Sarat Chandra Chattopadhyay: নারী-পুরুষ চরিত্র থেকে সামাজিক প্রেক্ষাপট শরৎচন্দ্রের কলমের অনন্য ১০ টি রূপ
বাংলার সাহিত্যের কিংবদন্তি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি আপামর বাঙালির 'কথাশিল্পী'। নারী-পুরুষ চরিত্র বা সামাজিক প্রেক্ষাপট রচনা শরৎচন্দ্রের জুড়ি মেলা ভার। জানুন শরৎচন্দ্রের জন্মবার্ষিকীতে ১০ শরৎ-কাহিনী ।
Riya Dey | Published : Sep 15, 2021 1:00 PM IST / Updated: Sep 16 2021, 01:04 AM IST
নারী চরিত্র বারবার অনন্যরূপে ধরা দিয়েছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কলমে। সামাজিক সমস্যাগুলিকে খুব সাবলীল ভাষায় তুলে ধরার ক্ষমতা রাখতেন কিংবদন্তি শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, খুশি-বেদনাকে সহানুভূতির রসে কাব্যয়িত করার ক্ষমতা রাখতেন বলেই তিনি কথাশিল্পী। জীবনের ২২ বছর ধরে মোট ৩০টি উপন্যাস লিখেছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
জীবনের প্রথম উপন্যাস 'বড়দিদি' ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাহিত্য জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে উঠে আসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম। এই উপন্যাসে আছে মোট ১০ টি পরিচ্ছেদ। গল্পের পটভূমি শরৎচন্দ্রের বাল্যকালের বন্ধু সাহিত্যিক সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় শরৎচন্দ্রের অনুমতিতে বড়দিদি উপন্যাসটি টুকে নিয়ে একটি কপি নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন।
ভারতবর্ষ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আর একটি জনপ্রিয় উপন্যাস 'বিরাজ বউ'। নীলাম্বরের স্ত্রী বিরাজমোহিনীর জীবন সংগ্রামের চিত্র প্রস্ফুটিত হয়েছিল এই উপন্যাসে।
'পরিণীতা' উপন্যাসের ললিতা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে সৃষ্ট নারী চরিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। বিংশ শতাব্দীর প্রথম সময়ের কলকাতার পটভূমিতে উপন্যাসটি লিখেছিলেন শরৎচন্দ্র। পরিণীতার গল্প অবলম্বনে বাংলা-হিন্দি ও তামিল তিনটি ভাষায় তৈরী হয়েছে সিনেমা।
'পল্লীসমাজ' উপন্যাসটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সৃষ্ট একটি সামাজিক উপন্যাস। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থাকে এক জ্বলজ্যান্ত রূপ দান করেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যয় এই উপন্যাসের মাধ্যমে। এই উপন্যাসে মোট ১৯টি পরিচ্ছেদ আছে।
'দেবদাস' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত এমন একটি জনপ্রিয় উপন্যাস যা নিয়ে লেখক নিজেই দ্বিধা বোধের কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর পর উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিলেন। পার্বতী-দেবদাসের প্রেম বিরহের এক অপূর্ব রূপায়িত করেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
১৯০০ শতাব্দীর প্রথম দশকের বাংলা সমাজের পটভূমিকায় রচিত করেছিলেন জীবনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস 'চরিত্রহীন'। সাবিত্রী, কিরণময়ী, সুরবালা ও সরোজিনী এই চার নারী চরিত্রের জীবনে তিনজন পুরুষের ভূমিকা কাব্যয়িত হয়েছে এই উপন্যাসে।
নারী চরিত্র বরাবর ভিন্ন রূপ নিয়েছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কলমে। 'দত্তা' উপন্যাসের বিজয়া তার মধ্যে অন্যতম। বনমালীবাবুর জমিদারি দেখাশোনার নাম তার কন্যা বিজয়াকে ব্যবহার করেছেন বনমালীবাবুরই বন্ধু। বন্ধুত্বের আড়ালে থাকা সুবিধাবাদী মানসিকতাকে বাস্তবায়িত করেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
'দেনা পাওনা' উপন্যাসটিতে ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার নারীদের প্রতি অবিচার ও পণপ্রথার কদর্য রূপকে প্রাণ দান করেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেও কলম তুলেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক অসাধারণ বিপ্লবী সব্যসাচী ও তার সাথীদের সংগ্রামের কাহিনীকে কেন্দ্র করে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা করেছিলেন 'পথের দাবি'।
শরৎচন্দ্রের পারিবারিক উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম 'বৈকুন্ঠের উইল'। সম্পত্তির উইল পরিবারে কিভাবে টানাপোড়েন ডেকে আনে তার চিত্রকেই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন এই উপন্যাসে।
ভারতীয় সমাজ ও নারী-পুরুষ চরিত্রকে সম্পূর্ণ নিজস্ব আঙ্গিকে সাহিত্যের ভাবাবেগে অঙ্কন করেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শরৎচন্দ্রের উপন্যাস ও গল্পগুলি কেবল বাংলা সাহিত্যে নয় ভারতীয় সাহিত্যের ও এক অমূল্য সম্পদ।