
কলকাতা ডার্বিতে (Kolkata Derby) গোলের স্বাদ রয়েছে তার রক্তে, তার জিনে। বড় ম্য়াচে গোলের মাহাত্ম্য কি তা শুনেছেন বাবার কাছ থেকে। কিন্তু ডার্বি অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করে যে নায়ক হয়ে উঠবেন তা হয়তো শনিবার মাঠে নামার মুহূর্তেও ভাবেননি তিনি। কিন্তু ইস্ট-মোহন ডার্বি বরাবরই জন্ম দিয়েছে নতুন তারকার। ২০২১-২২ মরসুমে আইএসএলের (ISL) ফিরতি ডার্বি দেখল আরও এক তারকার জন্ম। হ্যাটট্রিক করে এটিকে মোহনবাগানকে (ATK Mohun Bagan) জয় এনে দিলেন কিয়ান নাসিরর (Kiyan Nassiri)। যিনি কিনা জামশেদ নাসিরির (Jamshid Nassiri)পুত্র। বাবা দীর্ঘ দিন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলেছেন। লাল-হলুদের হয়ে অনেক ডার্বিতে গোল করে হয়েছেন নায়ক। লাল-হলুদের ইতিহাসে খেলে যাওয়া সেরা বিদেশীদের মধ্য অন্যতম জামশেদ নাসিরি। লাল-হলুদ অন্ত প্রাণ তার। সুযোগ থাকলেও কোনও দিন গায়ে তোলেননি সবুজ-মেরুণ জার্সি। শনিবাসরীয় ডার্বিতে সেই জামশেদ নাসিরি পুত্রের করা হ্যাাটট্রিকেই নিভল লাল-হলুদ মশাল। ডার্বির রঙ হল সবুজ-মেরুণ। ছেলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাবা। স্বপ্ন ছেলে খেলুক ভারতীয় ফুটবল দলের হয়ে।
শনিবার ডার্বির প্রথমার্ধের খেলার ফল ছিল গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধে ম্য়াচের ৫৬ মিনিটে সিডোয়েলের করা গোলে এগিয়ে যায় এসসি ইস্টববেঙ্গল। ৬১ মিনিটে টাংরির পরিবর্তে মাঠে নামেন নামেন কিয়ান নাসিরি। এই ৩০ মিনিটেই তারকা হয়ে উঠলেন কিয়ান। ম্য়াচের ৬৪ মিনিটে বাঁ-দিক থেকে প্রবীর দাসের ক্রস ক্লিয়ার করতে একেবারে ব্যর্থ হয় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ। বল চলে যায় নাসিরির পায়ে। দুর্দান্ত বাঁক খাওয়ানো শটে গোল করে মোহনবাগানকে সমতায় ফেরালেন নাসিরি। ৯০ মিনিটে খেলার ফল ছিল ১-১। ইনজুরি টাইমের ৯৩ মিনিটে কোলাসোর ক্রস থেকে ডেভিড উইলিয়ামসের হেডার পোস্টে লেগে ফিরে আসলেও, ফিরতি বল জালে জড়িয়ে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করলেন নাসিরি। তার এক মিনিটের মধ্যেই নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন নাসিরি ও দলের জয় ৩-১ গোলে নিশ্চিৎ করেন।
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ফুটবল খেলা শুরু করেন কিয়ান নাসিরি। বাবাই ছিলেন তার আদর্শ। বাবার মুখে শুনে বড় হয়েছেন কলকাতা ডার্বির আবেগ, উত্তেজনার কথা। মোহনবাগান অ্য়াকাডেমিতে অনুশীলন করেছেন। স্থানীয় স্তরের ফুটবলের পর ২০১৪ সালে প্রথম বাংলার অনুর্ধ্ব ১৪ দলে সুযোগ পান কিয়ান। ৫ ম্য়াচে করেছিলেন ৬ গোল। এরপর মহামেডান স্পোর্টিংয়ের অনুর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে খেলেছেন ছোটদের আইলিগে। ২০১৭-১৮ মরসুমে ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাবে যোগ দেন। কলকাতা লিগের নীচের ডিভিশনে খেলে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন এবং পরের রাউন্ডে উঠতে সাহায্য করেন। এরপর মোহনবাগানের অনুর্ধ্ব ১৯ দল থেকে ডাক পান সিনিয়র দলে। তখন থেকেই রয়ে গিয়েছেন সবুজ-মেরুণ ব্রিগেডে। এটিকের সঙ্গে দল যুক্ত হওয়ার পর তিনিও দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি করেন। এবার ডার্বি করে তুলল তাকে নায়ক। জামশেদ নাসিরির জন্য অনেকবার চোখের জল ফেলতে হলেও, মোহন সমর্থকদের এখন নয়ণের মণি কিয়ান নাসিরি।