তালিবান শাসনে বোরখা কেনার ধুম এখন কাবুলে, অথচ একটা সময় সেখানে মিনি স্কার্ট পরে বাইরে বেরোত তরুণীর দল

'আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে বিশ্ব আফগানিস্তানকে পরিত্যাগ করেছে। আমারা বন্ধুরা এখন মৃত্যুর সম্মুখে দাঁড়িয়ে। তালিবানরা আমাদের আফগান মহিলাদের মেরে ফেলবে। আর আফগান মহিলারা মাথা তুলে স্বাধীন হতে পারবে না।'-- এমন এক কাতর আর্তনাদ রবিবার ঠিকরে বেরিয়ে এসেছিল দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এক আফগান মহিলা কাবুল থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান থেকে নামতেই এমনভাবে আর্তনাদ করে উঠেছিলেন। না- এটা কোনও বারাবারি রকমের আর্তনাদ নয়। এটা গত কয়েক দশক ধরে চলা আফগানিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার এক জ্বলজ্যান্ত নির্দশন। যেখানে উদার সংস্কৃতির কপাট বন্ধ করে এক সঙ্কীর্ণমনা, অতি সংরক্ষণশীল এবং মহিলাদের বুনিয়াদি অধিকারকে অস্বীকার করার সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে আফগানিস্তান। অথচ, ১৯৭২ সালের আগে আফগানিস্তানের বুকে মহিলা স্বাধীনতার ছবিটা এমন ছিল না। এক উদার মনস্ক অত্যাধুনিক সংস্কৃতির ধারক হিসাবে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিয়েছিল আফগানিস্তান। 

Asianet News Bangla | Published : Aug 17, 2021 2:29 PM IST / Updated: Aug 17 2021, 09:06 PM IST
114
তালিবান শাসনে বোরখা কেনার ধুম এখন কাবুলে, অথচ একটা সময় সেখানে মিনি স্কার্ট পরে বাইরে বেরোত তরুণীর দল

আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির শত শত বছরের পুরনো। আফগানিস্তানের কোলেই রয়েছে হিন্দুকুশ পর্বতমালা। আর এই হিন্দুকুশ-কে ভিত্তি করে খ্রিষ্ট পূর্ব্বাদে গড়ে উঠেছিল ভারতীয় উপমহাদেশের দর্শন ও তর্কবিদ্যার এক পীঠস্থান। যার উল্লেখ বিভিন্ন পুরাণগ্রন্থে পাওয়া যায়। এমনকী অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেট-ও ভারতে প্রবেশ করেছিলেন এই আফগানিস্তানের বুক দিয়ে। 

214

ইতিহাসের পাতায় সময় যত এগিয়েছে ততই ভারতের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যিক সম্পর্কস্থাপনেও এক গুরুত্বপূর্ণ রুট হয়ে উঠেছিল এই আফগানিস্তান। যা সিল্ক রুট নামে পরিচিত। এই সিল্ক রুটে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা নিয়ে পাড়ি জমাতেন পারস্য দেশে, আধুননা যা ইরান নামে পরিচিত। সেই সময় শিক্ষা-শিল্প-সংস্কৃতি এবং দর্শন চর্চায় ইরান হয়ে উঠেছিল মধ্যপ্রাচ্যের এক মহীরূহ। 

314

একটা সময় আফগানিস্তানের রাজা আহমেদ শাহ দুরানি, যিনি আবার জাতিতে পুশতুন ছিলেন, তিনি এবং তাঁর সৈন্যবাহিনী ভারত আক্রমণ করেছিলেন। ভারতীয় ভূখণ্ডের বেশকিছুটা অংশ দখলও করে নিয়েছিলেন দুরানি। অতিতকাল থাকেই তার ভৌগলিক অবস্থানে আফগানিস্তান ছিল পাহাড়ে ঘেরা একটা রুক্ষ মরুপ্রান্তর। সেখানে ভারতীয় ভূখণ্ড ছিল শস্য-শ্যামলা-ঊর্বর এক ভূমি। ভারতীয় রত্ন এবং জহরতের চাহিদা তখন সর্বজন বিদিত ছিল। ফলে বহিঃশক্তির কাছে ভারত ছিল লুঠপাটের এক আদর্শস্থান। 
 

414

 ভারতীয় রাজা এবং সম্রাটরাও একটা সময় আফগানিস্তানের ভূখণ্ডের অনেকটা অংশ নিজেদের দখলে নিয়েছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। পরবর্তিকালে ব্রিটিশরাও আফগানিস্তানের উপরে নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। আফগানিস্তানের সীমান্তের একটা অংশে সে সময় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমান্ত। ৯০ দশকে সোভিয়েত পতনের পর সেখানে এখন জন্ম নিয়েছে তাজাখস্থান, উজবেকিস্তান এবং তুর্কেমেনিস্তান রাষ্ট্র। 

514

সোভিয়েত শক্তি যাতে কোনওভাবেই ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের কাছাকাছি নিঃশ্বাস না ফেলতে পারে তার জন্য আফগানিস্তানের ভূমিকে একটা বাফার জোন হিসাবে ব্যবহার করতো ব্রিটিশরা। ইংরেজ শাসকদের চাপে রাখতে সোভিয়েতও আফগানিস্তানের সীমান্ত বরাবর তাদের সামরিক প্রভাব বাড়িয়ে রেখেছিল। আফগানিস্তানের কিছুটা এলাকা ভারতের ব্রিটিশ সরকার দখলও করে নেয়। পরে এই এলাকার কিছুটা অংশ ছেড়ে দিলেও বাকি অংশ থেকে সরে আসেনি। 

