ফেভারিট ডিশ ইডলি আর সম্বর, চেন্নাইয়ের শিকড়কে এখনও ভোলেননি মার্কিন নির্বাচণে ঝড় তোলা 'কমলা'

হোয়াইট হাউসের দৌড়ে ট্রাম্পের সঙ্গে লড়বেন যিনি সেই জো বাইডেন তাঁর ‘রানিং মেট’ হিসাবে বেছে নিয়েছেন এমনই এক মহিলাকে যাঁর সব থেকে ফেভারিট ডিশের মধ্যে পড়ে ইডলি এবং সম্বর। স্বাভাবিক, শ্যামলা গোপালন হ্যারিসের মেয়ে কমলাদেবী হ্যারিস সংক্ষেপে কমলা হ্যারিস কখনওই তাঁর নিজের শিকড়কে ভোলেননি। সত্যি বলতে ভুলতে চানওনি কখনও। আত্মকথায় লিখেছেন, ‘শ্যামলা গোপালন হ্যারিসের মেয়ে— এই পরিচয়টুকুর থেকে বড় কোনও সম্মান পৃথিবীতে হতে পারে বলে আমি বিশ্বাসই করি না।’ 

Asianet News Bangla | Published : Aug 13, 2020 11:27 AM IST / Updated: Aug 13 2020, 08:18 PM IST

122
ফেভারিট ডিশ ইডলি আর সম্বর, চেন্নাইয়ের  শিকড়কে এখনও ভোলেননি মার্কিন নির্বাচণে ঝড় তোলা 'কমলা'

সমর্থকদের ই-মেল করে খবরটা দিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। ঘোষণা করেছিলেন, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর সহযোদ্ধার নাম। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসকে মনোনীত করার সেই খবর চাউর হতেই আবেগের বন্যায় ভাসছেন ডেমোক্র্যাট কর্মী-সমর্থকেরা।

222

ওই ই-মেলে গত কয়েক মাসের করোনা পরিস্থিতি ও সম্প্রতি বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠা আমেরিকার প্রসঙ্গে টেনে বাইডেন লিখেছেন, ‘সময়টা স্বাভাবিক নয়।... আমার পাশে সহযোদ্ধা হিসেবে এমন এক জনকে চাই যিনি সপ্রতিভ, কড়়া এবং নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। কমলাই সেই ব্যক্তি।’’ ক্যালিফর্নিয়ার সেনেটর, ৫৫ বছরের কমলা নিজেও ট্যুইট করে বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

322

কমলা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। বাবা জামাইকার বাসিন্দা, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। মা শ্যামলা গোপালন চেন্নাইবাসী ভারতীয়। আমেরিকার ইতিহাসে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনীত হওয়া প্রথম এশীয়-মার্কিন এবং কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হলেন কমলাই। তাই বাইডেনের এই ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত এশীয়-মার্কিন, ইন্দো-মার্কিন এবং কৃষ্ণাঙ্গদের একটা বড় অংশ। কমলার মনোনীত হওয়ার খবরে খুশির হাওয়া তাঁর পরিবারও। 

422

বাইডেনের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কমলার বোন মায়া টুইটারে একটি আবেগঘন বার্তা পোস্ট করেন। দিদির নানা ছবির কোলাজ দিয়ে সাজানো সেই বার্তায় মায়া লিখেছেন, ‘‘আমাদের মাকে না জানলে কমলাকে জানা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ওঁকে মিস করছি। তবে জানি, মা আর আমাদের পূর্বপুরুষেরা আজ আনন্দিত।’’

522

বাইডেনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পেপসিকোর প্রাক্তন প্রধান ইন্দ্রা নুয়ি-সহ বহু ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ইন্দ্রার মতে, ‘এটা দারুণ সিদ্ধান্ত’ এবং ‘আমেরিকার নাগরিকদের কাছে গর্বের মুহূর্ত।’ 

622

অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার টুইট, ‘সব বর্ণের, সমস্ত মহিলার কাছে এটি ঐতিহাসিক, বদল-আনা এবং গর্বের মুহূর্ত।’’

722

 মার্কিন রাজনীতির সমীক্ষাকারী এক ইন্দো-মার্কিন সংস্থার এগ্‌জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর নীল মাখিজা এই মনোনয়নকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, জো-কমলা জুটির প্রচারে তাঁরা ১ কোটি ডলার সংগ্রহ করবেন।

822

বাইডেনের সিদ্ধান্তে কার্যত খুশি ভারতীয় বংশোদ্ভূতেরা, যাঁরা এখন এ দেশের ভোটারদের একটা বড় অংশ। মার্কিন সরকারের ভিসা নীতি সংক্রান্ত একাধিক সিদ্ধান্তে যখন অনাবাসী ভারতীয়েরা আশঙ্কার মেঘ দেখছেন, তখন বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত অনেকের মনেই আশার আলো জোগাচ্ছে।

