'এ ম্যান অফ অল সেশনস'- এই নামেই ডাকা হত প্রণব মুখোপাধ্যায়-কে, জানুন সেই কাহিনি

Published : Aug 31, 2020, 07:17 PM ISTUpdated : Aug 31, 2020, 10:05 PM IST

প্রণব মুখোপাধ্যায়, ভারতের বর্ণময় রাজনীতির এক কিংবদন্ত চরিত্র। তাঁকে নিয়ে বহু কাহিনি-ই দশকের পর দশক ছড়িয়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতির অন্দরমহলে। ইন্দিরা গান্ধী-কে গুরুমাতা হিসাবে পেয়ে প্রণব যেন হয়ে ওঠেছিলেন সার্থক শিষ্য। আর এর সুবাদেতই তিনি আনাগোনা করতেন সমস্ত মন্ত্রকে। তাঁকে না জানিয়ে কোনও মন্ত্রকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল অসম্ভব। যার জন্য সবমহলের কাছে তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন আ ম্যান অফ অল সেশনস বলে। এই নামের সার্থক প্রমাণ তিনি ইন্দিরা পরবর্তী সময়েও রেখেছিলেন। যার জন্য কংগ্রেস থেকে দূর হয়ে গিয়েও ফিরে এসেছিলেন দলের কোর গ্রুপে। এমনকী, ইউপিএ সরকারের জামানায় তাঁর ক্ষমতা পৌঁছেছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। 

PREV
118
'এ ম্যান অফ অল সেশনস'- এই নামেই ডাকা হত প্রণব মুখোপাধ্যায়-কে, জানুন সেই কাহিনি

১০ অগাস্ট হাসপাতালে ভর্তি- বাথরুমে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন ৯ অগাস্ট। এরপরই সোমবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দেখা যায় মাথায় রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সেই জমাট রক্তকে অস্ত্রোপচার করে বের করাটা জরুরি ছিল। 

218

নিজেই টুইট করে করোনা আক্রান্তের খবর দেন- টুইটারে বরাবরই সচল থাকতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ৮৪ বছর বয়সেও টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যান্ডেলে অসুবিধা হত না তাঁর। সেই টুইটার হ্যান্ডেলেই প্রণব জানান যে তিনি করোনা আক্রান্ত এবং সোমবার তাঁর পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন তাঁদেরও করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রণব। এমনকী, প্রয়োজনে আইসোলেশনেও থাকতে বলেছিলেন তিনি। 

318

 ২০১২-২০১৭ রাষ্ট্রপতি পদে আসিন ছিলেন- ইউপিএ ২ সরকারের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাতে সামলাতেই তিনি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়ন জমা করেছিলেন। অবশ্য, তার আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে এবং কংগ্রেসের সদস্যপদ বিসর্জন দিতে হয়েছিল। কারণ, রাষ্ট্রপতি পদে লড়াই-এর জন্য এবং রাষ্ট্রপতি হলে কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়া যায় না। 

418

অসাধারণ বাগ্মী এবং দক্ষ প্রশাসক- প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাগ্মীতা নিয়ে কারোরই কোনও সন্দেহ ছিল না। বীরভূমের কীর্ণাহারের মতো অজ পাড়াগায়ে মানুষ হলেও রাজনীতির শিখরে পৌঁছে তিনি পরিচয় রেখেছিলেন তাঁর মেধা-শিক্ষা এবং সংস্কৃতির। 

518

একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলিয়েছেন- কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষামন্ত্রক, বিদেশমন্ত্রক থেকে শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রক, জাহাজ মন্ত্রক, ভারী শিল্প মন্ত্রক-এর মতো দায়িত্ব। 

618

বিশ্বের অন্যতম সেরা অর্থমন্ত্রী- প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজে ছিলেন অর্থনীতির ছাত্র। এমনকী স্বল্প শিক্ষকতার জীবনেও অর্থনীতি পড়াতেন। বহু স্থানে অর্থনীতি নিয়ে একাধিক লেখাও লিখেছিলেন। এহেন প্রণব প্রথম কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পান ১৯৮২ সালে, ইন্দিরা গান্ধীর জামানায়। এরপর ইউপিএ ২ সরকারের শুরু থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলিয়েছেন। ইউপিএ ২ সরকারের সময় বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছিল আর্থিক মন্দা, যা সাবপ্রাইম ক্রাইসিস নামে পরিচিত। বলা হয়, প্রণবের বেশকিছু নীতির জন্য এই মন্দার সরাসরি প্রভাব ভারতের উপরে পড়েনি। আর এর জন্য তাঁকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অর্থমন্ত্রী বলা হয়। 

