নেতাজির জন্মদিনে তাঁর বই ‘দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’ নিয়ে অজানা গল্প

  • কেমন ছিল নেতাজি ও রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক
  • সুভাষচন্দ্র লিখেছেন দীর্ঘ একখানা চিঠি
  • সুভাষ বইয়ের নাম দিলেন ‘দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’
  • তাঁর বই ইংল্যান্ড আমেরিকায় অনেক বিক্রি হবে

কেমন ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্ক? নোবেল প্রাপক রবীন্দ্রনাথ যখন আন্তর্জাতিক খ্যতসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, সুভাষচন্দ্রকে তখনও ব্রিটিশরা চিনলেও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুভাষের তেমন ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়নি।  তবে সুভাষ এটুকু জানতেন যে রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখলে তিনি অন্তত লাইন দুয়েক কথাতেও উত্তর অবশ্যই পাঠাবেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্র লিখেছেন দীর্ঘ একখানা চিঠি; যাতে অনেক ভাবনা চিন্তার কথা আছে, সে চিঠির উত্তর তো আর রবীন্দ্রনাথ দু এক কথায় সারতে পারবেন না। রবীন্দ্রনাথের কাছে সুভাষের চিঠি আলাদা গুরুত্ব পাবে। ঘটনা হল অসুস্থ সুভাষকে ব্রিটিশ সরকার ইউরোপের স্বাস্থ্যনিবাসে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ায় সুভাষ ইউরোপে সেখানকার ডাক্তারদের চিকিৎসায় বেশ ভাল হয়ে উঠেছেন। তবে ডাক্তারদের পরামর্শ সুভাষকে আরও কিছুদিন সেখানে বিশ্রামে থাকতে হবে। কিন্তু শুয়ে শুয়ে বিশ্রাম নেওয়ার পাত্র যে সুভাষ নন তাই তিনি লেখা শুরু করলেন। দু-এক পাতা লিখতে লখতে বেশ কয়েক পাতা লিখে ফেললেন সুভাষ। 

আরও পড়ুন- পায়ে হেঁটে পেরিয়েছিলেন কাঁকরভর্তি হিন্দুকুশ পর্বতমালা, দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন নিজেকে

Latest Videos

লন্ডনে শুয়ে বসে সুভাষচন্দ্র লিখছেন। তার মানে সুভাষ একটা কিছু বলতে চাইছেন। এ খবর হাওয়ায় হাওয়ায় পৌঁছে গেল লন্ডনের দু একজন প্রকাশকের কানে। তাদের মধ্যে এডেলফির জন স্ট্রিট-এর উইশহার্ট অ্যান্ড কোম্পানি অন্যতম একজন। সেই প্রকাশক ঠিক খুঁজে খুঁজে বের করলেন সুভাষের ঠিকানা। ততদিনে সুভাষ পাতার পর পাতা লিখে প্রায় শেষ করে ফেলছেন। প্রকাশক দু-চার পাতা উলটে পালটে অগ্রিম কিছু টাকা দিয়ে বায়না করে ফেললেন সুভাষের বই।  প্রকাশকের কাছ থেকে টাকা পেয়ে সুভাষচন্দ্র নতুন করে উৎসাহ পেলেন। আরও অনেক পাতা লিখে ফেললেন সুভাষ। একদিন সেই লেখা বিরাট এক বইয়ের আকার নিল। সুভাষ বইয়ের নাম দিলেন ‘দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’। সুভাষ তাঁর বইয়ের শুরুর অধ্যায়ের নামকরণ করলেন হিস্টোরিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড, তারপরের অধ্যায়ের নাম দিলেন ল্যামিং ইভেন্টস। নিজের লেখা বই নিয়ে সুভাষের অনেক আশা। তাঁর বই ইংল্যান্ড আমেরিকায় অনেক বিক্রি হবে। তাঁর বিশ্বাস এ বই কদর পাবে শিক্ষিত মহলে। সুভাষের থেকেও বেশি আশা প্রকাশকের। তাই তিনি রয়্যালটির টাকা আগেই সুভাষের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। তখনও বই প্রকাশিত হয়নি অথচ বই-এর ফারসী এবং জার্মান অনুবাদের কথা ভেবে ফেলেছেন কেউ কেউ।

আরও পড়ুন-  নেতাজির জন্মদিনে একের পর এক ট্যুইট মুখ্যমন্ত্রীর, বড়সড় ঘোষণাও করলেন মমতা

বইয়ের সব কাজই প্রায় শেষ। এখন বইটির জন্য চাই একটি সুন্দর ভূমিকা। ইংরেজিতে যাকে বলে ফরোয়ার্ড। কে লিখবেন সেটি। সুভাষ ভেবে ভেবে তাঁর বইয়ের ফরোয়ার্ড-এর ব্যাপারে চিঠি লিখলেন রবীন্দ্রনাথকে। পনেরো দিন পর সুভাষ রবীন্দ্রনাথের উত্তরও পেলেন। খাম খুলে চিঠিটি বের করতে করতে সুভাষ উত্তেজনায় কাঁপছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বলে কথা। কিন্তু চিঠিটি বের করে যখন চোখের সামনে মেলে ধরলেন, তখন তার সব উৎসাহ-উত্ততসাহ-এক মুহুর্তে উবে গেল। টগবগ করে ফুটতে থাকা সুভাষ যেন ঠান্ডা জলাশয়ের মধ্যে পরে গিয়েছেন। সুভাষ রবীন্দ্রনাথকে যে চিঠি লিখেছিলেন তা কেবল লম্বা নয়, সুভাষ রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর বইয়ের ভূমিকা লিখে দেওয়ার জন্য বার্নড শ ও এইচ জি ওয়েলসের সঙ্গে কথা বলতে। রবীন্দ্রনাথ সুভাষের অনুরোধ রাখেন নি। মাত্র দু-এক কথায় রবীন্দ্রনাথ সুভাষকে লিখে জানিয়ে দেন, বার্নড শ-কে তিনি ভালই চেনেন তবে তিনি সুভাষের বইয়ের ভূমিকা লিখে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারবেন না। বরং সুভাষ নিজেই তাঁর বইয়ের পান্ডুলিপির একটি কপি তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেখতে পারে। আর এইচ জি ওয়েলসের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ কোনও উল্লেখ করেন নি। খোলা  চিঠিটা হাতে নিয়ে সুভাষ অনেকক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে বসেছিলেন।

সুভাষ এরপরও রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর বইয়ের ভূমিকা লেখার জন্য রোমা রঁল্যা রম্যার কথা ভেবেছিলেন, তাঁর সঙ্গে সুভাষের ভালই পরিচয় হয়েছে। কিন্তু তাঁর বইয়ের ভূমিকা লেখার জন্য তিনি তাঁকে উপযুক্ত মনে করেন না। রোমা রঁল্যা প্রচন্ড ‘গাঁধীভক্ত’। একেবারে অন্ধ ভক্ত। সুভাষ নিজে গান্ধিজীর অনুসৃত নীতিকে সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করেন না। সুভাষচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে এও লিখেছিলেন যে কারণে তিনি রঁল্যাকে উপযুক্ত মনে করেননি, সেই একই কারণে তিনি রবিন্দ্রনাথকেও উপযুক্ত মনে করেন না। কারণ রবীন্দ্রনাথও গান্ধিজীর অন্ধভক্ত। তাঁর লেখা পড়ে সুভাষের তেমনটাই মনে হয়েছে। সুভাষ তাঁর চিঠিতে লেখেন, বার্নড শ ও এইচ জি ওয়েলসও গান্ধিজী সম্পর্কে উচ্চধারণা পোষন করেন, কিন্তু অন্ধ ভক্ত নন। এরপর সুভাষ ঠিক করেন নিজের বইয়ের ভূমিকা তিনি নিজেই লিখবেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই একের পর এক দুঃসংবাদ- বাবা জানকীনাথ বসু ভিষণ অসুস্থ, সুভাষ দেশে রওনা হলেন। করাচি বিমান বন্দরে খবর পেলেন, তাঁর বাবা চলে গিয়েছেন। এরই মধ্যে ঘটল আরেক দুর্ঘটনা। পুলিশ তার জিনিষপত্র তল্লাশি করে ‘ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’ বইটির টাইপ করা কপি বাজেয়াপ্ত করল। কলকাতায় পৌঁছে সুভাষ জানতে পারলেন, সুভাষের বিরুদ্ধে ব্রিটিশের কঠোর দমননীতির প্রতিবাদে সারা দিয়েছেন সারা বিশ্বের খ্যাতনামা দিকে ব্যক্তিরা, তার মধ্যে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বার্নড শ ও এইচ জি ওয়েলসের মতো মানুষ।

Share this article
click me!

Latest Videos

'উনি চক্রান্তের বড় শিকার' নেতাজির জন্মদিনে এ কী বললেন মমতা? Mamata on Netaji
রাগের মাথায় এ কী করে বসলো স্বামী! দেখলে আঁতকে উঠবেন, চাঞ্চল্য Nadia-এ | North 4 Parganas News Today
সুকান্ত মজুমদারকে বিজেপির নবজাতক আখ্যা কুণালের, পাল্টা দিয়ে যা বললেন সুকান্ত : Sukanta on Kunal
নেতাজির 'মৃত্যুদিন' ঘোষণা রাহুলের, ক্ষোভ উগরে একহাত নিলেন সুকান্ত মজুমদার | Sukanta on Rahul
ED Raid Today: Kolkata-র একাধিক স্থানে ফের ED-র অভিযান! Salt Lake-এ হাজির বিশাল ইডির দল | Kolkata