বাজেট ২০২০, মোদী সরকারের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ কী কী আশা করছে
কেন্দ্রীয় সরকার না মানলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা ও পর্যবেক্ষকরা সাফ জানিয়েছেন ভারতের অর্থনীতির হাল মোটেও ভালো নয়। অর্থনীতির ধারাবাহিক মন্দার পাশাপাশি চাহিদার সংকট যুক্ত হয়ে ভারতের জিডিপি আপাতত গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে গিয়েছে। এই অবস্থায় ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। শিল্প পর্যবেক্ষকরা বলছেন এই বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটই সরকারের পক্ষে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কারণ অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে উন্নত করার লক্ষ্যের সঙ্গে জনসাধারণের প্রত্যাশাকেও মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারকে। দেখে নেওয়া যাক, মোদী সরকারের ২০২০ সালের বাজেটে সাধারণ মানুষ কী কী আশা করছেন -
amartya lahiri | Published : Jan 23, 2020 9:32 AM IST / Updated: Feb 01 2020, 10:10 AM IST
ব্যক্তিগত কর-এ কাটছাঁট - সাধারণ মানুষ আশা করছে সরকার আয়কর (বেসিক) ছাড়ের সীমা বিদ্যমান ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করতে পারে। অর্থাৎ পাঁচ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকার আয় থাকা করের আওতাভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য ১০ শতাংশ পর্যন্ত করের সংশোধন। একইভাবে, ১০ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা আয় করা ব্যক্তিদের জন্য ২০ শতাংশ কর সংশোধন এবং ২০ লক্ষ টাকার উপরে আয় থাকা ব্যক্তিদের জন্য ৩০ শতাংশ কর সংশোধন আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রত্যাশা রয়েছে, সরকার সর্বাধিক করের স্ল্যাব হারকে বর্তমানের ৩০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট সীমা ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হবে। ফলে মানুষের হাতে আরও বেশি পরিমাণ আয়ের টাকা থাকবে, যার ফলে পণ্য ও পরিষেবাদির চাহিদা আরও বাড়বে, যা আখেরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি গতি আনবে। সাধারণ মানুষের ইচ্ছার তালিকায় প্রথমেই এই চাহিদাটি রয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধিতে নিয়ন্ত্রণ: সাধারণ মানুষ চাইছে মুদ্রাস্ফীতির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ। বর্তমানে পন্যের মূদ্রাস্ফীতি হার ৭.৫ শতাংশ, যা মুদ্রাস্ফীতির অত্যন্ত উচ্চহার। এর প্রধান কারণ বাজারে ফলমূল ও সাকসব্জির অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি। সরকার যদি ভোগ্যপন্যের দাম একটা নির্দিষ্ট সীমায় আটকে রাখা নিশ্চিত করতে পারে, তবে তা সাধারণ মানুষের জন্য দারুণ উপকারী পদক্ষেপ হবে।
আবাসন প্রকল্পগুলিতে করের বর্ধিত সুবিধা: আবাসন প্রকল্পে সরকার এর আগেও বাজেটে কিছু নির্দিষ্ট করের সুবিধা প্রদান করেছে। গত বাজেটেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ৪৫ লক্ষ টাকার মধ্যে কেনা বাড়িগুলির ক্ষেত্রে উপভোক্তার ১.৫ লক্ষ টাকা কর ছাড়ের ঘোষণা করেছিলেন। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন বাজেটে এই কর ছাড়ের সীমা বাড়িয়ে ৭৫ লক্ষ টাকা করা হবে। কারণ দিল্লি, মুম্বই-য়ের মতো মেট্রো শহরগুলিতে ৪৫ লক্ষ টাকার নীচে সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ি মেলে না।
