ভারতীয় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন একজন বাঙালি। নাম ড. সচ্চিদানন্দ সিনহা। তিনিই ছিলেন ভারতের অন্তর্বর্তীকালীন প্রথম রাষ্ট্রপতি। তাঁর উদ্যোগেই গঠিত হয় বিহার রাজ্য।
ভারতীয় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন একজন বাঙালি। নাম ড. সচ্চিদানন্দ সিনহা, যিনি ছিলেন এই পরিষদের প্রবীণ সদস্য। গণপরিষদে তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি আচার্য কৃপালিনী তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন অন্যন্য সদস্যদের সাথে এবং তাঁর নাম প্রস্তাব করেন অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে।
১৯৪৬ সালে ৯ ডিসেম্বর ভারতের গণপরিষদ গঠিত হয় । আর এই একইদিনে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এক বাঙালি। নাম, সচ্চিদানন্দ সিনহা । পরে যখন পরোক্ষ নির্বাচন সংগঠিত হয় তখন ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন ।
নানান বিদ্রোহ বিপ্লবের পর ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দিল্লির কনস্টিটিউশন হলে জমায়েত হন। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বেশিরভাগ জনই ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং কংগ্রেস নেতা । গণপরিষদে তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি আচার্য জে বি কৃপালানি অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি পদের জন্য ড. সচ্চিদানন্দের নাম প্রস্তাব করেন । কৃপালানির এই প্রস্তাবে সবাই সমর্থন জানান। আর সেদিন এক বাঙালির নাম উঠে এসেছিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে। আর সেই বাঙালি সভাপতিত্ব করেছিলেন।
সচ্চিদানন্দ সিনহার জন্ম ১৮৭১ সালের ১০ নভেম্বর। বিহারের বক্সার এলাকার মুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও জন্মসূত্রে তিনি ও তাঁর পূর্বপুরুষ ছিলেন বাঙালি । সচ্চিদানন্দের বাবা বক্সি শিবপ্রসাদ সিনহা ডুমরাওঁ মহারাজের মুখ্য তহশিলদার ছিলেন । গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন সচ্চিদানন্দ। পরে ১৮৮৯ সালে তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে ইংল্যান্ডে চলে যান। দেশে ফিরে ১৮৯৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেন।
একজন সফল আইনব্যবসায়ী হিসেবে সচ্চিদানন্দের নাম সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতা হাইকোর্টের পাশাপাশি তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টেও দীর্ঘদিন আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিশ করেন। প্রায় ১০ বছরের মত তিনি আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিশ করেন এলাহাবাদ হাইকোর্টে। জাতীয় কংগ্রেসের একাধিক নেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বেশ ঘনিষ্ঠ। সচ্চিদানন্দ একজন সফল আইনজীবীর পাশাপাশি একজন দক্ষ সাংবাদিক ছিলেন। তিনি 'ইন্ডিয়ান পিপলস' ও 'হিন্দুস্তান রিভিউ' নামে দুটি সংবাদপত্রের সম্পাদনা করেন দীর্ঘদিন। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নানাভাবে সাহায্য করেন সচ্চিদানন্দ।
এছাড়া পৃথক বিহার রাজ্যের জন্য তিনি প্রথম আন্দোলন শুরু করেন। আর এই আন্দোলনে হিন্দু ও মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার জন্য আবেদন করেন তিনি। তাঁর চেষ্টায় অবশেষে ১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই বিহারকে বাংলা থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়। ঘোষিত হয় পৃথক বিহার রাজ্য। একের পর এক আন্দোলন সংবিধান রচনার জন্য বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে শারীরিক ভাবে ভেঙে পড়েন সচ্চিদানন্দ।
বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা কারণে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন সচ্চিদানন্দ। ১৯৫০ সাল। রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ তিনদিনের পটনা সফরে গিয়ে দেখা করেন সচ্চিদানন্দের সাথে। এই ঘটনার বেশ কয়েকদিন পরে ৬ মার্চ মারা যান ভারতের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি ড.সচ্চিদানন্দ সিনহা। এক প্রচার বিমুখ হারিয়ে যাওয়া বাঙালি।