কোন কোন মাঠে খেলা হবে বিশ্বকাপের ম্যাচ - চিনে নিন ১১টি স্টেডিয়াম
আর এক মাসও বাকি নেই আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৯-এর। এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজিত হচ্ছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস-এ। আগামী ৩০ মে তারিখে ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়ে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। চলবে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। এই দেড় মাস ব্যপী প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য মোট ১১টি ক্রিকেট স্টেডিয়াম বেছে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপের পিচে বল পড়ার আগে জেনে নেওয়া যাক এই ১১টি কেন্দ্র সম্পর্কে।
ব্রিস্টল ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ব্রিস্টল: এই স্টেডিয়ামে ১৯৮৩ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ১৬টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্য়াচ খেলা হয়েছে। একটি দিন রাতের ম্যাচ-সহ বিশঅবকাপের মোট ৩টি ম্যাচ হবে এই মাঠে। রামমোহন মোহন রায়ের স্মৃতি বিজড়িত শহরের মাঠে হওয়া মোট ৬টি শতরানের ৩টিই ভারতীয়দের - ১টি রাহুল দ্রাবিড়ের করা, অপর ২টি সচিন তেন্ডুলকারের ব্যাট থেকে এসেছে। ইংল্যান্ডের অন্যান্য মাঠের তুলনায় এই ১৭,৫০০ দর্শকাসনের মাঠের বাউন্ডারির পরিধি বড় হলেও সাম্প্রতিককালে বেশ বড় রান উঠতে দেখা গিয়েছে। আগের বছরই ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ইংরেজরা ৩৬৯ রান তুলেছিল। ৫৭ বলে শতরান করেছিলেন মইন আলি।
কাউন্টি গ্রাউন্ড, টন্টন: সমারসেট কাউন্টিকর ঘরের মাঠে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ৩টি ম্য়াচ হবে। এখনও পর্যন্ত এই মাঠে মাত্র ৩টিই ওডিআই খেলা হয়েছে। শেষটি হয়েছিল ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা। সেই ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে আছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ১৮৩ রানের ইনিংসের সৌজন্যে। তিনি ছাড়া রাহুল দ্রাবিড় ও ডেভিড গাওয়ার এই মাঠে শতরান করেছেন। দর্শক আসন রয়েছে ১২,৫০০।
হেডিংলে, লিডস: ১৯৭৩ সালে এই মাঠে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্য়াচ খেলা হয়েছিল। তারপর থেকে মোট ৪১টি ম্য়াচ হয়েছে। এবারের বিশ্বকাপের মোট ৪টি গ্রুপ ম্য়াচ আয়োজিত হবে লিডসে। এই মাঠে এক ইনিংসে যেমন সর্বোচ্চ ৩৩৯ রান উঠেছে, আবার সর্বনিম্ন ৯৩ রানেও ইনিংস গুটিয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সনৎ জয়সূর্য করেছিলেন ১৫২ রান। এটিই হেডিংলে-তে সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত রানের ইনিংস।
রোজ বোল, সাউদাম্পটন: ভারতের দুটি ম্যাচ-সহ বিশ্বকাপের মোট ৫টি গ্রুপ ম্য়াচ হবে এই স্টেডিয়ামে। ২০০৩ থেকে শুরু করে এই মাঠে মোট ২২টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়েছে। এই মাঠে এক ইনিংসে ৩৫৯ রান হল সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, আর ৩০৬ হল সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। দুটিই রয়েছে কিউইদের ঝুলিতে। ৩৫৯ রান তোলা ম্যাচে মার্টিন গাপ্টিল করেছিলেন অপরাজিত ১৮৯। সেটি রোজ বোলে সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত রানের ইনিংস। এই মাঠে আগামী ৫ জুন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ২২ জুন আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বিরাট-বাহিনী। কিন্তু সাউদাম্পটনে ভারত ৩টি ওডিআই খেলে জিতেছে মাত্র ১টিতে, বাকি দুটিতেই হেরেছে। দর্শকাসন ১৫,০০০।
ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহাম: একদিনে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলগত রানের ইনিংসের রেকর্ড রয়েছে এই মাঠেই। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড ৫০ ওভারে ৪৪৪ রান তুলেছিল। আবার ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৫০ রান তাড়া করে ৪৪ ওভারেই ম্য়াচ জিতেছিল ইংল্যান্ড। কাজেই এই মাঠে যে বড় রানের খেলা হবে তা বলাই বাহুল্য। ১৯৭৪ সাল থেকে মোট ৪২টি ওডিআই হয়েছে এই মাঠে। এবারের বিশ্বকাপে ৫টি ম্য়াচ হবে নটিংহামে। যারমধ্যে ১৩ জুন তারিখে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। দর্শকাসন ১৭,৫০০।
রিভার সাইড গ্রাউন্ড, চেস্টার লে স্ট্রিট: ডারহাম কাউন্টির ঘরের মাঠেও এবারের বিশ্বকাপের ৩টি গ্রুপ ম্যাচ হওয়ার কথা। এখনও পর্যন্ত ১৫টি ওডিআই খেলা হয়েছে এখানে। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড ৩০৭ রান তুলেছিল, যা এই মাঠে সর্বোচ্চ রান। ব্যক্তিগত র্বোচ্চ রানের স্কোর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাহেলা জয়বর্ধনের ১২৬। এই স্টেডিয়ামের দর্শকাসন ২০,০০০।
সোফিয়া গার্ডেন্স, কার্ডিফ: কার্ডিফের এই মাঠে বহু আকর্ষণীয় ওডিআই ম্যাচ খেলা হয়েছে। ২০০৫ সালে এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৫ উইকেটে স্মরণীয় জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এখনও পর্যন্ত ২৪টি একদিনের ম্যাচ হয়েছে সোফিয়া গার্ডেন্সে। এই মাঠেও একটি বিশ্বকাপের দিন-রাতের ম্যাচ হবে। তাছাড়া আরও তিনটি গ্রুপ ম্যাচে খেলা দেওয়া হয়েছে। এই মাঠে সর্বোচ্চ রানের মালিক কিন্তু ভারতীয় ওপেনার শিখর ধাওয়ান। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফঅরিকার বিরুদ্ধে তিনি ১১৪ রান করেছিলেন। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এখানে রবীন্দ্র জাদেজা ২৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেছিলেন। যা সোফিয়া গার্ডেন্সে সেরা বোলিং-এর রেকর্ড। দর্শকাসন রয়েছে ১৫, ৬৫০টি।
দ্য ওভাল, লন্ডন: লন্ডনের ঐতিহ্যশালী কেআইএ দ্য ওভাল স্টেডিয়ামেই শুরু হচ্ছে এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এছাড়া ২৫, ৫০০ দর্শকাসনের এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের আরও ৪টি অর্থাত মোট ৫টি খেলা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ৯ জুন ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্য়াচও। ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ৩৯৮ রান করেছিল। এটিই এই মাঠে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ক্যারিবিয়ান ওপেনার এভিন লুইস (১৭৬*)-এর ঝুলিতে। সাম্প্রতিক কালে কিন্তু ওভালে বেশ বড় বড় রানের ম্যাচ হতে দেখা গিয়েছে।
এজবাস্টন, বার্মিংহাম: এখনও পর্যন্ত মোট ৫৯টি ওডিআই খেলা হয়েছে এই মাঠে। ২০১৫ সালে কিউইদের বিরুদ্ধে এখানে ৪০৮ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। যা এই মাঠে সর্বোচ্চ দলগত রান। সাম্প্রতিক কালে এই মাঠে বেশ কিছু বড় রানের ম্যাচ দেখা গিয়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপের ৪টি গ্রুপ ম্যাচ এই মাঠে দেওয়া হয়েছে। ২৫,০০০ দর্শকাসনের এই স্টেডিয়ামে হবে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালও। ৪টি গ্রুপ ম্যাচের মধ্য়ে আগামী ৩০জুন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং ২ জুলাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই মাঠেই খেলবে ভারত। এর আগে এই মাঠে ৮টি ম্যাচ খেলে ভারত মাত্র ১বার পরাজিত হয়েছে।
ওল্ড ট্রাফোর্ড, ম্যাঞ্চেস্টার: এই মাঠে কিন্তু বেশি রান ওঠে না। এইবারের বিশ্বকাপে প্রথম সেমিফাইনাল-সহ মোট ৬টি ম্যাচ খেলা হবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচ অর্থাত ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ হওয়ার কথা এই মাঠেই। রাজনৈতিক কারণে ১৬ই জুনের সেই ম্যাচটি ঘিরে অবশ্য এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। পাক ম্য়াচ ছাড়াও ২৭ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও এই মাঠে খেলবে ভারত। দর্শকাসন ২৬,০০০।
লর্ডস, লন্ডন: লর্ডস নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল যেই মাঠে হয়েছিল এইবারের বিশ্বকাপের ফাইনালও সেই মাঠেই হবে। ২৮,০০০ দর্শকাসনের এই মাঠে ফাইনাল ছাড়াও আরও ৪টি ম্যাচ খেলা হবে। তবে ভারতের একটিও ম্যাচ এই মাঠে পড়েনি।