922

আমেরিকার রাজনীতিতে ৫৫ বছর বয়সি কমলার স্পষ্টবক্তা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এক হাত নিয়ে তিনি যেমন বলতে পারেন, ‘‘আমেরিকার মানুষের স্বপ্ন ও মূল্যবোধ ধ্বংস হতে চলেছে।’’

1022

তেমনই ডেমোক্র্যাটদের এক বিতর্ক সভায় বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনকে বর্ণবিদ্বেষ প্রসঙ্গে আক্রমণ করতে ছাড়েন না কমলা। কারণ তিনি এমনই! তাই হয়তো তিনি জোরের সঙ্গে বলতে পারেন, ‘‘আমি যা আমি তাই। আমি তাতেই স্বচ্ছন্দ।’’

1122

আত্মজীবনী ‘দ্য ট্রুথস উই হোল্ড’-এ কমলা লিখেছিলেন, তাঁর জীবনে তাঁর মা একদা চেন্নাইবাসী শ্যামলা গোপালন বড় অনুপ্রেরণা। কমলা-জননী ছিলেন নাগরিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মী। গত শতকের ষাট-সত্তর দশক থেকেই শ্যামলা আফ্রো-মার্কিন সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেন। বিয়ে করেন জামাইকার নাগরিক ডোনাল্ড হ্যারিসকে। কৃষ্ণাঙ্গ স্বামীর সঙ্গে প্রতিবাদ-আন্দোলনেও পা মিলিয়েছিলেন তিনি। 

1222

মায়ের ছাপ তো তাঁর জীবনে সব থেকে গভীর ঠিকই, কিন্তু কমলা ভুলতে পারেন না তাঁর দাদু-দিদিমার কথাও। একটি সাক্ষাৎকারে একবার নিজেই জানিয়েছিলেন তাঁর একেবারে ছোটবেলার প্রিয় কিছু স্মৃতির কথা। মাদ্রাজ তখনও চেন্নাই হয়নি, দু’বছর অন্তর বাবা-মাকে দেখতে আসতেন শ্যামলা গোপালন, সঙ্গে দুই মেয়ে কমলা এবং মায়া।

1322

কমলার আজও মনে পড়ে কী ভাবে রোজ সকালবেলা বন্ধুদের সঙ্গে সমুদ্রের তীরে হেঁটে বেড়াতেন তার দাদু পিভি গোপালন। পিভি নিজে দেশের জন্য লড়েছেন, স্বাধীন দেশে প্রশাসনের খুবই উঁচু দায়িত্ব সামলেছেন এবং সারা জীবন ধরেই তাঁর লড়াই ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই মর্নিং ওয়াকের সময় বাচ্চা কমলা থাকত দাদুর পাশে আর চুপ করে শুনত কী ভাবে দাদু এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা সুবিচার নিয়ে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে আর রাজনীতির নানা ওঠাপড়া নিয়ে কথা বলছেন। কমলা পরে বলেছেন, সেই সব মর্নিং ওয়াক থেকে জীবনে খুব দামি একটা শিক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। সততার জন্য লড়াই করার শিক্ষা।

1422

পাশাপাশি দিদিমা রাজম গোপালন-এর ছায়াও কমলার স্বাধীনচেতা চরিত্রের মধ্যে স্পষ্ট। মাত্র বারো বছরে বাগদত্তা এবং ষোলোয় পৌঁছে বিয়ে হয়ে যাওয়া রাজম স্রেফ ঘরের মধ্যেই আটকে রাখেননি নিজেকে। যে সব মেয়ে অত্যাচারের শিকার, তাদের জন্য বার বার সরব হয়েছেন। গত শতকের চল্লিশের দশকে রাজম নিজে ফোক্স ভাগেন গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়াতেন চতুর্দিক, গরিব মেয়েদের শেখাতেন জন্ম নিয়ন্ত্রণের নানা রকম সুবিধা। আত্মকথায় কমলা লিখছেন— ‘আমার দাদু তো ঠাট্টা করে বলতেন দিদিমার এই অ্যাকটিভিজিমের ঠেলায় তার কেরিয়ারটাই না বরবাদ হয়ে যায়। দিদিমা অবশ্য সে সব কথায় পাত্তাই দেননি কোনও দিন।’ 

1522

আমেরিকা যখন সিভিল রাইটস আন্দোলনে উত্তাল, তখনই আস্তে আস্তে বড় হচ্ছেন কমলা। বাবা-মা সেই ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে হাঁটতেন মিছিলে, জড়ো হতেন বিভিন্ন জমায়েতে। কমলা জানাচ্ছেন, তাঁর একেবারে ছোটবেলার ঝাপসা স্মৃতির মধ্যে আছে চারিদিকে অসংখ্য পা হেঁটে চলেছে সারিবদ্ধ ভাবে। আর সেই মিছিল থেকে নানা রকম স্লোগান উঠছে। মা শ্যামলা জানিয়েছিলেন তাঁর বড় মেয়েটি অর্থাৎ কমলার মুখে যখন সবে বুলি ফুটেছে, তখন সে মাঝেমাঝেই কান্নাকাটি করত আর কী চাই জিজ্ঞাসা করলে ঠোঁট ফুলিয়ে আধো আধো গলায় বলত, ‘ফিদম’।

1622

বাবা জামাইকান মা ভারতীয়, ফলে জন্মসূত্রে নানা রকম সংস্কৃতির মধ্যে মেলামেশা করার সুযোগ পেয়েছিলেন কমলা। ২০০৩-এ দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, ‘আমার সব বন্ধুরাই ছিল ব্ল্যাক আর আমরা একসঙ্গে জড়ো হয়ে নানা রকম ভারতীয় খাবার-দাবার রান্না করতাম। হাতে হেনাও করতাম খুব মজা করে।’ এমন মিশ্র সংস্কৃতির কারণে দুই বোন কমলা ও মায়া কখনও হয়তো ব্ল্যাক ব্যাপটিস্ট গির্জায় গিয়ে কয়্যারে গেয়েছে আবার ফিরে এসেই মার হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে হাঁটা দিয়েছে হিন্দু কোনও মন্দিরের দিকে। এই নানামুখী সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠার জন্যেই কমলার নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগও হয়েছিল। কখনও বাবার সঙ্গে জামাইকা, কখনও মায়ের সঙ্গে ভারত। 

1722

পরবর্তী সময় বিবাহ বিচ্ছেদের পরে দুই মেয়ে মায়া ও কমলাকে নিয়ে আন্দোলনের স্লোগানে গলা মিলিয়েছেন বিজ্ঞাবী শ্যামলা। ডেমোক্র্যাটদের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, ‘‘মা জানতেন, তাঁর মেয়েদের আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবেই দেখা হবে। মা ঠিক করেছিলেন, মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক হিসেবেই বড় করে তুলবেন।’’ ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচয় ছিল কমলার, তবে মূল ভিত্তি ছিল আফ্রো-মার্কিন জীবনটাই।

1822

ওকল্যান্ড শহরে জন্ম কমলার। ক্যালিফর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি আইন নিয়ে পাশ করার পরে অ্যালামিডা কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অফিসে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৩ সালে তিনি সান ফ্রান্সিসকোর অ্যাটর্নি হন। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কমলা দু’দফায় ক্যানিফর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। তিনিই ক্যালিফর্নিয়ার প্রথম মহিলা ও কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাটর্নি জেনারেল। সেখান থেকেই তিনি সেনেটর নির্বাচিত হন। 

1922

ক্যালিফর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে একটি ঐতিহাসিক মামলা জিতেছিলেন কমলা। বড় বড় ব্যাঙ্কগুলি সেখানে প্রচুর বাড়ি বাজেয়াপ্ত করছিল। সেই প্রদেশের বাসিন্দাদের পক্ষ নেন তিনি। ব্যাঙ্কগুলির পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জেতেন। বাসিন্দাদের পক্ষে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার সেটেলমেন্ট করে নজির গড়েছিলেন।

2022

বারাক ওবামার মতো কমলাকে শুনতে হয়েছে, ‘আপনি কালো, কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গদের মতো কালো নন। আপনি মার্কিন নন, তাই ভোটে লড়ার অধিকার নেই।’’ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, ভোটে ফায়দা তুলতে তিনি নিজেকে আফ্রো-আমেরিকান প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ সব প্রচারে অবশ্য তেমন গুরুত্ব দেন না কমলা। আত্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করলে তাঁর স্পষ্ট জবাব, ‘‘আমি গর্বিত মার্কিন নাগরিক।’’

2122

২০১৬-র একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘রোজকার রুটিনে দুটি জিনিস আমাকে রাখতেই হবে। এক, ওয়ার্ক আউট। দুই, ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া।’ প্রথমটির মতো দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়েও খুবই উৎসাহী কমলা। নিজে রান্না করতে ভালোবাসেন। প্রায়ই সেই সব রান্নাবান্নায় তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন স্বামী ডাগ এমহফ। 

2222

পেশায় আইনজীবী ডগলাস এমহফকে পঞ্চাশ বছর বয়সে বিয়ে করেন কমলা। তাঁর কথায়, ডগলাস খুবই ভাল রান্না করেন। 

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos