মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, গন্ধ শুঁকে করোনা ধরতে তৈরি হচ্ছে সারমেয় বাহিনী
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস যতই ছড়িয়ে পড়ছে, ততই অভাব দেখা দিচ্ছে টেস্ট কিট, অর্থাৎ কোভিডড-১৯ পরীক্ষা করার মতো উপকরণের। যদি পরীক্ষাই না করা যায় তাহলে নিরাময়ই বা করা যাবে কীকরে? এই আশঙ্কায় রাতের ঘুম উড়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মী থেকে প্রসাসনিক কর্তাদের। বিশ্বজুড়ে মানুষের এই বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এল মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু, কুকুর। এবার গন্ধ শুঁকেই করোনা রোগী যাচাই করতে তৈরি করা হচ্ছে সারমেয় বাহিনী।
amartya lahiri | Published : Mar 29, 2020 10:31 AM IST / Updated: Mar 29 2020, 09:14 PM IST
কুকুরের ঘ্রাণেন্দ্রিয় অত্যন্ত প্রখর তা সকলেরই জানা। এই বিষয়কে কাজে লাগিয়ে বিস্ফোরক খুঁজে বের করতে কাজে লাগানো হয় কুকুরদের। তাদের বলা হয় স্নিফার ডগ। এই ধারণাটিকে কাজে লাগিয়েই গন্ধ শুঁকে বিভিন্ন রোগ নির্ধারণ করতেও কাজে লাগানো হচ্ছে কুকুরদের।
'মেডিক্যাল ডিটেকশন ডগস' নামে লন্ডনের এক সংস্থা কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত করার জন্যও কুকুরের ঘ্রাণ শক্তিকে কাজে লাগাতে চাইছে। এই বিষয়ে তারা হাত মিলিয়েছে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন এলএসএইচটিএম-এর সঙ্গে।
এর আগে এই সংস্থা তাদের 'মেডিকেল ডিটেকশন কুকুর'গুলি ম্যালেরিয়া, ক্যান্সার এবং পার্কিনসনস ডিসিজ -এর মতো রোগ গন্ধ শুঁকে নির্ধারণ করার প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রতিটি রোগ মানবদেহে আলাদা আলাদা গন্ধ তৈরি করে, এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই তারা গবেষণা চালাচ্ছে। আর তার থেকেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সনাক্ত করতেও কুকুরদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভাবনা এসেছে।
তত্ত্বগতভাবে, তাঁরা নিশ্চিত, কুকুররা কোভিড -১৯ সনাক্ত করতে পারবে। কারণ, শ্বাসকষ্টের অন্যান্য রোগগুলির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে মানবদেহের স্বাভাবিক গন্ধ বদলে যায়। কোভিড -১৯'এর ক্ষেত্রেও এমনটাই হওয়ার 'খুব উচ্চ সম্ভাবনা' রয়েছে। শুধু তাই নয়, কুকুররা মানবদেহের তাপমাত্রায় সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলিও সনাক্ত করতে পারে। কাজেই কোনও ব্যক্তির জ্বর রয়েছে কিনা তা মুহূর্তে ধরে ফেলতে পারে। যা কোভিড-১৯ রোগের অন্যতম প্রধান উপসর্গ।
কীভাবে রোগীদের থেকে ভাইরাসের গন্ধটি নিরাপদে সংগ্রহ করা যায়, এবং কুকুরদের সামনে তা তুলে ধরা যায়, আপাতত সেই বিষয়টিই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের লক্ষ্য এমনকী, যেসব কোভিড-১৯ আক্রান্তদের দেহে সংক্রমণের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না তাদেরও গন্ধ শুকেই যাতে কুকুররা ধরে ফেলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। এতে করে কাদের পরীক্ষা করার সত্যিই প্রয়োজন, তা সহজে ধরা যাবে।
'মেডিকাল ডিটেকশন ডগস' সংস্থার প্রধান ক্লেয়ার গেস্ট-এর দাবি, এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুত ও কার্যকর হবে এবং এর জন্য কোনও চিকিৎসা সরঞ্জামও লাগবে না। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে এখন সব দেশেরই চিকিৎসা পরিষেবা সীমিত বলে মনে হচ্ছে। তাই এই বিষয়টি সফল হলে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অনেকটাই অগ্রসর হওয়া যাবে।
এলএসএইচটিএমের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জেমস লোগান জানিয়েছেন, কুকুররা 'একেবারে নির্ভুলভাবে' ম্যালেরিয়া রোগী সনাক্ত করতে পারে। এই ক্ষেত্রে তাদের নির্ণয়-এর মান 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের উপরে'ই রয়েছে। কাজেই এই গবেষণা সফল হবে বলেই আশা করছেন তাঁরা।
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়-এর গবেষক স্টিভ লিন্ডসে জানিয়েছেন, ছয় সপ্তাহ আগে থেকেই 'মেডিক্যাল ডিটেকশন ডগস' দের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। এই পরীক্ষামূলক প্রশিক্ষণ সফল হলে, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের দ্রুত সনাক্ত করার জন্য বিমানবন্দরগুলিতে ওই কুকুরগুলি মোতায়েন করা যেতে পারে।