ছোটবেলা থেকেই সিদ্ধান্ত নেন, সন্ন্যাস নিয়ে গরিব আর্তদের সেবায় নিয়োজিত করবেন নিজেকে। তা ভেবেই সুদূর আলবেনিয়া ছেড়ে মানুষ সেবার টানে ভারতে এসেছিলেন তিনি। এই শহরকে ভালোবেসে এখানেই আমৃত্যু থেকে গিয়েছে সারা বিশ্বের কাছে কলকাতাকে উপরে তুলে ধরেছিলেন তিনি।
deblina dey | Published : Aug 26, 2019 8:38 AM IST
দেশের মানুষের কাছে এই মহিয়ষী এক নিদর্শন হয়ে রয়েছেন। ১৯১০ সালের ২৬ অগাস্ট যুগশ্লোভিয়ার (অধুনা মেসিডোনিয়া) স্কোপিয়ে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল মেরি টেরেসা বোজাক্সিউ। তিনি ছিলেন তাঁর পিতা-মাতার কনিষ্ঠ সন্তান।
১৯১৯ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। পিতার মৃত্যুর পরে তাঁর মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। ছোটবেলা থেকে তিঁনি ধর্ম সংক্রান্ত কাজকর্ম করতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন।
মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় সন্ন্যাস জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এর ঠিক ছয় বছর পরে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং যোগ দেন সিস্টার অফ লরেটো সংস্থায়। ধর্ম প্রচারক হিসাবে কাজ শুরু করার পরে তাঁর আর কোনও দিন তাঁর মা ও দিদির সঙ্গে দেখা হয়নি।
টেরেসা প্রথমে ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন এবং এই শিক্ষকতার সূত্র ধরেই তিনি ভারতে আসেন। তবে শিক্ষকতা নয় মাদার টেরেসার ভারতে আগমনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সমাজসেবা। এই সমাজসেবা তাঁকে আজ অমর করে রেখেছে। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসাবে প্রথম শপথ নেন।
সন্ন্যাস গ্রহণের সময়েই তাঁর নাম পরিবর্তন করেন এবং তাঁর নাম রাখা হয় টেরেসা। পরবর্তীকালে তাঁকে অবশ্য সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য চূড়ান্ত শপথ নিতে হয়েছিল। সেই শপথ অবশ্য তিনি নিয়েছিলেন ১৯৩৭ সালের ১৪ মে পূর্ব কলকাতার একটি লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময়।
১৮৪৮ সাল থেকে টেরেসা জনসাধারণের মধ্যে ধর্ম প্রচার করা শুরু করেন। সেই সময়েই তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পোপের অনুপতি নিয়ে তিনি সেই সময়ে কলকাতার ১৪নং ক্রিক লেনের একটি ছোট ঘরকে কেন্দ্র করে মানব সেবার কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে তাঁর দিনগুলো বেশ কষ্টের মধ্যে কাটলেও পরে আস্তে আস্তে সবটাই তাঁর অভ্যাস হয়ে যায়।
গরিবদের জন্য খাদ্য ও অর্থ সংগ্রহের জন্য তাঁকে মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরতে হত সেই সময়ে। পরে অবশ্য অবস্থার পরিবর্তন হয়। তাঁর কাজ মানুষের নজরে আসে ফলে সাধারণ মানুষও তাঁর পাশে দাড়াতে শুরু করে। ১৯৫০ সালের ৭ অক্টোবর তিনি কলকাতায় 'মিশনারিজ অব চ্যারিটি' প্রতিষ্ঠা করেন।
মাদার টেরেসা প্রথম এই কুষ্ঠরোগীদের তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁর আশ্রমে ঠাঁই দিতে থাকেন এবং তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কুষ্ঠরোগীদের নিয়ে তাঁর কাজ শুধু ভারতবর্ষে নয় বিশ্বজুড়ে বন্দিত হয়েছিল। বহু কুষ্ঠরোগী মাদার টেরাসার সেবায় সুস্থ হয়ে জীবনে এক নতুন দিশা পেয়েছিলেন। মিশনারিজ অফ চ্যারিটি তৈরির সময় মাদার তাঁর সঙ্গে পেয়েছিলেন মাত্র ১০ জন সহযোগীনিকে। এছাড়াও তিনি গড়ে তোলেন শিশুভবন যা তিনি গড়ে তুলেছিলেন অনাথ শিশুদের জন্য।
১৯৯৭ সালের ১৩ মার্চ তিনি মিশনারিজ অফ চ্যারিটির পদ থেকে সড়ে দাঁড়ান প্রবল অসুস্থ মাদার। ক্রমশ তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। সেই বছরেরই ৫ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পরে কেটে গেছে ২২টা বছর, তবে মানুষের জন্য তাঁর আত্মবলিদান আজও তাঁকে মানুষের মনে বাঁচিয়ে রেখেছে।