প্রকাশ্যে মতামত প্রকাশ করতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এবার আবার ও তসলিমা নাসরিনের এক পোস্ট ঘিরে তৈরি হল তুমুল বিতর্ক। 'সুগোল সুডোল ফার্ম স্তন দেখতে আমার খুব ভালো লাগে'- ফেসবুকে এই পোস্ট করার পর থেকেই শুরু হয়েছে শোরগোল। অবশেষে বিতর্কে মুখ খুললেন তসলিমা নাসরিন।
নিন্দুকদের 'থোড়াই কেয়ার' করেন তসলিমা নাসরিন, সাধারণত ভালোটাকে ভালো খারাপটাকে খারাপ বলতেই পছন্দ করেন তিনি। সে যে যাই ভাবুক না কেন তিনি তাঁর মত করেই নিজের মতামত পরোক্ষ করেন। তাই বিতর্ক কোনওভাবেই পিছু ছাড়ে না লেখিকার। এবার আবার ও বিতর্কে জড়ালেন তিনি। পুরুষ এবং নারীদের কাকে কী ধরণের পোশাক পড়লে ভালো লাগে সেই বিষয়েই ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন তসলিমা নাসরিন, যা নিয়ে নেটদুনিয়ায় শুরু হয়েছে তুমুল শোরগোল।
ফেসবুক পোস্টে ঠিক কী লিখেছিলেন তসলিমা নাসরিন?
'সুগোল সুডোল ফার্ম স্তন দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। মেয়েরা স্তন দেখানো, ক্লিভেজ দেখানো জামা পরলে বেশ লাগে দেখতে। সুদর্শন পুরুষেরা যেমন শর্টস পরলে বা সুঠাম বাইসেপ দেখানো স্লিভলেস টিশার্ট, বুকের লোম দেখানো ডীপ ভি নেক টিশার্ট পরলে দেখতে ভালো লাগে, তেমন মেয়েরা কিছুটা নিতম্ব ঝিলিক দেওয়া সুগঠিত পা দেখানো মিনি শর্টস পরলে, ক্লিভেজ বা অর্ধেক স্তন দেখানো, পেট এবং নাভি দেখানো ছোট টপ পরলে দেখতে বেশ লাগে। কিন্তু আজকাল কী যে হয়েছে, যার স্তন দেখতে ভালো নয়, স্যাগিং, বা প্রায় ফ্ল্যাট, তারাও, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক জগতের সেলেব্রিটিরা ডীপ ভি নেক ড্রেস পরেন। কেন যে পরেন, কী দেখাতে, বুঝি না। আর বিশাল বপুর কুচ্ছিত পুরুষগুলোও আঁটসাঁট জামা পরে চললেন। চোখ সরাতে পারলে বাঁচি। সমুদ্রতীরে, বা লেকের পাড়ে রোদ্রস্নান করতে থাকা সুইমিং কস্টিউম পরা ছেলে আর বিকিনি পরা মেয়ে দেখলে চোখের আরাম হয়। কিছুই না পরা ছেলে মেয়ে দেখলে তো মনের আরাম হয়। মানুষ যে প্রকৃতির সন্তান, তা তো নগরীর কোলাহলে অনেকটা ভুলতে বসেছি।'
আরও পড়ুন- আত্মহত্যা না খুন? মৃত্যুর ২০ ঘন্টা আগেই ফেসবুকের প্রোফাইল ও কভার ফটো বদল বিদিশার
আর এই পোস্টটিকে অনেকেই বডি শেমিংয়ের নজরে দেখেছেন। তসলিমার লেখার নীচে একজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যা বললেন, তা বডি শেমিং এর পর্যায়ে পড়ে। এমন কি যে বর্ণনায় আপনার কাছে সৌন্দর্য, সেগুলো তাঁদের না থাকলেও তাঁদের কাছে সেগুলো সৌন্দর্যপূর্ণ। তাঁদের সেগুলো শেয়ার করার আনন্দে আপনি চোখ ফিরিয়ে নিতে পারেন, সেটি প্রকাশ্যে লিখলে তাঁরা যে অপমানিত হয়, সে সংবেদনশীলতা আমাদের অবশ্যই থাকতে হবে।' সৌন্দর্য্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে নেটদুনিয়ায় চরম কটাক্ষের শিকার হতে হয় তাঁকে। তবে এখানেই থিম থাকেন নি লেখিকা, বুধবার রাতে আরও একটি পোস্ট করে নিন্দুকদের মোক্ষম জবাব দিয়েছেন তিনি।
জবাবে কী লিখেছেন তসলিমা নাসরিন?
'চিরকালই আমি পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট। সে কারণেই আমার শত্রুর শেষ নেই, সে কারণেই ফতোয়া, মিছিল, হুলিয়া জারি, দেশ থেকে বিতাড়ন, বই ব্যান। অন্য দেশেও একই পরিস্থিতি, গৃহবন্দিত্ব, রাজ্য থেকে বিতাড়ন, দেশত্যাগে বাধ্য করা। সর্বত্র ব্রাত্য আমি। বেড়াল ভালোবাসি বললে কিছু লোক ঘেউ ঘেউ করে উঠবেই, বলবে, আমি কুকুর ভালোবাসি না। সুতরাং কুকুরপ্রেমীরা এক জোট হয়ে আমার কুৎসা রটাবে। মেয়েদের শরীরের কোন অংশ, এবং পুরুষের শরীরের কোন অংশ দেখতে ব্যক্তি আমি পছন্দ করি, তা জানানোর পর কিছু লোক ঘেউ ঘেউ করে উঠেছে, কী পোশাক কাকে মানায়, কাকে মানায় না তা বলাতেও ঘেউ ঘেউ। এর মানে আমি নাকি মেয়ে বা পুরুষ যারা কোন পোশাক পরলে আমার চোখে মানায় না বলেছি, তাদের বডি শেমিং করছি।
আরও পড়ুন- ৩০- শে পা দিলেন মিঠাইয়ের 'সিডি বয়', ফ্যানেদের কথা রাখতে কী করলেন 'বং ক্রাশ', রইল ভিডিও
এরপর তিনি আরও লেখেন, 'আমরা তো দিন রাতই বলছি, এ পোশাক ওকে মানাবে, সে পোশাক তাকে মানাবে। মোটাদের জন্য এক ধরণের পোশাক, স্লিমদের জন্য আরেক। লম্বাদের জন্য এক রকম, বেঁটেদের জন্য আরেক। তরুণীদের জন্য এক রকম, বৃদ্ধাদের জন্য আরেক। আওয়ারগ্লাস বডি হলে এক রকম, না হলে আরেক রকম। এসব বিভিন্ন পোশাক-কোম্পানিগুলোই তৈরি করে। ফ্যাশান ম্যাগাজিনগুলো বলে দেয় কার কী পরা উচিত। আমার ব্যক্তিগত মত, স্তন স্যাগ করলে পুশ আপ পরলে ভালো, বুক খোলা ব্রাহীন ড্রেস না পরাই ভালো। আর স্যাগ না করলে খোলা রেখে চললেও ঠিক আছে। এ বডিশেমিং নয়, বরং বডিশেমিং থেকে মেয়েদের বাঁচানো। এর নাম সত্য কথন। চরম তসলিমাবিদ্বেষীরাও তা জানে। জানে কিন্তু মুখে উল্টোটা বলবে।
তসলিমা নাসরিনের কথায় 'এরা ঘেউ ঘেউ করবেই, বেঁটেকে বেঁটে কেন বললাম, লম্বাকে লম্বা কেন বললাম, মোটাকে মোটা কেন বললাম, স্লিমকে স্লিম কেন বললাম। সুন্দরকে সুন্দর কেন বললাম, তাহলে অসুন্দরদের তো বডি শেমিং করে ফেললাম, সুদর্শনকে সুদর্শন কেন বললাম, তাহলে তো কুদর্শনের বডি শেমিং করে ফেললাম, মোদ্দা কথা সর্বনাশ করে ফেললাম! আমি কাউকে বলিনি তুমি দেখতে বেঁটে তুমি লম্বা আলখাল্লা পরো না, আমি বলিনি, তোমার স্যাগিং স্তন, তুমি ভুলেও স্তন দেখানো ড্রেস পরো না। যার যে পোশাক পরার ইচ্ছে, সে পোশাক সে পরবে। আমার কোনটা ভালো লাগছে, কোনটা ভালো লাগছে না, তা আমি বলবো। এতে এত ঘেউ ঘেউ এর কী আছে? ওয়েট, যদি বলিই তোমাকে এই পোশাকে মানাচ্ছে না, যদি উপদেশই দিই এটা পরো না, ওটা পরো, তাতে এত বিচলিত হওয়ার কারণ কী? আমি তো দিন রাত মেয়েদের উপদেশ দিচ্ছি , হিজাব বোরখা পরো না, ওসব পোশাক নারী নির্যাতনের প্রতীক, ওসব পোশাক পরলে নিরেট যৌনবস্তু ছাড়া তোমার আর কোনও পরিচয় থাকে না। আমার উপদেশ কজন মেয়েই বা শুনছে! কিন্তু আমি তো সারা জীবনই এই উপদেশ দিয়ে যাবো, আমার এই মত আমি প্রকাশ করবোই, যতই আমাকে 'চয়েজ'বাদীরা গালি দিক।'
তবে কোনও নিন্দার যে ধার ধরেন না তিনি এদিনের পোস্টে সে কথা ও স্পষ্ট করেছেন লেখিকা। পোস্টটির শেষে তিনি লেখেন, 'সত্য কথন, বা ভিন্নমত কোনওকালেই সমাজের অধিকাংশ কূপমণ্ডুক সহ্য করতে পারেনি। আজ হঠাৎ কী ঘটে গেল যে সহ্য করবে? আমি আশাও করি না। বিরুদ্ধ স্রোতে আমি জীবন ভর চলেছি। অতীতে চলেছি, আজও চলছি, যতদিন বাঁচি চলবো। এ নিয়ে আমার কোনও দুঃখ নেই।'