একাধিক স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে শেষ হল অলিম্পিক্সে ভারতের নবম দিন, জেনে নিন বিস্তারিত
ডিসকাস থ্রোয়ে কমলপ্রীত কওর ফাইনালে ওঠার খবরে দিনটা শুরু হলেও, একাধিক স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়েই শেষ হল টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের নবম দিন। সিন্ধু সোনার পদক জয়ের স্বপ্ন শেষের পাশাপাশি কোয়ার্টার থেকে বিদায় নিলেন পুজা রানি। এক ঝলকে দেখে নিন ভারতের নবম দিনের পারফরমেন্স।
ডিস্কাস থ্রো- ডিস্কাস থ্রোয়ে কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে অংশ নিয়েছিলেন ভারতের দুই অ্যাথলিট। একজন অভিজ্ঞ সীমা পুনিয়া ও অপরজন কমলপ্রীত কৌর। যোগ্যতা অর্জন পর্বে নিরাশ করেন সীমা পুনিয়া। অন্যদিকে চমক দিয়ে সরাসরি ফাইনালে যোগ্যতা অর্জন করে নিলেন তরুণ কমলপ্রীত কৌর। কমলপ্রীত নিজের দ্বিতীয় থ্রোয়েই ৬৩.৯৭ মিটার থ্রো করে একটুর জন্য ফসকে যান। কিন্তু তৃতীয় থ্রোয়ে তিনি ৬৪ মিটার করে ফেলেন। শুধু সরাসরি ফাইনালের কেলার যোগ্যতা অর্জন করাই নয়, কলমপ্রীত কৌর যোগ্যতা অর্জন পর্বে শেষ করেন দ্বিতীয় স্থানে।
হকি- টোকিও অলিম্পিক্সে মহিলা হকিতে নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও গ্রেট ব্রিটেনের কাছে পরপর তিনটি ম্যাচ হেরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ভারতীয় মহিলা হকি দলের। কিন্তু গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচ পরপর জিতে এখনও নকআউটে যাওয়ার আশা টিকিয়ে রাখল ভারতীয় মহিলা দল। পঞ্চম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪-৩ গোলে হারাল টিম ইন্ডিয়া। রুদ্ধশ্বাস ম্য়াচে জয় ছিনিয়ে নেয় রানি রামপালের দল।
হ্যাটট্রিক করে ইতিহাসেপ পাতায় বন্দনা- দক্ষিণ আফ্রিকা বিরুদ্ধে শনিবার ভারতের ৪-৩ ব্যবধানে জয়ে গুরুত্ব ভূমিকা নেন ভারতের বন্দনা কাটারিয়া। ভারতের ৪ গোলের মধ্যে তিনটি গোল করে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। তার দুরন্ত ফর্মের সৌজন্যেই জয় পায় ভারতীয় দল। হ্যাটট্রিট করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন বন্দনা কাটারিয়া। বন্দনা হলেন মহিলা হকির প্রথম প্লেয়ার, যিনি অলিম্পিক্সে হ্যাটট্রিক করলেন।
ব্যাডমিন্টন- স্বপ্নভঙ্গ ১৩০ কোটি দেশবাসীর। টানা তিন ম্যাচে দুরন্ত ফর্ম দেখিয়ে টোকিও অলিম্পিক্সে ব্যাডমিন্টনে সেমি ফাইনালে উঠেছিলেন পিভি সিন্ধু। সব ম্যাচ জিতেছিলেন স্ট্রেট সেটে। সিন্ধুর কাছে গোল্ড জয়ের স্বপ্ন দেখছিল গোটা দেশ। সিন্ধুর স্বপ্নও ছিল অলিম্পিকে সোনার পদক জয়। কিন্তু সেমি ফাইনালে তাই জু-র কাছে হেরে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল পিভি সিন্ধুর। স্ট্রেট সেটে ম্যাচ হারলেন ভারতীয় তারকা শাটলার। সেইভাবে লড়াই দিতে পারলেন না তিনি। খেলার ফল ১৮-২১, ১২-২১।
ইকুয়েস্ট্রিয়ান- অলিম্পিক্সের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় তৈরি করছেন ফওয়াদ মির্জা। প্রথম বার অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করেছেন ভারতের এই অশ্বারোহী। ইকুয়েস্ট্রিয়ান বা অশ্বারোহণের ব্যক্তিগত ইভেন্টে প্রত্যেক দিনই নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন ফওয়াদ। শুক্রবারের পরে শনিবারও ফর্মে পাওয়া গেল ফওয়াদকে। এ দিন ২৮ পয়েন্ট নিয়ে শনিবার ৬২ জনের মধ্যে নবম স্থান অর্জন করেন ফওয়াদ মির্জা।
