বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা, ২৬/১১-র সন্ত্রাস একনজরে
২৬ নভেম্বর, ২০০৮, ভারতের ইতিহাসে এক কালো দিন। লস্কর-ই-তইবার ১০ জঙ্গির তাণ্ডব বাণিজ্য নগরী মুম্বই-এর উপরে ঘটেছিল নারকীয় সন্ত্রাস। একাধিক জঙ্গি হামলায় হাড় হিম হয়ে গিয়েছিল বিশ্ববাসীর। এরপর কেটে গিয়েছে ১১টি বছর। এখনও এই জঙ্গি হামলার নৃশংস হত্যালিলা দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে মানুষকে। সিএসটি রেলওয়ে স্টেশন, তাজ হোটেল, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, নরিম্যান হাউস, কামা এবং অ্যালব্লেস হাসপাতাল, লিওপোর্ড কাফে, মেট্রো সিনেমা এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়া বিল্ডিং-এর পিছনের গলি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজকে সেদিন সন্ত্রাসের নিশানা করেছিল লস্কর জঙ্গিরা।
Asianet News Bangla | Published : Nov 26, 2019 10:22 AM IST / Updated: Nov 26 2019, 04:48 PM IST
মাছ ধরার ডিঙি নৌকা নিয়ে ১০ জঙ্গি রাতের অন্ধকারে এসে নামে মুম্বই-এর উপকূলে। সেখান থেকে দুটো দলে ভাগ হয়ে জঙ্গিরা ছড়িয়ে পড়ে। একটি দলে ছিল ছয় জঙ্গি। অন্য দলে ছিল ৪ জঙ্গি। ৬ জঙ্গিদের দলটি মাছিমার নগর দিয়ে মুম্বইয়ে ঢোকে। সেসময় স্থানীয় কিছু লোকের প্রশ্নের মুখে পড়ে তারা। ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে থাকা জঙ্গিরা নিজেদের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। ৪ জঙ্গিদের দলটিও কাফে প্যারেড এলাকায় বাদওয়ার বাজারে কিছু মৎস্যজীবীদের সামনে পড়ে যায়। মৎস্যজীবীদের সন্দেহ হতেই জঙ্গিরা রীতিমতো শাসানি দিয়ে বলে নিজের চরকায় তেল দিতে। আতঙ্কিত মৎস্যজীবীরা পুলিশকে বিষয়টি জানালেও তারা গম্ভীরভাবে বিষয়টিকে বিচার করেনি।
২৬ নভেম্বর রাত সাড়ে নয়টা থেকে জঙ্গিরা মুম্বই-এর প্রকাশ্য রাস্তায় এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। এর খানিক পরেই জঙ্গিরা নরিম্যান হাউস,যা জিউসদের বাসস্থান বলে পরিচিত সেখানে হামলা চালায়। এর সঙ্গে সঙ্গে হামলা হয় লাক্সারি হোটেল হিসাবে পরিচিত ওবেরয় ট্রাইডেন্ট এবং তাজ হোটেলেও।
সবমিলিয়ে জঙ্গিরা ১২টি হামলা চালায়। ২৬ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে নিরাপত্তাবাহিনীর। ৯ জন জঙ্গি-কে খতম করতে সমর্থ হয় নিরাপত্তাবাহিনী। জঙ্গি হামলায় শহিদ হন ১৬৫ জন। এদের মধ্যে এনএসজি-র এক মেজর এবং হাবিলদারও ছিলেন। ৩০০ জন অন্তত জখম হন। জখমদের মধ্যে অনেকে সারাজীবনের মতো পঙ্গুও হন। শুধুমাত্র ওবেরয় ট্রাইডেন্টে-ই ৩২ জন বন্দি-কে জঙ্গিরা গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল। চারদিনের মাথায় ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, নরিম্যান হাউস এবং তাজ হোটেল-কে জঙ্গিমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়। সেইসঙ্গে জানানো হয় ১০ জঙ্গির মধ্যে একজনকে শুধুমাত্র জীবিত অবস্থায় ধরা গিয়েছে। এই জঙ্গির নাম আজমল কাসভ।
কাসভকে জেরা করেই সামনে আসে মুম্বই হামলায় লস্কর যোগ-এর তথ্য ও প্রমাণ। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজ্জফরাবাদে ১৮ মাস ধরে কাসভদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল লস্কর-ই-তইবা। জেরায় সে কথাও জানায় সে।
অস্ত্র আইন, বেআইনি কার্যকলাপ, বিস্ফোরক আইন, শুল্ক আইন, দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা-র মতো অভিযোগ দায়ের করা হয় আজমল কাসভের বিরুদ্ধে। এছাড়াও রেলওয়ে অ্যাক্ট-সহ আরও বেশকিছু ধারা যোগ করা হয় তার বিরুদ্ধে। টিকিট ছাড়াই রেলওয়ের চৌহদ্দিতে পা-রাখার জন্যও মামলা হয়েছিল জঙ্গি কাসভের বিরুদ্ধে।
পুনের ইয়েরওয়াড়া জেলে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে আজমল কাসভকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
মুম্বই হামলার পরপরই আমেরিকায় ধরা পড়ে ডেভিড কোলম্যান হেডলি। পাক বংশোদ্ভূত হেডলি-কে ধরা হয়েছিল মুম্বই হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসাবে। এফবিআই ও ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র এবং এনআইএ-র তদন্তকারী অফিসারদের সামনে হেডলি জানায় ২০০৮-এর ২৬ নভেম্বরের আগে দুবার এমন সন্ত্রাসবাদী হামলার ছক কষেছিল লস্কর। ২০০৮-এর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর-এ হামলা চালানোর সেই ছক ভেস্তে গিয়েছিল।
যে পুলিশকর্মীর অসীম সাহসিকতায় জঙ্গি কাসভকে জীবিত ধরা সম্ভব হয়েছিল সেই সাব-ইন্সপেক্টর তুকারাম ওম্বলে পরে হাসপাতালে মারা যায়। তুকারাম-কে তাঁর সাহসীকতার জন্য অশোকচক্রে সম্মানিত-ও করা হয়েছিল।