বৃহস্পতিবার, চিন তিনজন নভোশ্চরকে মহাকাশে পাঠালো। আগামী বছরের শেষের মধ্য়েই মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়েছে তারা। এরজন্য চারটি অভিযান পরিচলনা করবে তারা। প্রত্যেকটিতেই থাকবে নভোশ্চর। এর প্রথম অভিযানটিই শুরু হল বৃহস্পতিবার। চিনা ম্যানড স্পেস এজেন্সি (CMSA) জানিয়েছে, উত্তর পশ্চিমের গানসু প্রদেশের জিউকুয়ান থেকে শেনজহু-১২ মহাকাশযানটি নাই হাইশেং, লিউ বোমিং এবং তাং হংবো - এই তিন নভোশ্চরকে নিয়ে কক্ষপথের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।
লং মার্চ-২এফ ওয়াই১২ রকেটটির মাধ্যমে শেনজহু-১২ বা দৈবিক মহাকাশযানকে পাঠানো হয়, চিনের নতুন মহাকাশ কেন্দ্রের মূল মডিউল তিয়ানহে-র উদ্দেশ্যে। এই অভিযানই চিনের এখন পর্যন্ত দীর্ঘতম মানুবযুক্ত মহাকাশ অভিযান। এই অভিযান তাদেরকে মহাকাশ শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবে বলে আশা করছে বেজিং।
28
এই মিশনের কমান্ডার হলেন নাই হাইশেং। তিন মহাকাশচারীর মধ্যে তিনিই বয়সে সবথেকে বড়। ৫৬ বছরের এই চিনা নভোশ্তরের এটা মহাকাশে তৃতীয় অভিযান। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের কাজটা অত্যন্ত কঠিন এবং এতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ১৯৯৯ প্রথম যে মভোশ্চরদের ট্রেনিং দিয়েছিল চিন, তাদেরই একজন নাই। আগে তিনি চিনা বিমান বাহিনীর দক্ষ পাইলট ছিলেন।
38
তার দলের অন্য দুজনও চিনা সামরিক বাহিনীর সদস্য। লিউ বোমিং এর আগে ২০০৮ সালে চিনের প্রথম স্পেসওয়াক অভিযানের সদস্য ছিলেন। ৫৪ বছর বয়সী এই নভোচারীকে পরের বছর যে আরও দুটি মডিউল পাঠানো হবে, তার জন্য তিয়ানহে-র কোর মডিউলটি প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগে ফাইটার জেট-এর পাইলট ছিলেন পিপলস লিবারেশন আর্মির এই মেজর জেনারেল। ২০১০ সালে দ্বিতীয় ব্যাচের চিনা নভোশ্চরদের হিসাবে ট্রেনিং পাওয়া ৪৫ বছর বয়সী তাং হংবো-র এটাই প্রথম মহাকাশ অভিযান। প্রথম অভিযানের চাপ যেমন আছে, তেমনই সেই চাপই তাঁর অনুপ্রেরণা বলে জানিয়েছেন তিনি।
48
তিন মহাকাশচারীই স্পেসস্যুট পরে স্পেসওয়াকের জন্য ৬০০০ ঘন্টারও বেশি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সম্পূর্ণ স্পেস্যুট পরে জলের নিচে কয়েকশো বার সামারসল্ট দিয়েছেন। স্পেসওয়াক করে স্পেস স্টেশন মেরামতের অনুশীলনের জন্য স্পেসস্যুট পরে সুইমিং পুলে হাঁটাহাটি করে প্রস্তুতি নিয়েছেন।
58
তিয়াংগং মহাকাশ স্টেশনে তিন মাস ধরে থাকবেন তাঁরা। এর জন্য ১২০ ধরণের খাদ্য এবং শারীরিক কসরতের জন্য 'স্পেস ট্রেডমিল' নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এই খাদ্যগুলি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। ৫৫ ফুট দীর্ঘ এবং ১৪ ফুট ব্যাসের 'তিয়ানহে'র সিলিন্ডারে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা শোয়ার জায়গা রয়েছে। তবে তিনজনকে একটিই বাথরুম ভাগ করতে হবে। খাওয়ার জায়গাও একটিই। এছাড়া আছে একটি যোগাযোগ কেন্দ্র, যেখান থেকে ইমেল পাঠানো এবং পৃথিবীতে ভিডিও কল করা যাবে।
68
তিয়াংগং স্পেস স্টেশনের মূল অংশ 'তিয়ানহে'র গায়ে গিয়ে লাগবে শেনঝাউ-১২ মহাকাশযানটি। তারপর, নাই, লিউ এবং তাং মহাকাশানের সিস্টেমগুলি চালানোর ব্যবস্থা, রক্ষণাবেক্ষণ, স্পেসওয়াক পরিচালনা এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করবেন।
78
বেজিং-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সোলার প্যানেলগুলি লাগানো এবং দুটি পরীক্ষাগার মডিউল সংযুক্তিসহ কক্ষপথে টিয়াংগং মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ করতে আগামী দেড় বছরে আরও আটটি অভিযান চালানো হবে। গত এপ্রিল মাসে টিয়াংগং মহাকাশ কেন্দ্রের মূল অংশটি পাঠানো হয়েছিল। এর আগে চিন আরো দুটি পরীক্ষামূলক মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের কাজ পরিচালনা করেছে।
88
তিয়াংগং স্টেশন স্থাপনের কাজ একবার সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) এর মতোই ছয় মাস পর্যন্ত নভোশ্চরদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করতে পারবে। কমপক্ষে ১০ বছর কাজ করার মতো সক্রিয় থাকবে এই মহাকাশ কেন্দ্র, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।