'রক্তমাখা শরীরগুলো করছে শুধু আর্তনাদ', স্থানীয়রা দিলেন বিমান দুর্ঘটনার ভয়াবহ বিবরণ

কোঝিকোড় বিমানবন্দরের সুক্রবার রাতে ঘটে গিয়েছে ভয়ানক বিমান দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিমানবন্দরের রানওয়েটি টেবিল-টপ অর্থাৎ মালভূমির মতো বলেই সমস্যা হয়েছে। তবে এই ধরণের রানওয়েতে জেট ইঞ্জিন চালিত বিমানগুলি দুর্ঘটনায় পড়লে কীভাবে তার মোকাবিলা করা হবে, মাঝে মাঝেই তার মহড়া দিত করিপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মহড়া আর সত্যি সত্যি চোখের সামনে 'রক্ত ও মৃত্যু'র মোকাবিলা করা মোটই এক বিষয় নয়। শুক্রবার বন্দর কর্তৃপক্ষের দল আসারও আগে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজের জন্য ছুটে গিয়েছিলেন স্থানীয় মানুষ। ঘটনার ভয়াবহ বিবরণ দিয়েছেন তাঁরা -

 

amartya lahiri | Published : Aug 8, 2020 3:42 PM IST / Updated: Aug 10 2020, 12:39 PM IST

110
'রক্তমাখা শরীরগুলো করছে শুধু আর্তনাদ', স্থানীয়রা দিলেন বিমান দুর্ঘটনার ভয়াবহ বিবরণ

শুক্রবার রাতে কোঝিকোড়ে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ফজল পুঠিয়াকাঠ। ৩২ বছরের এই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, 'বিস্ফোরণের মতো' একটা প্রচন্ড শব্দ শুনেই তিনি ও তাঁর প্রতিবেশিরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। প্রথমে অনেকেই ভেবেছিলেন বজ্রপাত হয়েছে। পরক্ষণেই দেখেছিলেন, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস বিমানটি রানওয়ে ছাড়িয়ে মাঝখান থেকে দুই টুকরো হয়ে ভেঙে খাদের মধ্যে ঝুলে পড়েছে।

210

সঙ্গে সঙ্গেই দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন তাঁরা। ফজল জানিয়েছেন সেখানে তখন শুধুই মানুষের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল। আশপাশে যাকেই দেখেছেন, তারই সর্বাঙ্গ রক্তে ভেজা ছিল। কারও কারও হাত বা পায়ের হাড় ভেঙে মাংস চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে। আর কেউ কেউ পড়েছিলেন সংজ্ঞা হারিয়ে।

 

310

ফজল জানিয়েছেন, সংঘর্ষ এতটাই জোরদার ছিল, যে বোয়িং ৭৩৭ বিমানটির সামনের অংশ, পিছনের অংশ থেকে আলাদা হয়ে প্রায় ২০ মিটার সামনে পড়েছিল। তবে একটাই ভালো বিষয়, জেট ইঞ্জিনটিতে আগুন লাগেনি। নাহলে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হত।

410

কোঝিকোড় বিমানবন্দরে মাঝে মাঝেই এইরকম বিপদের সম্ভাবনার কথার মাথায় রেখেই ভেঙে পড়া নকল বিমান নিয়ে 'মক ট্রায়াল' বা বিপদ মোকাবিলার মহড়া দেয়। দূরে দাঁড়িয়ে ফজলের মতো স্থানীয়রা তা বহুবার দেখেছেন। কিন্তু, বাস্তবটা একেবারেই অন্যরকম ছিল বলেই দাবি। ফজল বলেছেন, এই ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে, যতি প্রস্তুতি নেওয়া হোক না কেন, রক্ত ​​এবং মৃত্যুর বাস্তব পৃথিবীটা সম্পূর্ণ আলাদা।

510

মানসিক সেই ধাক্কা সামলে ফজল তাঁর গাড়িতে করে এক আহত ব্যক্তিকে স্থানীয় হাসপাতালেও নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, গোটা রাস্তা সেই ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানের জন্য কান্নাকাটি করেছিলেন। তাঁর সেই কান্না কখনই ভোলার নয়। ফজলের গাড়ির পিছনের এখনও সেই ব্যক্তির রক্তের দাগ লেগে রয়েছে।

610

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ৩৪ বছরের জুনেইদ মুক্কুদ জানিয়েছেন, বিমানটির দুই পাইলট দীপক সাথে এবং অখিলেশ কুমার-কে তাঁরা চোখের সামনে দেখেও উদ্ধার করতে পারেননি। কারণ তখনও তাঁদের সিটবেল্ট বাধা ছিল। তাাই আসনের সঙ্গে আটকে ছিলেন তাঁরা। তাঁদের উদ্ধার করার মতো এতটুকু ফাঁক ছিল না ককপিট অংশে। কারণ দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কায় সেটি দুমরে মুচরে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ট্রাক্টর ও ক্রেনের সাহায্যে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তাদের উদ্ধার করতে হয়েছিল।

710

মুক্কুদ জানিয়েছেন, প্রথমে স্থানীয়রাই উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিলেন। পরে বিমানবন্দরের কর্মীরা, পুলিশ, দমকল, স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীরা আসেন। তবে উদ্ধারকাজটা এতটাই কঠিন ছিল যে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা না এগিয়ে আসলে শুধু সরকারি উদ্ধারকারীরা তা করতে পারতেন না। প্রচন্ড বৃষ্টি আর অন্ধকারে আহত মানুষগুলোকে খুঁজে পাওয়াই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

 

810

ফজলের মতো জুনেইদ মুক্কুদ-ও একজনকে উদ্ধার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি শিশুকে কাঁদতে দেখে তিনি কোলে তুলে নিয়েছিলেন। তার সর্বাঙ্গ ঢাকা ছিল ধ্বংসাবশেষে। শরীরে বিমানের একটি ধাতব অংশ-ও বিধে ছিল। তারপর তাঁকে তিনি হাসপাতালে পৌঁছে দেন।

910

এদিকে শুক্রবারের ঘটনায় কেরলে কোভিড সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা বেড়েছে। মৃত যাত্রীদের একজন অন্তত কোভিড পজিটিভ বলে জানা গিয়েছে। কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্ধারকারীদের ধন্যবাদ দিয়ে, তাঁদের নিজেদের পৃথক করার পরামর্শ দিয়েছেন। সকলেরই কোভিড পরীক্ষা করাবে সরকার। ফজল বা জুনেইদরা জানাচ্ছেন, ওই সময় কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কা তাঁদের মাথাতেই ছিল না। 

1010

গত এক দশকে ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে কোঝিকোড়ের ঘটনাকে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে চারটি ছোট্ট শিশু-ও। তাদের কারোরই বয়স ৫-এর উপরে নয়। আর আহতের সংখ্যা ১২০-রও বেশি।

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos