অটল টানেল, চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতের এক বড় হাতিয়ার

চিনের সঙ্গে কৌশলগত অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ অটল টানেল। একদিকে লাহুল-স্পিতি এবং লেদ-লাদাখে যোগাযোগ সুগম হবে। অন্যদিকে এই অঞ্চলে থাকা সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ সহজ হবে। চিনের আগ্রাসনকে এক বড় ধাক্কা দিতে চলেছে অটল টানেল। 

Asianet News Bangla | Published : Oct 2, 2020 4:15 AM IST / Updated: Oct 02 2020, 09:54 AM IST
17
অটল টানেল, চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতের এক বড় হাতিয়ার

লাহুল-স্পিতি। কোল্ড ডেজার্ট মাউন্টেন-এর সঙ্গে যারা পরিচিত তারা জানেন কী এই কোল্ড ডেজার্ট মাউন্টেন। এর মানে যেখানে পর্বত অত্যন্ত-রুক্ষ-সুক্ষ এবং শীতকালে পুরো গ্লেসিয়ার্সের তলায় চলে যায়। চিনের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত অবস্থানে এই লাহুল-স্পিতি-র একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। কারণ এই লাহুল-স্পিতি-র সীমানা পেরলেই শুরু হয়ে যায় বিতর্কিত তিব্বতের সীমানা। ফলে লাহুল-স্পিতির গা-ঘেঁষেই রয়েছে চিন সীমান্ত। অন্যদিকে, লাহুল স্পিতি-র সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়েছে লেহ-লাদাখ।  

27

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই অটল টানেল? 
মাত্র ৬ মাসের জন্য মূলভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে লাহুল-স্পিতির। জুন মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত খোলা থাকে লাহুল-স্পিতি-র রাস্তা। হিমালয়ে কোল্ড ডেজার্ট মাউন্টেন বলে পরিচিত এই এলাকায় ঢোকার মূল রাস্তা রোটাং পাসের মধ্যে দিয়ে। রোটাং পাসে বরফ পরতে শুরু করলে বন্ধ হয়ে যায় এই রাস্তা। ফলে ফের জুন মাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, কারণ বরফ গললে বা ড্রেজিং করা সম্ভব হলে তবেই রাস্তা খোলে লাহুল-স্পিতি-তে ঢোকার। রোটাং পাস এড়িয়ে কিছু যোগাযোগের রাস্তা আছে বটে তবে তার অধিকাংশটাই পায়ে হেঁটে যাওয়া পাহাড়ি রাস্তা। এছাড়া সিমলা দিয়ে কিন্নর হয়ে স্পিতি-তে ঢোকার একটা রাস্তা রয়েছে, কিন্তু তার পুরোটাই বরফে ঢাকা থাকে, গাড়ি চলাচলের খরচও সেই রাস্তায় অনেক। কিন্নরের সেই রাস্তা দিয়ে শীতকালে স্পিতি-তে ঢোকা গেলেও, লাহুল পর্যন্ত যাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। চিনের সঙ্গে ভারতের এমন এক স্ট্র্যাটেজিক লোকেশন আবহাওয়ার কারণে এক্কেবারে দুরধিগম্য হয়ে পড়ে ওই সময়ে। অটল টানেল এবার সেই দুরধিগম্যতাকে ভেঙে দিতে চলেছে। 

37

কীভাবে তৈরি হয়েছে অটল টানেলের সুড়ঙ্গ
রোটাং পাসের পীর-পাঞ্জল উপত্যকার ভিতর দিয়ে বানানো হয়েছে সুড়ঙ্গ, যা লাহুল-স্পিতি-র সঙ্গে ২৪X৭-এর ধাঁচে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। অটল টানেলের দৌলতে মানালি থেকে রোটাং পাস দিয়ে লাহুল-স্পিতি পৌঁছনোর সময়টা ৬ ঘণ্টা কমে গিয়েছে। অটল টানলের দৌলতে ৬ ঘণ্টার জায়গায় বড়জোর ২ ঘণ্টা সময় লাগবে, কারণ ৪৬ কিমি রাস্তাকে বাইপাস করে দিয়েছে অটল টানেল। এই ৪৬ কিমি রাস্তা রোটাং পাস দিয়ে পার হতে যে কোনও গাড়িতে ঘণ্টা তিনেক পর্যন্ত সময় লাগত। অটল টানেলের সুবাদে সেই রাস্তা যেতে এখন লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। 

47

কতটা উচ্চতায় অটল টানেল
অটল টানেল যেখান থেকে শুরু হচ্ছে সেখানকার উচ্চতা সমুদ্র স্পৃষ্ট থেকে ১০,১৭১ ফিট। রোটাং পাসের বুক চিরে অটল টানেল যেখানে গিয়ে শেষ হচ্ছে তার উচ্চতা সমুদ্র স্পৃষ্ট থেকে ১৩,০৫১ ফিট। অটল টানেল রোটাং-এর বুক চিরে গিয়ে পৌঁছেছে গ্রাম্ফু নামে একটি গ্রামে, যা মানালি-লেহ রোডের উপরে এবং অবস্থানগতভাবে তা লাহুল-স্পিতি জেলার মধ্যে পড়ে। 

57

অটল টানেলের শেষে একদিকে স্পিতি, একদিকে লেহ-লাদাখ
অটল টানেল লাহুল-স্পিতির যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে তার একদিকে রয়েছে স্পিতি ভ্যালির ভিতরে ঢুকে যাওয়ার রাস্তা, অন্যটা তলে গিয়েছে লাহুলের বুক চিরে লাদাখ হয়ে লেহ-র দিকে।
 

67

সেনাবাহিনীর অবস্থান
লেহ-লাদাখ এবং লাহুল-স্পিতি-র অসংখ্য জায়গায় ভারতীয় সেনার কৌশলগত অবস্থান রয়েছে বহু বছর ধরে। চিনের আগ্রাসন-কে আটকাতে এই সেনা চৌকি এবং ক্যাম্পগুলি ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অটল টানেলের দৌলতে এখন সারা বছর ধরে লাহুল-স্পিতি এবং লেহ-লাদাখের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে সারাদেশের। 
সারা বছর অটল টানেল দিয়ে লেহ-লাদাখ এবং লাহুল-স্পিতিতে থাকা সেনাবাহিনীর কাছে সবধরণের রসদও পৌঁছবে। 

 

77

লেহ-লাদাখের ২ রাস্তা
লেহ-লাদাখ পৌঁছনোর জন্য দুটি রাস্তা রয়েছে, একটি কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে জোজিলা পাস হয়ে এবং অন্যটি মানালি থেকে রোটাং হয়ে লাহুল-স্পিতির মধ্যে দিয়ে। শীতকালেও তুষারপাতের জন্য জোজিলা পাস দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অটল টানেল দিয়ে যাতায়াত শুরু হয়ে যাওয়ায় লাহুল-স্পিতি এবং লেহ-লাদাখের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ আরও মজবুত হয়ে গেল। শুধু বহিঃশত্রুর অনুপ্রবেশকে রোধ করাই নয়, এই অঞ্চলের পর্যটন উন্নয়নে অটল টানেল এবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

Share this Photo Gallery
click me!

Latest Videos