আইএসএলের (ISL) ফিরতি ডার্বিতে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে (SC East Bengal) ৩-১ গোলে হারায় এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan)। দলের হয়ে হ্যাটট্রিক করে রাতারাতি হিরো হয়ে উঠেছেন কিয়ান নাসিরি (Kiyan Nassiri)। খোলামেলা সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন প্রসঙ্গে উত্তর দিলেন জামশিদ নাসিরি (Jamshid Nassiri) পুত্র।
কলকাতা ডার্বি (Kolkata Derby)বরবারই জন্ম দিয়েছে নতুন তারকার। ২০২১-২২ মরসুমে আইএসএলের (ISL 2021-22) ফিরতি ডার্বিও দেখল আরও এক তারকার জন্ম। ২১ বছরের কিয়ান নাসিরি (Kiyan Nassiri)। যিনি প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল তারকা জামশিদ নাসিরির (Jamshid Nassiri)ছেলে। শনিবার এসসি ইস্টবেঙ্গলের (SC East bengal)বিরুদ্ধে ম্য়াচের দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন কিয়ান। এটিই ছিল তার ডার্বি অভিষেক। কিয়ান মাঠে নামার সময় এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan) পিছিয়ে ১-০ গোলে। কিন্তু যখন মাঠ ছেড়েছেন তখন শুধু দলকে জয় এনে দেওয়া নয়, নিজেও হ্যাটট্রিক করে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন ইতিহাসের পাতায়। সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসাবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে হ্যাট্রিক ছাড়াও প্রথমবার কলকাতা ডার্বিতে খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক কখনও দেখেনি ভারতীয় ফুটবল। একইসঙ্গে ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে বাইচুং ভুটিয়া ও এডে চিডিদের সঙ্গে একই আসনে জায়গা করে নিয়েছেন কিয়ান নাসিরি। ডার্বিতে হ্যাটট্রিকের অভিজ্ঞতা, রাতাতারিত তারকা হয়ে ওঠে, আদর্শ ফুটবলার থেকে আগামি লক্ষ্য সবকিছু নিয়েই এটিকে মোহনবাগানের মিডিয়া টিমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খোলামেলা জবাব দিলেন কিয়ান নাসিরি।
ডার্বিতে গোল করার অভিজ্ঞতা-
'ডার্বিতে নেমে হ্যাটট্রিক করেছি এটা এখনও আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে। ভার্বিতেগোল করার স্বপ্ন সবারই থাকে। আমারও ছিল। তা সত্ত্বেও বলছি আমি মূলত উইঙ্গার ও স্ট্রাইকার, গোল করাটা আমার কাজ। সেটাই করেছি। ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না।'
হ্য়াটট্রিকের কোন গোলটি সেরা-
'তিনটি গোলের মধ্যে দ্বিতীয়টাই সেরা। কারণ ওই গোলেই আমরা এগিয়ে গিয়েছি। সবুজ মেরুন জার্সিতে জুনিয়র ডার্বিতে খেলেছি। কিন্তু সিনিয়র দলে প্রথম। ভেবেছিলাম এরকম একটা ম্যাচে আমি কী সুযোগ পাব? দল যখন পিছিয়ে তখন আমি নেমেছি। তবে আমার উপর কোনও চাপ ছিল না। গোল করব বলে ভেবে নামিনি। লক্ষ্য ছিল একটাই, তিন পয়েন্ট।'
ম্য়াচের পর সেলিব্রেশন-
'উৎসব হওয়ার মতো কিছু হয়নি। তাই সেরকম কেউ কিছু করিনি। ডার্বিতে জিতে অনেক রাতে হোটেলে ফিরে ডিনার করে সবার মতো আমিও শুয়ে পড়েছি। তবে সতীর্থ থেকে কোচ সকলেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ও ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।'
কোচ ও দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা-
'কোচ হিসাবে আমি তিনজনের কথা বলতে চাই যাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ বর্তমান কোচ ফেরান্দো, আন্তোনিও লোপেজ হাবাস এবং টিয়েন ল। আমাদের ড্রেসিংরুমে
সবাই আমাকে সবসময় নানাভাবে সাহায্য করেন। উৎসাহিত করেন। সেজন্যই আমি এই হ্যাট্রিক উৎসর্গ করতে চাই পুরো দলকে।'
বাবা কী বললেন-
'উৎসব হওয়ার মতো কিছু হয়নি। তাই সেরকম কেউ কিছু করিনি। ডার্বিতে জিতে অনেক রাতে হোটেলে ফিরে ডিনার করে সবার মতো আমিও শুয়ে পড়েছি। বাড়ির কারও সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। রবিবার মা ও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে বাবার সঙ্গে কথা হয়নি। বাবা মাঠে গিয়েছিলেন ট্রেনিং করাতে। আমার বাবার কোনও খেলা আমি দেখিনি। শুনেছি উনিও ডার্বিতে গোল করেছেন অনেক। বাবার সঙ্গে মাঠে প্র্যাকটিস করেছি। বাবা কখনও কোনও লক্ষ্য বেঁধে দেননি। উনি শুধু বলেন, “পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই।'
বাইচুং-চিডির সঙ্গে একই আসনে-
'শুনলাম কলকাতা ডার্বিতে আমি ছাড়া হ্যাটট্রিক করেছেন ভাইচুং ভুটিয়া ও এডে চিডি। ওরা দুজনেই তারকা ফুটবলার। ছোটবেলা থেকেই ওদের নাম শুনেছি। আমি তো একেবারেই জুনিয়র। ওদের কাছে পৌছতে পারলে ভাবব কিছু করেছি।'
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
'আমার এখন একটাই লক্ষ্য আরও বেশি সময় মাঠে থাকা। কোচের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে, তিনি ডার্বির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আমার উপর ভরসা রেখেছেন। সেজন্যই আমি গোল করতে পেরেছি। আমাদের দল অত্যন্ত শক্তিশালী। এখানে আমার মতো জুনিয়র ফুটবলারের সুযোগ পাওয়া কঠিন। এখানে থেমে থাকলে তো চলবে না। আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে। সুযোগ পেলেই দলকে সাহায্য করতে হবে।গোল করা লক্ষ্য তো থাকবেই। সেজন্যই আরও পরিশ্রম করে দলে জায়গা পেতে হবে।'
আইডল ফুটবলার-
'আমার আইডল এবং স্বপ্নের ফুটবলার লিওনেল মেসি। মেসির খেলা সুযোগ পেলেই দেখি। আমার হ্যাটট্রিক দেখে আই এস এলের আমার মতো জুনিয়র ফুটবলাররা যদি উদ্বুদ্ধ হয় তাহলে ভাল লাগবে।'