আজকাল একটি ট্রেন্ড দেখছি বেশ কয়েকদিন ধরে। পুরুষ টিকটকারদের হিজরা বলে নেটিজেনরা। একটু নরম সরম ছেলে দেখলেই হঠাৎ মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, 'এমন মেয়েদের হাবভাব কেন তোর'। খুব সহজেই ইয়ার্কির ছলে এমন কথা বলে ফেলে সকলে। হিজরা অর্থাৎ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়া কি অপরাধের। নাকি মেয়ে হয়ে জন্মানোটা অপরাধের। তৃতীয় লিঙ্গের সমর্থনে কথা বললে তার গুরুত্ব নেই, মহিলাদের সমর্থনে বললে, ফেমিনিজম ঝান্ডা সরিয়ে রাখার কথা বলা। এক এমন বিতর্ক, যা অনন্তকাল ধরে চলবে। তার উপর সমকামীদের প্রসঙ্গ উঠলে তো আর কথাই নেই, তেড়ে আসে একাধিক বুলি।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সমকামীতা আর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবেনা ভারতে। ঋতুপর্ণও বোধহয় আশা করেছিলেন এমনটা দিন দেখে যেতে পারবেন, বা হয়তো জানতেন এই বদলটা ঘটবে। আদৌ কি ঘটল।
210
সমকামীতা বৈধ হওয়ার পর সারা দেশ রামধনুর রঙে রাঙা হয়েছিল। সেই রামধুনতে কোথায় যেন ঋতুপর্ণ ঘোষের অনেকটা অবদান রয়ে গিয়েছে।
310
'চিত্রাঙ্গদাঃ দ্য ক্রাউনিং উইশ'। ছবিটির শেষের লাইনটা আজও মনে পরে। 'মন যা চায়, তাই হয়ে ওঠো', কত মনই তো চায় ভালবাসার মানুষটার কাছে যেতে। সমাজের ভয়, হোমোফোবিয়ার ভয় আর যেতে পারল না।
410
কত মন চেয়েছিল পুরুষের খোলস ছেড়ে ঋতুপর্ণের মত মহিলার আবরণে ভাসতে। মন থেকে রাধা হয়ে উঠতে। ওনার অদম্য সাহসেই তা সম্ভব হয়েছিল।
510
সমাজে যখন পাঁচজনকে নিয়েই বাস, তাদের নানা কথা তো কানে আসবেই, তাই বলে নিজের ইচ্ছার গলা টিপে মেরে ফেলবে, তেমন মানুষ তো ঋতু ছিলেন না।
610
সেই হোমোফোবিয়া, হিজরে বলে ঠাট্টা করা, এই সমস্ত ট্যাবুকে সমাজের চোখে আঙুল দিয়েই সামনে এনে ফেলেছিলেন। চরম সত্য এটাই, প্রকৃতির বিরুদ্ধে কিছুই নয়, মানতে শিখতে হবে মানুষকে।
710
ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ভিডিও খুব ভাইরাল হয়েছে। সমকামী ছেলের বিয়েতে বাবা বলছেন, "আমার হোমোফোবিয়া ছিল। কিন্তু আমি তা কাটিয়ে উঠেছি। সন্তানের সুখটাই আমার কাছে সব।"
810
এমনই যদি প্রত্যেকে হত, তাহলে বোধহয় অসংখ্য মনে লিপ্ত থাকত না এই ইচ্ছে, মৃত্যুর পথ বেছে নিত না তরুণ-তরুণীরা, আপোস করতে হত না ওদের।
910
ঋতুপর্ণ ছিলেন সময়ের থেকে বহু এগিয়ে। যাকে বলে আহেড অফ ইটস টাইম। সমাজ কী বলছে, নিন্দার স্বর কতটা উঁচুতে তুলছে তাতে ভারি বয়ে গিয়েছে। ছবি তৈরির মাধ্যমে নিজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছিলেন তিনি।
1010
কেবল সমকামীতা বা তৃতীয় লিঙ্গ নয়, যৌনতা, নারীকেন্দ্রিক চরিত্রের কঠোর সত্যকে বারে বারে পর্দায় তুলে ধরেন ঋতুপর্ণ। সমাজকে চ্যালেঞ্জ করে নয়, কেবল সেই সত্যিটাকে সামনে রেখেছিলেন যা মানতে গেলে দাঁতে দাঁত চেপে ফেলত বাঙালি।