তিরন্দাজি- টোকিও অলিম্পিকে তিরন্দাজীতে পদক জয়ের আশা জাগিয়েও নিরাশ করেছেন বাংলার অতনু দাস। দুরন্ত ছন্দেও ছিলেন তিনি। প্রথম রাউন্ডে লন্ডন অলিম্পিক্সের ব্যক্তিগত বিভাগে এবং চলতি টোকিও অলিম্পিক্সের দলগত বিভাগে সোনা জয়ী তথা প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জিনহিয়েককে হারিয়েছিলেন অতনু। যার ফলে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন সকলেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রি কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে যেতে হয়েছে ভারতের তারকা তিরন্দাজকে। প্রি-কোয়ার্টারে অতনুর প্রতিপক্ষ ছিলেন জাপানের তাকাহারু ফুরুকাওয়া। তাকাহারুর সঙ্গে লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত ৬-৪-এ হেরে গেলেন তিনি।
বক্সিং (অমিত পঙ্ঘল) ভারতের হয়ে মেডেল জয়ের সবচেয়ে বড় দাবিদারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অমিত পাঙ্গাল। কিন্তু, অপ্রত্যাশিত হারে ৫২ কেজি বিভাগের দ্বিতীয় রাউন্ডেই তাঁর যাত্রা থেমে গেল। প্রথম রাউন্ডে বাই পেয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে গতবারের রিও অলিম্পিক্সে রুপো জয়ী যুবেরজেন মার্টিনেজের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিশ্বের এক নম্বর বক্সার। কলম্বিয়ার বক্সারের কাছে বিচারকদের ডিসিশনে ১-৪ ব্যবধানে পরাস্ত হন ভারতের মেডেল জয়ের অন্যতম বড় দাবিদার।
বক্সিং (পুজা রানি) লভলিনা বরগোহাঁইয়ের পর বক্সিংয়ে পুজা রানির কাছে পদকের আশা করেছিল গোটা দেশ। প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে পুজার দুরন্ত ফর্ম দেখে আশ্বস্ত হয়েছিল সকলেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ আটের লড়াইতেই থামতে হল পুজা রানিকে। বক্সিংয়ে মিডলওয়েট ৭৫ কেজি বিভাগে চিনা প্রতিপক্ষ লি কিয়াংয়ের বিরুদ্ধে তেমন একটা লড়াই দিতে পারলেন না পুজা। ৫-০ ব্যবধানে ম্যাচ হারতে হয় ভারতীয় বক্সারকে। ফলে খালি হাতেই টোকিও থেকে ফিরতে হচ্ছে পুজা রানিকে।
শুটিং- ৫০ মিটার রাইফেল মোট তিনটি পজিশনে ভারতের হয়ে এই ইভেন্টে প্রতীদ্বন্দ্বীতা করেন অঞ্জুম মৌদগিল ও তেজস্বিনী সাওয়ান্ত। প্রত্যেক পজিশনে মোট চারটি সিরিজে মোট ৪০ করে শট নেন সকল শুটাররা। প্রোন এন্ড নিলিং সিরিজে কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন অঞ্জুম। প্রথম দুই রাউন্ড শেষে আট নম্বরেই ছিলেন অঞ্জুম। তার স্কোর ছিল ৭৮৫ পয়েন্ট। শেষ স্ট্যান্ডিং ইভেন্টে লড়াই করেও হার মানতে হয় অঞ্জুমকে। ইভেন্টে মোট ১১৬৭ পয়েন্ট স্কোর করেন অঞ্জুম মৌদগিল। শেষ পর্যন্ত তিনি শেষ করেন ১৫ নম্বর স্থানে। অপরদিকে একেবারেই হতাশাজনক পারফরমেন্স করে ১১৫৪ পয়েন্ট নিয়ে ৫৭ জনের মধ্যে ৩৩ নম্বরে শেষ করেন তেজস্বিনী সাওয়ান্ত। প্রথম ৮ জন ফাইনালে যোগ্যতা অর্জন করায় অলিম্পিকের মঞ্চ থেকে বিদায় ভারতীয় এই শুটারদের।
লং জাম্প- এ দিন নিজের সেরা পারফরম্যান্সের ধারেকাছেও যেতে পারেননি লং জাম্পার মুরলি শ্রীশঙ্কর। শনিবার লং জাম্পের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে ৮ মিটারই টপকাতে পারেননি তিনি। প্রথম বার ৭.৬৯ মিটার লাফিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বার ৭.৫১ মিটার লাফিয়েছিলেন। আর তৃতীয় বার ৭.৪৩ লাফান মুরলি। এ দিকে মুরলি শ্রীলশঙ্করের নিজের সেরা হল লাফ হল ৮.২৬ মিটার। শনিবার তার ধারে কাছে পোঁছতে পারলে, মুরলি ফাইনালে উঠে যেতেন।