"একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী।"
এই বাংলা দেশাত্মবোধক গানটি রচনা ও সুর করেন বাঁকুড়ার লোককবি পীতাম্বর দাস মতান্তরে মুকুন্দ দাস। এটি ভারতীয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর সম্মানে রচিত। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মুখ ক্ষুদিরাম বসু। তাই এখনও বিশেষ সম্মানে এই গানটি আজও জনপ্রিয়। ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সুভাষচন্দ্র চলচ্চিত্রে এই গানটি ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানে গানটির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
আরও পড়ুন- মাত্র ৫ বছর বয়সে মা হয়েছিলেন লিনা, চিকিৎসা বিজ্ঞান আজও খুঁজছে উত্তর
ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি, বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা, কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার। তার মার নাম লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর তিনি তার মায়ের চতুর্থ সন্তান।
আরও পড়ুন- করোনা আবহে মরশুম বদলে বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ, সুস্থ থাকুন সহজ উপায়ে
ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে মিলে গাড়িতে ব্রিটিশ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড আছে ভেবে তাকে গুপ্তহত্যা করার জন্যে বোমা ছুঁড়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড অন্য একটা গাড়িতে বসেছিলেন, যে ঘটনার ফলে দুজন ব্রিটিশ মহিলার মৃত্যু হয়, যারা ছিলেন মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা। প্রফুল্ল চাকি গ্রেপ্তারের আগেই আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন। দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে তার বিচার হয় এবং অবশেষে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়। ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরাম বসুর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন, ভারতের কনিষ্ঠতম ভারতের বিপ্লবী অভিধায় নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে গিয়েছেন।
ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন প্রথম বাঙালি বিপ্লবী যাকে ব্রিটিশ সরকার ফাঁসি দিয়েছিল। ক্ষুদিরাম ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯০৮ সালের ১১ অগস্ট তার ফাঁসির নির্দেশ কার্যকর হয়। ফাঁসির সময় তার বয়স ছিল ১৮। তার ফাঁসি উপলক্ষে তাকে বিদায় জানানোর জন্য এই গানটি রচিত হয়েছিল। ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি উপলক্ষে প্রথম পুরুষে আখ্যানকবিতার আকারে এই দ্ব্যর্থবোধক গানটি রচিত। এই গানটির মূল বিষয়বস্তু হল ক্ষুদিরাম একাধারে নিজের মা এবং দেশমাতার থেকে ফাঁসির আগে বিদায় চাইছেন।
গানটির রচয়িতা হিসেবে চারণকবি মুকুন্দ দাসের নাম উল্লেখ রয়েছে। এই গানের রচয়িতা কে তা নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত অধিকাংশ গীতিসংগ্রহে আমি এই গানটির রচয়িতার নামের জায়গায় "অজ্ঞাত" কথাটির উল্লেখ রয়েছে। চারণকবি মুকুন্দ দাসের রচনাবলিতেও গানটির উল্লেখ নেই। তবে বাঁকুড়া জেলার মানুষের দাবী, এই গানটি বাঁকুড়া অঞ্চলের কোনও বাউলের রচনা। তবে কে এই গানের সঠিক রচয়িতা এই বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে আজও। সেই কারণে ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় দেওয়া নাম ও সোর্সটি ব্যবহার করা হয় সবক্ষেত্রে।