614

আফগানিস্তানে একাধিক জনজাতি এবং তারা প্রত্যেকেই তাদের মতো করে সামরিক শক্তিতে শক্তিশালী ছিল। ফলে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের লড়াই লেগেই থাকতো। ভারতের ইংরাজ সরকার ১৯১৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলের শেষ চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু শেষে হতাশ হয়ে সেখান থেকে সরে আসে। এরপর পাকাপাকি আফগানিস্তানে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে রাজাদের শাসন কায়েম হয়েছিল। 

714

 এই রাজাদের শাসনকালে বিশেষ করে সত্তর দশকের শেষে তৎকালীন রাজা জাহির শাহ এক উদার ভাবধারা-র আমদানি করেন। বিদেশিদের জন্য আফগানিস্তানকে অবারিত দ্বার করে দেন। পশ্চিমি দেশগুলিতে সেই সময় হিপি কালচারের জন্ম হয়েছিল। দল বেঁধে এই হিপিরা আফগানিস্তানের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির স্বাদ নিতে আসতে থাকেন। হিপি-দের পোশাক-আশাক প্রভাব ফেলে আফগানিস্তানের তরুণ প্রজন্মের মনের উপরে। এর সঙ্গে ছিল রাজা জাহির শাহের উদাকিরণ নীতি। 

814

গত কয়েক দশকে আফগানিস্তানের বর্বরতার যে বিষয়টি সবচেয়ে সামনে এসেছে তা হল মহিলাদের প্রতি হিংসা। অথচ এই ছবি খোদ কাবুলের রাস্তায় ১৯৭২ সালে তোলা। চিত্রগ্রাহক লরেন্স বার্ন এই ছবিটি তুলেছিলেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে কয়েক জন আফগান তরুণী মিনি স্কার্ট পরে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। বার্নের দেওয়া বর্ণানা থেকে জানা যায় এই তরুণীরা সকলেই কলেজ ছাত্রী। সে সময় স্কুল-কলেজে পাঠরত তরুণীদের অধিকাংশই হিজাব বা বোরখা পরে বাইরে বের হত না। 

914

সালটা ১৯৭০। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের চিত্রগ্রাহকের চোখ পড়েছিল একদল তরুণ-তরুণীর উপরে। স্কাউট দলের সদস্য এই তরুণ-তরুণীরা চিত্রগ্রাহকের কথায় ক্যামেরার সামনে পোজও দেন। এই ছবিও প্রমাণ করছে যে সময় কাবুলের বুকে সত্যি সত্যি এক উদার চিন্তা-ভাবনার জায়গায় ছিল। যে ভাবনায় রীতিমতো সম্মানজনক স্থান পেত মহিলারা। 

1014

পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে তখন আফগানিস্তানের একটা সুসম্পর্ক ছিল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে ঘোড়ায় টানা ফিটনে চেপে বাকিংহাম প্যালেসে ঢুকছেন আফগানিস্তানের রাজা মহম্মদ জাহির শাহ। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর এই ছবিটি তোলা হয়েছিল। 
 

1114

১৯৭২ সাল। চিত্রগ্রাহক লরেন্স বার্নের আরও একটি তোলা ছবি। যেখানে এক আফগান গৃহবধূকে দেখা যাচ্ছে ঘরে বসে সেলাই মেশিনে সেলাই করতে। সে সময় আফগান সরকারের নীতিতে বহু গৃহবধূ কর্মসংস্থানের ঠিকানা পেয়েছিলেন। এরমধ্যে অনেকে আবার ঘরে বসেই বিভিন্ন কর্মসংস্থানে নিয়োজিত ছিলেন। 

1214

 ১৯৭৩ সালের আরও একটি ছবি। এটি কাবুলের তরমুজ বাজারে তোলা। চিত্রগ্রাহক মোরসে কালেকশন। যেখানে দেখা যাচ্ছে এক বিদেশিনী কতগুলি আফগান কিশোরের সঙ্গে বসে রয়েছেন। বলতে গেলে বিদেশি অতিথিদের কাছে তখন অনেকটাই নিরাপদ ছিল আফগানিস্তান।
 

1314

১৯৭৮ সালের ৭ জুন। কাবুলের রাস্তা। চিত্রগ্রাহক ভি সেইকভ-এর তোলা একটি ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে মিনি স্কার্ট পরে নার্সিং কলেজের দুই ছাত্রী হেঁটে চলে যাচ্ছেন। তাদের পায়ে আবার হাই হিল জুতো। যদিও আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতায় অস্থিরতা ততদিনে শুরু হয়ে গিয়েছে। শেষ হয়ে গিয়েছে রাজতন্ত্র। তার বদলে সে সময় সমাজতান্ত্রিক শক্তি আফগানিস্তানের শাসন ভার নিতে তৎপর। কিন্তু, তখনও কাবুলের বুকে মহিলাদের প্রতি সংরক্ষণশীল মনোভাবের উন্মেষ সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। 

1414

১৯৭৯ সালের কাবুলের একটি রাস্তা। আফগানিস্তান তখনও এক গভীর সঙ্কটে। সোভিয়েতের দখলদারি তখন আফগানিস্তানের বুকে শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, এত সত্ত্বেও মহিলাদের চলাফেরা বা পোশাক-পরিচ্ছদে কোনও নিয়ন্ত্রণ জারি হয়নি। 

Share this Photo Gallery
click me!

Latest Videos