718

রাজনীতিতে প্রবেশ- ১৯৬৯ সালে চূড়ান্তভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এক্কেবারে দিল্লিতে গিয়ে জাতীয় রাজনীতির অন্দরমহলে ঢুকে পড়েন। আর এর পুরো কৃতিত্ব ছিল ইন্দিরা গান্ধীর। তিনি জহুরির চোখে আগামীদিনের দেশের সেরা ক্রাইসিস ম্যান-কে চিনে নিতে ভুল করেননি। 

818

ইন্দিরা ডানহাত ও একচ্ছত্র আধিপত্য- ১৯৭৩ সালেই ইন্দিরার মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। আর এই সাংসদ হওয়ার ছাড়পত্রেই ইন্দিরা-র ডানহাত হিসাবে সমস্ত মন্ত্রকে বকলমে ছড়ি ঘোরাতেন তিনি। 

918

৫ বারের রাজ্যসভার সাংসদ- ১৯৭৩, ১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৯ সালে তিনি রাজ্যসভার টিকিটেই সাংসদ হয়েছিলেন। 
 

1018

 ইন্দিরার হত্যার সময় বাংলায় ছিলেন-- ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর যখন ইন্দিরা গান্ধীর হত্যা হয়, সে সময় বাংলার বুকে রাজীবকে সঙ্গে করে রাজনৈতিক সফরে ছিলেন প্রণব। ইন্দিরার নির্দেশেই রাজনীতিতে অভিষেক ঘটানো রাজীবের ছায়াসঙ্গী হয়েছিলেন। ইন্দিরা হত্যার খবর পেতেই তিনি রাজীবকে সঙ্গে করে দিল্লিতে ফেরেন। 
 

1118

 জরুরি অবস্থা জারিতেও হাত- অভিযোগ, জরুরি অবস্থা জারির পিছনে ইন্দিরাকে মানসিক শক্তি জুগিয়েছিলেন প্রণব। মূলত তাঁরই তদ্বিরে জরুরি অবস্থা জারি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলেন ইন্দিরা এবং তিনি তা লাগুও করেন। 

1218

রাজীব জামানায় কোণঠাসা- কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বের একটা অংশ প্রবলভাবে প্রণবের উপরে ক্ষুব্ধ ছিল। উল্কার গতিতে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উত্থান কংগ্রেসের অন্দরমহলেও গুঞ্জন শুরু করিয়ে দেয়। এতে রাজীব প্রভাবিত হন এবং প্রণব-কে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করেন। কেড়ে নেওয়া হয় সমস্ত ক্ষমতা। 
 

1318

নতুন রাজনৈতিক দল গঠন- কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস দল গঠন করেছিলেন প্রণব। পরে ১৯৮৯ সালে সেই দল ভেঙে দেন এবং অনুগামীদের নিয়ে ফের কংগ্রেসে যোগ দেন। 

1418

 পিভি নরসিমা রাওয়ের হস্তক্ষেপে ফের ক্ষমতায়- দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন পিভি নরসিমা রাও। তিনি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে যোজনা কমিশনের সহকারী চেয়ারম্যান বানান। 

1518

এরপর আস্তে আস্তে রাজনৈতিক বিচক্ষণতা কাজে লাগিয়ে তিনি ইউপিএ সরকার ১-এর জামানায় ক্রাইসিস ম্যান হয়ে ওঠেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে শুরু করে বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলান। 

1618

ইন্দো-আমেরিকা পরমাণু চুক্তি রূপায়ণ- পোখরান পরমাণু পরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চ সিটিবিটি-তে ভারত ধিক্কারের শিকার হয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবধরনের সহযোগিতা পাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রণব সেই অচলাবস্থাকে ভাঙেন এবং আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তিও রূপায়ণে মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন। 
 

1718

ম্যান অফ অল সেশন- ইন্দিরা সরকারের মধ্যে তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যের জন্য এই নামেই অনেকে তাঁকে ডাকতেন। বলতে গেলে সকলের কাছেই সঙ্কটমোচনের ঠিকানা ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। 

1818

বিতর্ক- ধীরুভাই আম্বানীর সঙ্গে প্রণবের ঘনিষ্ঠতা নিয়েও বহু বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। 

click me!

Recommended Stories