ফিরে এল কি ভয়ঙ্কর 'ব্ল্যাক ডেথ', মঙ্গোলিয়ার কিশোরের মৃত্যুর পর বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক

ব্ল্যাক ডেথ অর্থাৎ বিউবোনিক প্লেগ মহামারি সম্ভবত মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে পরিচিত রোগ। মধ্যযুগে বিশ্বব্যাপী বারবার ফিরে এসেছে এই রোগের যন্ত্রণা। সম্প্রতি করোনা মহামারির মধ্যেই আবার বিশ্বে এই রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কার মেঘ জমছে। চিন-মঙ্গোলিয়ার মতো দূর প্রাচ্যের দেশগুলিতে ক্রমে বাড়ছে মহামারির শঙ্কা। এমনকী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও মানুষের মধ্য়ে এখনও দেখা না গেলেও প্লেগ আক্রান্ত প্রাণীর দেখা মিলেছে।

 

amartya lahiri | Published : Jul 16, 2020 8:12 AM IST / Updated: Aug 08 2020, 02:03 PM IST

16
ফিরে এল কি ভয়ঙ্কর 'ব্ল্যাক ডেথ', মঙ্গোলিয়ার কিশোরের মৃত্যুর পর বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক

কী এই বিউবোনিক প্লেগ?

সাধারণত মাছি বা এঁটেল পোকার মাধ্যমে বিউবোনিক প্লেগের ব্যাকটেরিয়া প্রাণী এবং মানুষ উভয়ের মধ্যেই সংক্রমিত হয়। এই রোগ অবশ্য কোনও ভাইরাস নয় হয় 'ইয়ের্সিনিয়া পেস্টিস' নামে একটি ব্যাকটিরিয়া থেকে। এই ব্যাকটিরিয়া মানুষের ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে লিম্ফ নোডগুলিতে পৌঁছে গেলে তবেই মানুষ সংক্রামিত হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে লালা বা অন্য দেহরসের মাধ্যমেও সংক্রামিত হতে পারে। এই রোগ মহামারির আকার নিলে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে। তবে ব্যাকটিরিয়া বাহিত বলে অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ দেয়।

 

26

বিউবোনিক প্লেগের ইতিহাস

প্রথমবার ব্ল্যাক ডেথ বা বিউবোনিক প্লেগ দেখা দিয়েছিল ষষ্ঠ শতাব্দীতে বাইজানটাইন সাম্রাজ্য। পরের দুই শতকে ফিরে ফিরে এসেছিল এই মহামারি। মৃত্য়ু হয়েছিল প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের। এরপর ১৩৪৭ সালে এই মহামারি ফের দেখা দেয় মধ্যএশিয়া ও ইউরোপে। ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। অনেকে বলেন সেই মহামারির সূচনা হয়েছিল মঙ্গোলিয়ায়। এরপর আবার এই প্লেগ মহামারি দেখা গিয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীতে। উৎস ছিল চিনের উফনান প্রদেশ। সেখান থেকে প্রায় গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছিল।

 

36

বিউবোনিক প্লেগের উপসর্গ

হঠাৎ প্রচন্ড জ্বর, মাথা ব্যাথা, শাত শীত করা, শারীরিক দুর্বলতা, শরীরের এক বা একাধিক জায়গায় জল জমে ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া (একে বিউবিস বলা হয়)।

 

46

কেন বিউবোনিক প্লেগকে ব্ল্যাক ডেথ বলা হয়?

বিউবোনিক প্লেগের দ্বিতীয় হামলার সময় ইউরোপেই এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছিল ব্ল্যাক ডেথ। এই নামের কারণ এর একটি উপসর্গ। ত্বকের মধ্যে ব্যাকটিরিয়া প্রবেশ করার পর দেহে জল জমে গিয়ে যে ফোলা অংশগুলি সৃষ্টি হয়, সেগুলি থাকতে থাকতে কালো হয়ে যায়। ওই কালো ফোলা উপসর্গ এবং এর মারাত্মক মৃত্যুর হারের থেকেই এই রোগের নাম হয়েছিল ব্ল্যাক ডেথ।

 

56

২০২০ সালে কি ফিরল ব্ল্যাক ডেথ?

দিন কয়েক আগেই চিনে নতুন করে এই মহামারি ছড়ানোর কথা জানা গিয়েছিল। বুধবার এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গোলিয়ায় এক ১৫ বছরের কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিম মঙ্গোলিয়ার গোবি-আলতাই প্রদেশের ওই কিশোর কাঁচা পাহাড়ি ইঁদুরের মাংস খেয়েছিল। সেখান থেকেই এই রোগে তার দেহে ছড়িয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। খোভড়ে প্রদেশে আরও দু'জন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত। ওই কিশোরের মৃত্যুর পরই মঙ্গোলিয়া সরকার, চিন সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে। আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে আরেকটি তথ্য। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো-তে একটি কাঠবিড়ালির দেহেও এই ব্যাকটিরিয়ার সন্ধান মিলেছে। তাতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাগলে কি আরও একবার ফিরে এল ব্ল্যাক ডেথ?

 

66

কী বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন বর্তমানে গোটা বিশ্বই কোভিড-১৯'এর বিরুদ্ধে লড়তে ব্যস্ত। তার মধ্যে সাম্প্রতিক এই নতুন রোগের হুমকি অবশ্যই অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। কিন্তু, ব্ল্যাক ডেথ ফিরে এসেছে, এমনটা নয়। তাঁরা বলছেন তিন-তিনবার দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্ল্যাক ডেথ বা বিউবোনিক প্লেগ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের কিছু মারাত্মক পকেট তৈরি করেছে। চিন, মঙ্গোলিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং আমেরিকার কিছু কিছু রাজ্য এই পকেটের মধ্যে পড়ে। এইসব এলাকায় এখনও প্রতি বছর শয়ে শয়ে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন।

 

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos