জমিদারি শাসন-ব্রিটিশ বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র আন্দোলন, নেতৃত্বে ছিলেন সিধু-কানু, আজ তা মলিন ইতিহাস

প্রথমেই প্রশ্ন জাগে কে এই সিধু-কানু। পড়ুয়ারা বইয়ের দুটো পাতার দৌলতে জানে, কেউ পরীক্ষায় মুখস্থের খাতিরে জানে, কেউ কেউ ইতিহাস ও দেশকে ভালোবেসে জানে। আর বাকিরা! 

Jayita Chandra | Published : Aug 9, 2021 7:06 AM IST / Updated: Aug 09 2021, 12:38 PM IST

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসস ক্রমেই পাতা উল্টে চলেছে। প্রতিটা মুহূর্তে রচনা হচ্ছে এক নতুন অধ্যায়। তাই বলে কি অতীত ফিকে হতে দেওয়া যায়! হয় তো নয়। আর তা উচিতও নয়। অতীতের ভিতেই যে গড়ে ওঠে প্রতিটা বর্তমান। প্রাণ বাজি রেখে সাহসীকতায় ভর করে যে মানুষগুলো একটা সময় দেশের বুকে স্বাধীনতা ফেরানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ ইতিহাস কি সকলকে সমান মর্যাদা দিয়েছে! সমসম্মানে কি তাঁদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়! নাকি হাতে গোনা কয়েকটা নাম ও ঘটনাই ভারতের স্বাধীনতার ধারক ও বাহক হয়ে উঠেছে!

এই ছবিটা বিশেষ করে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সিধু কানু-র ক্ষেত্রে। আর প্রথমেই প্রশ্ন জাগে কে এই সিধু-কানু। পড়ুয়ারা বইয়ের দুটো পাতার দৌলতে জানে, কেউ পরীক্ষায় মুখস্থের খাতিরে জানে, কেউ কেউ ইতিহাস ও দেশকে ভালোবেসে জানে। আর বাকিরা! ট্যাংরায় হুল দিবসে তা স্পষ্ট হয়ে যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ফ্যাকাসে মুখে যখন অনেকেই প্রশ্ন করে বসেন কে এই সিধু-কানু। এথচ ১৮৫৫ সালে প্রথম সাঁওতাল সম্প্রদায় যখন রুক্ষে দাঁড়িয়েছিল জমিদারি শাসন, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে, ঠিক তখনই লেখা শুরু হয়েছিল স্বাধীন ভারতের ভবিষ্যত। 

আরও পড়ুন- বিদ্যুতের বিল আকাশছোঁয়া, এগুলি মেনে চললে বিল আসবে আয়ত্তের মধ্যেই

আরও পড়ুন- কী এমন হয়েছিল বিয়ের আসরে, যা দেখে রীতি ভুলে আঁতকে উঠলেন নবদম্পতি

১৮৫৫ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সান্তাল হুলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিধু মুরমু-কানু মুরমু। আজও ৩০ জুন পালিত হয় হুল দিবস। এই আন্দোলনের আঁতুরঘর ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর জেলা। বদলাচ্ছে তখন দেশের রূপ, ক্রমেই বাড়তে শোষণের রাজনীতি, আর তখনই প্রতিবাদের রণনীতি সাজিয়ে প্রথম সশস্ত্র রক্ষে দাঁড়িয়েছিল সাঁওতালরাই। এটাই ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র আন্দোলন। আন্দোলনের মাঝেই ইংরেজের গুলিতে প্রাণ হারান সিধু, ফাঁসির মঞ্চে স্থান হয় কানুর। তবে প্রতিবাদের যেদ, সাহসের বীচ বপন করেছিলেন প্রথম তাঁরাই। একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা।

তাই শোষণহীন স্বরাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন ভাগনাদিহির মাঠে ১০ হাজার সাঁওতাল সিধু ও কানুর নেতৃত্বে সমবেত হয়েছিল। এ সমাবেশেই সিধু ও কানু সাঁওতালদের বিদ্রোহের নির্দেশ দেন। তবে আজ অনেকের কাছেই এই ইতিহাস ক্রমেই মলিন হয়ে উঠেছে।  স্মৃতিতে ফিকে হয়েছে তাঁদের অবদান। স্বাধীনতার দিবসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আবারও তাঁদের স্মরণ করার পালা। ফাঁসির মঞ্চ থেকে কানু বলেছিলেন- "আমি আবার আসব, আবার সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলব।"

 
 

Share this article
click me!