্তিত ঠিক নই। একটু চাপ অনুভব করছি। ১৪ বছর পরিশ্রমের পরে এই জায়গায় পৌঁছেছি। গোয়ায় দক্ষিণী ছবির শ্যুটে গিয়েছি। সেখানে যখন সমুদ্র পাড়ে হাঁটছি, অনেক বাঙালি ‘শ্রীকান্ত’ বলে ডেকে সেলফি তুলেছেন। তখন মনে হয়েছে, আমার বিস্তার ঘটেছে। যার জোরে আমি শার্লক বা সরলাক্ষ। তাই এক দম শুরু থেকে শুরু করছি। মনে করছি, এটাই যেন আমার প্রথম কাজ। তা ছাড়া, বিপরীতে রাজনন্দিনী, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, গৌরব চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক, সাহেব চট্টোপাধ্যায়, শতাফ ফিগার। এঁদের সঙ্গে কোনও না কোনও সময় কাজ করেছি। অর্ণদা ওয়াটসনের ভূমিকায় অভিনয় করবেন। তাই কাজটা উপভোগ করেই করব।
প্রশ্ন: প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যোমকেশ, ফেলুদা, সোনাদা, একেন বাবু নাকি সায়ন্তনের গোরা? 
ঋষভ: সে ভাবে দেখলে কেউই নন। কারণ, পর্দায় এঁদের অভিনয় দেখেই অভিনয় করতে শিখেছি। সেটা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ই হোন বা সব্যসাচী চক্রবর্তী, আবীর চট্টোপাধ্যায়, টোটা রায়চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী। প্রত্যেকের কিছু না কিছু ছাপ আমার মনে পড়েছে। যেহেতু আমি বিদেশি গোয়েন্দা তাই আমার মতে প্রতিদ্বন্দ্বী বেনেডিক্ট কামবারব্যাচ বা রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। (হা হা হাসি)

Share this article
click me!