নিত্যব্যবহার্য পণ্যগুলিতে কম জিএসটি: সাধারণ মানুষ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্যতম প্রত্যাশা হ'ল নিত্য ব্যবহার্য পণ্যগুলি আরও সাশ্রয়ী করে তোলা। বিশেষত গাড়ি ও টিভি, ফ্রিজ-এর মতো টেকসই পণ্য, এবং খাদ্য-পাণীয়ের মতো দ্রুত খরচ হয়ে যাওয়া পণ্যগুলির ক্ষেত্রে জিএসটির হার যুক্তিসঙ্গতভাবে কমিয়ে আনা। এতে স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা বৃদ্ধি হবে এবং চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নতি ঘটবে।
সুদের হার হ্রাস: এটি সরাসরি বাজেটের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে সরকার যদি সাধারণ মানুষের জন্য সুদের হার কমিয়ে আনতে পারে, তাহলে সেটি অর্থনীতিকে লাভবান করবে। সুদের হার বিশেষ করে বেসরকারী ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে এখনও বেশি। সেই সঙ্গে আরবিআই-এর রেপো রেট হ্রাস এখনও ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের সম্পূর্ণভাবে দিতে পারেনি। সুদের হারগুলি কমিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনা না করলে রেপো রেটের প্রায় ১ শতাংশ গ্রাহকদের কাছে অধরাই থাকবে।
কর-ছাড়ের প্রকল্পে সীমা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষের আশা, করেন যে আয়কর আইন, ১৯৬১-র ৮সি ধারার অধীনে ছাড়ের সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। বর্তমান এই বিষয়ে সীমা রয়েছে ১.৫ লক্ষ টাকার। ফলে করদাতারা তাদের বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করতে খুব বেশি জায়গা পান না। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, পার্সোনাল প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ), ফিক্সড ডিপোজিট, হোম লোন পরিশোধ, বীমা ইত্যাদির মতো বিভিন্ন কর-ছাড়ের প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ বাড়াতে ১.৫ লক্ষ টাকার এই সীমা বাড়িয়ে অন্তত ২.৫ লক্ষ টাকা করা হবে। ফলে সাধারণ মানুষের হাতে আরও খরচ করার মতো আয় থাকবে। এতে করে তাদের দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় বাজারে খাটাতে তারা আরও উৎসাহ পাবে।
এলটিসিজি এবং ডিডিটি-তে ছাড়: শেয়ারবাজারকে উৎসাহিত করতে সরকার লঙ টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস বা এলটিসিজি কর এবং ডিভিডেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন কর বা ডিডিটি-তে ছাড় দেওয়া হবে বলেও প্রত্যাশা রয়েছে। বর্তমানে, কোনও ভারতীয় সংস্থাকে লভ্যাংশ ঘোষণার জন্য প্রায় ২০.৫৬ শতাংশ ডিডিটি দিতে হয়। এতে করে ছাড় পান শেয়ারহোল্ডাররা (ভারতীয় বা বিদেশী)। তাই সরকার ডিডিটি বিলুপ্ত করে শেয়ারহোল্ডারদের উপার্জিত লভ্যাংশের উপর সরাসরি কর বসাবে বলে আশা করা হচ্ছে।২০১৮ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ফের চালু করা হয়েছিল এলটিসিজি ট্যাক্স। কোনও বিনিয়োগকারী যদি তালিকাভুক্ত ইক্যুইটি শেয়ার এবং ইক্যুইটি-ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডগুলি এক বছর ধরে রেখে বিক্রি করেন, তবে ১ লক্ষ টাকার বেশি মুনাফার জন্য ১০ শতাংশ এলটিসিজি কর দেওয়া বাধ্যতামূলক। আশা করা হচ্ছে সরকার বর্তমান ছাড়ের সীমা ১ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লক্ষ টাকা করবে।
বিদেশের ভ্রমণের জন্য এলটিএ: বর্তমানে চালু থাকা ভাতাগুলির মধ্যে যেগুলি পুনর্বিবেচনার দরকার আছে তারমধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল লিভ ট্রাভেল অ্যালাওয়েন্স (এলটিএ) বা ভ্রমণ ভাতা। কোনও কর্মচারী তাঁর নিয়োগকর্তার দেওয়া এলটিএ নিয়ে ভারতের মধ্যে ভ্রমনের জন্য কর ছাড়ের দাবি করতে পারেন, কিন্তু বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাওয়া যায় না। এই বাজেটে সরকার এলটিএ-র সেই সুবিধা বিদেশে ভ্রমণের জন্যও চালু করবে বলে মনে করা হচ্ছে।