৩০ বছর ধরে করেছিলেন সংগ্রাম, ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনাই আমূল বদলে দিয়েছিল আবদুল জব্বারের জীবন

১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর রাত ভুলতে পারবে না ভারত

সেই রাতেই ঘটেছিল ভোপালের মারাত্মক গ্যাস দুর্ঘটনা

আর সেই দিন থেকেই শুরু হয়েছিল আব্দুল জব্বার-এর সংগ্রাম

যা চলেছিল পরবর্তী তিন দশক ধরে, তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে পর্যন্ত

১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর রাত দগদগে হয়ে রয়েছে ভারতের ইতিহাসে। সেই ভয়াবহ রাতেই ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড-এর কীটনাশক কারখানা থেকে লিক করেছিল মারাত্মক মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যু হয়েছিল ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের, মারাত্মক জখম হয়েছিলেন আরও কয়েক লক্ষ। আর তার পরের সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল আব্দুল জব্বার-এর সংগ্রাম, যা চলেছিল ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে পর্যন্ত। ভারত সরকার এই বছর তাঁর লড়াইকে সম্মান জানিয়ে তাঁকে মরণোত্তর পদ্মশ্রী পুরষ্কার দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর এই হার না মানা লড়াইয়ের কাহিনি।

১৯৮৪-তে স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় শিল্প বিপর্যয়ের সময় আব্দুল জব্বার-এর বয়স ছিল মাত্র ২৮ বছর। ওই ভয়াবহ ঘটনায় তিনি তাঁর মা, বাবা, ভাইকে হারিয়েছিলে। নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন 'লাং ফাইব্রোসিস' রোগে। এমনকী চোখের দৃষ্টি হারিয়ে গিয়েছিল ৫০ শতাংশ। কিন্তু, ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতি ভুলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দুর্গত মানুষদের সহায়তায়। প্রবল পরাক্রমী ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড সংস্থার বিরুদ্ধে বিপর্যস্ত মানুষদের লড়াইয়ের নেতা হয়ে উঠেছিলেন।

Latest Videos

তাঁর এই যাত্রা শুরু হয়েছিল একেবারে মর্মান্তিক 'দুর্ঘটনা'র সকাল থেকেই। বহু জখম মানুষকে তিনি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। শুধু জখমদেরই নয়, বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শিল্প বিপর্যয়ের প্রাণ হারানো অনেক নিথর দেহই তিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন মর্গে, ময়নাতদন্তের জন্য। কিন্তু, এটা ছিল সবে শুরু। তিন বছর পর ১৯৮৭ সালে তিনি 'ভোপাল গ্য়াস পিড়িত মহিলা উদ্যোগ সংগঠন' নামে একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ চালু করেছিলেন। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল ওই ভয়াবহ ঘটনায় মৃত ও ক্ষতিগ্রস্থদের এবং তাদের পরিবারের স্বার্থ রক্ষার জন্য সংগ্রাম। শীঘ্রই, জব্বারের সংগঠনে প্রায় ৩০,০০০ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন মহিলা।

এই সংগঠনই প্রথম দাবি তোলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ বা অর্থ সহায়তা দিলেই চলবে না, কর্মসংস্থানের সুযোগও দিতে হবে। জব্বারই তৈরি করে দিয়েছিলেন স্লোগান, 'খয়রাত নেহি, রোজগার চাহিয়ে' (অনুদান নয়, কাজ চাই)। দু বছর পর ১৯৮৯ সালে প্রথম সাফল্য পেয়েছিলেন জব্বার ও তাঁর সংগঠন। ওই বছর ভারত সরকার, ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড-কে ৪৭ কোটি ডলার মূল্যের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সময় সুপ্রিম কোর্টও তাতে সম্মতি দিয়েছিল। তবে সেই সময় মাত্র ১ লক্ষ ৫ হাজার মানুষ এই ঘটনায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে মানা হয়েছিল, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্য়াটা ছিল কয়েক গুণ বেশি।

তাই জব্বার ও তাঁর সংগঠন লড়াই থামায়নি। আর তাঁদের লড়াইয়ের ফলেই প্রায় ১ দশকের বেশি সময় পর একই সুপ্রিম কোর্ট, ভারত সরকারকে আরও ১৫০৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। আদালত মেনে নিয়েছিল, ওই মর্মান্তিক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যাটা ৫ লক্ষ ৭০ হাজারেরও বেশি। তাঁদের সকলেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। তবে শুধু ক্ষতিপূরণ পেলেই তো হল না, যাঁরা ওই ঘটনায় বেঁচে গিয়েছিলেন, তাঁদের প্রয়োজন ছিল উন্নত মানের চিকিৎসার। এর জন্য তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জব্বার রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা থেকে শুরু করে আদালতে একের পর এক মামলা দায়ের করা চালিয়ে গিয়েছিলেন। এর সঙ্গে তাঁর দাবি ছিল, ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড-এর স্থানীয় আধিকারিকদের শাস্তি দিতে হবে।

শুধু তাই নয়, ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগই শারীরিক দিক থেকে অক্ষম হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা যাতে নিজেদের মতো করে কাজ করার অবস্থায় আসেন, তার জন্য আব্দুল জব্বারের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল তাঁদের জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার-ও। সেইসঙ্গে প্রতি শনিবার ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে বৈঠকে বসতেন জব্বার। উদ্দেশ্য ছিল, জনগণের মন থেকে ওই ভয়াবহ রাতের স্মৃতি যেন ফিকে না হয়ে যায়। ১৯৮৪-এর একটি রাত আমূল বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবনের গতি। শেষ দিন পর্যন্ত গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যই নিবেদন করেছিলেন জীবন। তিনি না থাকলে হয়তো এই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেরই ভাগ্যে কিছুই জুটত না।

Share this article
click me!

Latest Videos

'ট্যাব কেলেঙ্কারিতে মমতা ও আইপ্যাক যুক্ত' বিস্ফোরক দাবি শুভেন্দু অধিকারীর | Suvendu Adhikari
'চুরি হবে অথচ তৃণমূলের নাম আসবে না তা হয় কখনও!' ট্যাব দুর্নীতিতে মমতাকে ধুয়ে দিলেন সুকান্ত!
ইসকনের পাশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কড়া বার্তা দিলেন বাংলাদেশকে? Narendra Modi
Suvendu Adhikari Live: বিরসা মুন্ডার জন্মদিনে মহা মিছিল শুভেন্দুর, দেখুন সরাসরি
Narendra Modi Live: আদিবাসী গর্ব দিবস পালনে মোদী, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি